ভাসিলি ভিরিসচ্যাগিনের আঁকা সেই ছবি। নিজস্ব চিত্র
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈলচিত্র এই মুহূর্তে শহরের অন্যতম আকর্ষণ। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ওই তৈলচিত্রের ছবি ‘আপলোড’ করা তো চলছেই, সেই সঙ্গে রয়েছে সেটির সামনে দাঁড়িয়ে নিজস্বী তোলার তুমুল আগ্রহ। এমনটাই বলছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের তথ্য।
ভিক্টোরিয়ার রয়্যাল গ্যালারি সংস্কার করে ২৫ বছর পরে গত ১২ জানুয়ারি সেটি খুলে দেওয়া হয়েছে সর্বসাধারণের জন্য। অবশ্য শুধু রয়্যাল গ্যালারিই নয়, সংস্কারের পরে আরও তিনটি গ্যালারি সে দিন থেকে খুলে দেওয়া হয়েছিল। এখন রয়্যাল গ্যালারিতেই একটি ক্যানভাসে রাশিয়ার শিল্পী ভাসিলি ভিরিসচ্যাগিনের আঁকা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈলচিত্রটি রাখা রয়েছে। সেটি সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল নব্বইয়ের দশকে। ফলে ২৪ ফুট চওড়া এবং ১৭ ফুট উচ্চতার তৈলচিত্রটি নিয়ে দর্শকদের মধ্যে তুমুল আগ্রহ তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষ।
ইতিহাস বলছে, তৎকালীন প্রিন্স অব ওয়েলসের ১৮৭৬ সালের জয়পুর-সফরকে কেন্দ্র করে ওই ছবি এঁকেছিলেন ভাসিলি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পুরনো শহরের মধ্যে দিয়ে হাতি, ঘোড়া ও রাজার পারিষদেরা দলবদ্ধ ভাবে যাচ্ছেন। প্রথম হাতির উপরে প্রিন্স অব ওয়েলস এবং জয়পুরের মহারাজা আসীন। পিছনের হাতিতে রয়েছেন ব্রিটিশ কূটনৈতিক দূত, স্যর আলফ্রেড লায়ল। আর রয়েছেন শহরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা। পুরনো শহরের আবহকে তেলরঙের মাধ্যমে নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সেখানে।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ওই তৈলচিত্রের ইতিহাসগত দিক ছাড়াও বিশাল আকার বিস্মিত করছে দর্শকদের। যাঁরা বহু আগে ওই ছবি দেখেছেন, তাঁরা আবার সেই স্মৃতির হাত ধরেই ফিরে এসেছেন তৈলচিত্রটি দেখতে। এত দিন পরে ছবিটি অবিকৃত দেখতে পেয়ে বিস্মিত হয়েছেন অনেক প্রবীণ। আবার নতুন প্রজন্ম, যাঁদের কাছে ওই ছবিটি একদম নতুন, তাঁদের মধ্যেও বিস্ময় তৈরি করেছে ওই তৈলচিত্র। অর্থাৎ, শহরের দুই প্রজন্মকে স্মৃতি ও বিস্ময়ের সূত্রে বেঁধে দিয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈলচিত্রটি। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কিউরেটর-সেক্রেটারি জয়ন্ত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘তৈলচিত্রটির সামনে অনেক ভিড় হচ্ছে। অনেকেই সেটির সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছেন। আর সেই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা তো রয়েছেই।’’
অবশ্য শুধু তৈলচিত্রটিই নয়, যে চারটি নতুন গ্যালারি ১২ জানুয়ারি খুলে দেওয়া হয়েছিল সর্বসাধারণের জন্য, সেগুলির মধ্যে রয়্যাল গ্যালারি-সহ পোর্ট্রেট গ্যালারি হল ভিক্টোরিয়ার বৃহত্তম গ্যালারি। গ্যালারির মেঝে থেকে ছাদের উচ্চতা প্রায় ৪০ ফুট। তার উপরে সেগুলির নিজস্ব গম্বুজও রয়েছে। ফলে গ্যালারির অভ্যন্তরীণ স্থাপত্যের আভিজাত্যও সম্পূর্ণ ভাবে ফুটে উঠেছে সংস্কারের পরে। জয়ন্তবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের সংগ্রহে থাকা সমস্ত চিত্র-সামগ্রী ও সেই সঙ্গে মেমোরিয়ালের অভ্যন্তরের স্থাপত্য মিলিয়ে একটা আলাদা আবহ তৈরি হয়েছে। এটি শহরবাসীর কাছে নতুন অভিজ্ঞতা।’’