ঝুঁকিপূর্ণ: কোনও রকম সুরক্ষা ছাড়াই উঁচু কাঠামোয় উঠে চলছে হোর্ডিং কাটার কাজ। বুধবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
বাগুইআটির সাহাপাড়ায় নির্মীয়মাণ বহুতল থেকে পড়ে যাওয়া শ্রমিকের হাত বাদই দিতে হল। মঙ্গলবার তাঁর ছিন্ন হয়ে যাওয়া হাত রাতে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জোড়া দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও সফল হয়নি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, কাটা হাতটি প্যাকেটে করে আনা হলেও, সেটি কাদায় মাখামাখি ছিল। এ ছাড়াও নানা সমস্যায় জোড়া যায়নি। যদিও ওই নির্মাণ সংস্থার তরফে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, নুর হুসেন নামে ওই শ্রমিক সুস্থ হলে তাঁকে ম্যানেজারের কাজেলাগানো হবে।
সাহাপাড়ার ওই নির্মাণস্থলে দু’টি ছ’তলা টাওয়ার তৈরি হচ্ছে। মঙ্গলবার পিছনের টাওয়ারের চারতলায় কাজ করার সময়ে নুর-সহ তিন জন নীচে পড়ে যান। স্থানীয় সূত্রের খবর, নুরের হাতে লোহার বালতি ছিল। তিনি এমন ভাবে নীচে পড়ে যান যে, ওই বালতিতে লেগেই তাঁর হাত শরীর থেকে ছিন্ন হয়ে যায়।আর জি করের সার্জিক্যাল ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (সিকু) এখন ভর্তি নুর। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ট্রমা বিভাগে অস্ত্রোপচার করে নুরের হাত বাদ দেওয়া হয়। জ্ঞান ফিরলেও তিনি আচ্ছন্ন অবস্থায় রয়েছেন। জখম শ্রমিকেরা জানিয়েছিলেন, তাঁরা নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যবহার করেছিলেন। তা সত্ত্বেও তাঁরা কী ভাবে পড়ে গেলেেন, তা কেউই মনে করতে পারেননি।
এর পরেও অবশ্য বিধাননগর পুর এলাকার একাধিক জায়গায় নির্মাণস্থলে বা উঁচুতে উঠে সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গিয়েছে। অনেকেরই মতে, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে সরকারি এবং বেসরকারি, দুই মহলেই। বাসিন্দারা মনে করেন, বড় নির্মাণ সংস্থা শ্রমিকদের স্বার্থে কিছু নিরাপত্তার সামগ্রী মজুত রাখলেও, ছোট প্রোমোটারেরা সে সব রাখেন না।
বিধাননগরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাতিয়াড়া এলাকায় এ দিন দুপুরেই দেখা গেল, একটি নির্মীয়মাণ পাঁচতলা আবাসনে বিপজ্জনক ভাবে বাঁশের ভারায় দাঁড়িয়ে প্লাস্টার করছেন শ্রমিকেরা। তাঁদের না আছে নিরাপত্তা বেষ্টনী, না পরা আছে হেলমেট। আবাসনটির গায়ে সুরক্ষা-জালও বাঁধা নেই। নির্মাণ সংস্থার মালিক বুবাই সিংহের অবশ্য দাবি, শ্রমিকদের নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে। তাঁরা কেন তা পরেননি, তা তিনি জানেন না বলে দাবি বুবাইয়ের। এমনকি আবাসনের গায়ে জাল লাগানোর দাবিও করেন তিনি। বাস্তবে অবশ্য জাল দেখা যায়নি।
শুধু এমন বেসরকারি ক্ষেত্র নয়, সরকারি স্তরেও রয়েছে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গা-ছাড়া ভাব। সপ্তাহ দুয়েক আগে বাগুইআটি মোড়ে হোর্ডিং বসানোর একটি দৈত্যাকৃতি লোহার খাঁচা হেলে পড়ে। বিধাননগর পুরসভার তরফে দুর্ঘটনা এড়াতে সেই কাঠামো কাটার কাজ এখনও চলছে। সেখানেও দেখা গেল, নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াই লোহা কাটছেন শ্রমিকেরা।
বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানান, এ দিন পুর আধিকারিকেরা ওই নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। স্থানীয় ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে, যাতে কাজ শুরু না হয়। পুলিশকেও জানানো হয়েছে। অন্য দিকে, লোহার ওই হোর্ডিং কাটার কাজে কেন শ্রমিকেরা নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যবহার করছেন না, তা দেখা হবে বলে কৃষ্ণা জানান।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।