প্রতীকী চিত্র।
করোনা ঠেকাতে যে কড়াকড়ি চলছে, তাতে কাজ বন্ধ বহু জায়গায়। ঘটনাচক্রে, এই সময়ের মধ্যেই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল-সহ বিভিন্ন জেলায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে ১৬টি জুটমিল। শ্রমিকেরা অর্থাভাব এবং অনাহারের সম্মুখীন, এই অভিযোগ করে মঙ্গলবার জগদ্দলে ঘোষপাড়া রোড অবরোধ করলেন জগদ্দল জুটমিলের শ্রমিকেরা। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে মিল চালু করতে হবে।
সংক্রমণ এড়াতে জুটমিলগুলিতে প্রতি শিফটে ৩০ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে কাজ করা যাবে বলে ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। সম্প্রতি তা বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে মিলগুলির কর্তৃপক্ষের দাবি, কাঁচা পাটের অভাবের জন্যই মিল চালু করা যাচ্ছে না।
গত ১৬ মে কর্মক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ জারি হওয়ার পরপরই বন্ধ হয়েছিল জগদ্দল জুটমিল। এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ ঘোষপাড়া রোডে অবরোধ শুরু করেন শ্রমিকেরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা চলে অবরোধ। শ্রমিকেরা দাবি করেন, প্রশাসন হস্তক্ষেপ না করলে তাঁরা উঠবেন না। খবর পেয়ে পৌঁছয় ভাটপাড়া ও জগদ্দল থানার পুলিশ। আধিকারিকেরা মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন, এই আশ্বাস পেয়ে অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকেরা। তাঁরা জানান, প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিকের ঘরে হাঁড়ি চড়ছে না। সিপিএমের চটকল শ্রমিকদের সংগঠন বেঙ্গল চটকল মজদুর ইউনিয়নের নেত্রী বাবলি দে-র অভিযোগ, ‘‘এই পদক্ষেপ করা ছাড়া উপায় ছিল না। কাঁচা পাটের অভাব এবং বর্তমান সময়ে কাঁচা পাট আনার অনুমতি পাচ্ছেন না বলে নোটিস ঝুলিয়েছেন মিল কর্তৃপক্ষ। তা হলে তৈরি করা জিনিস কী ভাবে বিক্রির জন্য বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? ’’
এর আগে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন এআইটিটিইউসি-র তরফে দোলা সেন জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার পাটচাষিদের উৎপাদনের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য না দেওয়ায় তাঁরা পাট চাষ করছেন না। তাই কাঁচা পাটের অভাব হচ্ছে।
এ দিন কারখানা থেকে কোনও লরি বেরোতে দেওয়া হবে না বলেও জেদ ধরেন শ্রমিকেরা। তাঁরা জানান, গত বছর লকডাউনে বেতন মেলেনি। আজ, বুধবার থেকেই মিল খোলার দাবিতে অনড় থাকেন তাঁরা।
যদিও মালিকেরা এখনও মিল বন্ধের পিছনে কাঁচা পাটের অভাবকেই দায়ী করছেন। তাঁরা জানান, নতুন পাট না উঠলে মিল চালুর ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। জুটমিলগুলির সংগঠন ইন্ডিয়ান জুটমিল অ্যাসোসিয়েশন (ইজমা)-এর চেয়ারম্যান রাঘবেন্দ্র গুপ্ত বলেন, ‘‘আমপানে পাটের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। এখন সেই অভাব প্রভাব ফেলছে। মালিকেরা মিল বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে আশা করা যায়, জুলাই থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’
এআইইউটিইউসি-র শ্রমিক সংগঠন বেঙ্গল জুটমিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমল সেন বলেন, ‘‘আমপানের কারণে হয়তো কাঁচা পাটের অভাব রয়েছে। কিন্তু এটাও ঠিক, বড় পুঁজির মালিকেরা পাট মজুত করে কৃত্রিম অভাব তৈরির চেষ্টা করছেন। জুট কমিশনারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।’’