দাউদাউ: জ্বলছে সেই বাড়ির দোতলা। শনিবার, পর্ণশ্রীতে। নিজস্ব চিত্র
দোতলায় দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। সঙ্গে প্রবল ধোঁয়া। নীচ থেকে উপরে ওঠার চেষ্টা করছেন আত্মীয়স্বজন ও পড়শিরা। কিন্তু ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে আসায় কেউই শেষমেশ উঠতে পারেননি। পরে দমকল এসে আগুন নিভিয়ে ভিতর থেকে উদ্ধার করল অগ্নিদগ্ধ দুই মহিলাকে। বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা দু’জনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন। শনিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে পর্ণশ্রী থানা এলাকার দ্বিজেন মুখার্জি রোডে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম সোমা মিত্র (৬৮) ও কাকলি মিত্র (৪২)। তাঁরা সম্পর্কে মা-মেয়ে।
পুলিশ ও দমকল সূত্রের খবর, এ দিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ খবর আসে, দ্বিজেন মুখার্জি রোডের একটি বাড়ির দোতলায় আগুন লেগেছে। ভিতরে দুই মহিলা আটকে রয়েছেন। খবর পেয়েই দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। দমকলকর্মীরা জানতে পারেন, সোমাদেবী একেবারেই শয্যাশায়ী। মেয়ে কাকলি হাঁটাচলা করলেও অসুস্থ। দমকলকর্মীরা জল দেওয়ার পাশাপাশি ঘর থেকে দু’জনকে বার করে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু দেড় ঘণ্টা পরে আগুন যখন আয়ত্তে আসে, তত ক্ষণে দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে। ঘরের দরজা ভেঙে দেখা যায়, দুই মহিলারই দেহ পুড়ে একেবারে কুঁকড়ে গিয়েছে।
পুলিশ জানায়, সোমাদেবী ও কাকলি যেখানে থাকতেন, তারই উপরের তলায় থাকেন সোমাদেবীর বোন ছবিরানি ঘোষ (৬৪)। তিনি ওই সময়ে বাড়িতে ছিলেন না। ছবিদেবীর ছেলে হীরক ও বৌমা মৌসুমী নীচের তলায় থাকেন। নীচের তলার প্রবেশপথ আর উপরে ওঠার সিঁড়ির গেট আলাদা। এ দিন ধোঁয়া দেখতে পেয়ে হীরক ও তাঁর স্ত্রী ঘর থেকে বেরিয়ে দেখেন, উপরের তলার ঘর দাউদাউ করে জ্বলছে। হীরক জানান, তিনি চিৎকার করে পড়শিদের ডেকে উপরে ওঠার চেষ্টা করেন। অনেক চেষ্টা করেও আগুনের তাপ আর ধোঁয়ার জেরে উপরে ওঠা সম্ভব হয়নি। তত ক্ষণে পড়শিরাই ফোন করেছেন
দমকল ও পুলিশে।
হীরক জানান, তাঁর মাসি সোমাদেবী ও দিদি কাকলি আগে মহেশতলা এলাকায় ভাড়া থাকতেন। তখন সোমাদেবীর ছেলে বেঁচে ছিলেন। এক বছর আগে রক্তের ক্যানসারে তাঁর মৃত্যু হলে মেয়েকে নিয়ে সোমাদেবী এই বাড়িতে উঠে আসেন। আলিপুর আদালতে চাকরি করেন হীরক। তাঁর মা ছবিদেবীর কিছু সঞ্চয় রয়েছে। সেই টাকাতেই সোমাদেবী ও তাঁর মেয়ের চলত। সামনের ২৫ জুলাই সোমাদেবীর ছেলের বাৎসরিক কাজ। সেই প্রয়োজনেই ছবিদেবী বেরিয়েছিলেন।
প্রশ্ন উঠেছে, সোমাদেবী শয্যাশায়ী থাকলেও কাকলি কেন দরজা খুলে বেরোতে পারলেন না? পড়শিরা ও হীরক জানান, কয়েক দিন ধরে কাকলিরও শরীর ভাল ছিল না। কিন্তু দু’টি বিষয় দেখে পুলিশের অনুমান, ঘটনাটি আত্মহত্যা হলেও হতে পারে। এক, ভিতর থেকে দরজা বন্ধ ছিল। দুই, যে ঘর থেকে দেহ দু’টি উদ্ধার হয়েছে, সেখান থেকে একটি কেরোসিনের বোতলও মিলেছে। কিন্তু তাতে সামান্য তেল ছিল। এ দিন বিকেলে কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারাও ঘটনাস্থলে যান বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। তবে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট আসার পরেই আসল তথ্য জানা যাবে।