এসপ্লানেডের কাছে একটি পেট্রল পাম্পে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
এ পি সি রোডের একটি পাম্পে গাড়িতে পেট্রল ভরাতে গিয়েছিলেন গৌরীবাড়ির অভিজিৎ মর্দন। এক হাজার টাকা দিয়েও হিসেবের চেয়ে অনেকটাই কম তেল পান তিনি। এর পরে গাড়ি থেকে একটি এক লিটারের প্লাস্টিকের বোতল বার করে তাতে তেল দিতে বলে অবাক হয়ে যান তিনি। এ বারেও তেল এক লিটারের চেয়ে কম!
মাপ ঠিক নেই কেন?
পেট্রল পাম্পের কর্মী তর্ক জুড়ে দিয়ে বলেন, “মাপ ঠিকই আছে। পেট্রল হাওয়ায় উড়ছে!” গোলমাল থামাতে এর পরে ঘটনাস্থলে যেতে হয় বড়তলা থানার পুলিশকে।
জ্বালানির দাম আকাশছোঁয়া হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শহরের বিভিন্ন পেট্রল পাম্পের বিরুদ্ধে তেলের মাপে কারচুপির অভিযোগ উঠছে।
রবিবার ইন্ডিয়ান অয়েলের কলকাতায় লিটার পিছু পেট্রলের দাম ছিল ৯১.৭৮ টাকা এবং ডিজ়েল ছিল লিটারে ৮৪.৫৬ টাকা। কবে কলকাতাও পেট্রলের দামে সেঞ্চুরি করবে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বিভিন্ন পেট্রল পাম্পের তেল দেওয়ার যন্ত্রের করসাজি।
অভিযোগ, কোথাও কারচুপি করে লিটারে প্রায় ০.৩৫ মিলিলিটার তেল কম দেওয়া হচ্ছে। কোথাও আবার কম দেওয়ার মাত্রা লিটারে ০.৫০ মিলিলিটার ছাড়িয়ে গিয়েছে। সব চেয়ে বেশি কারচুপি হচ্ছে লিটারের বদলে নির্দিষ্ট টাকার অঙ্ক বলে তেল কেনার সময়ে।
আলিপুরের একটি পাম্পের কর্মী নিজেই বলেন, “কেউ যদি এসে এক হাজার টাকার তেল কিনতে চান, রবিবারের ৯১.৭৮ টাকা দামের হিসাবে তাঁর ১০.৮৯৫৬১৯৯৬০৮ লিটার তেল পাওয়ার কথা। কিন্তু প্রতি লিটার থেকে ০.৪৫ বা ০.৫০ মিলিলিটার হারে তেল কমিয়ে তাঁকে তেল দেওয়া হবে। কিন্তু ওই ব্যক্তিই যদি ১০ লিটার বা ১২ লিটার হিসেবে তেল চান, তা হলে কারচুপি করা মুশকিল। সেখানেও অবশ্য বাড়তি দাম ধরে নেওয়ার জায়গা থাকে। কাজের সময় শেষ হয়ে গেলে এ ভাবে কারচুপি করা তেলে যে লাভ হয় সেই হিসেবও খাতায় লিখে দিয়ে যান টাকার ব্যাগ কাঁধে রাখা ব্যক্তি।” মানিকতলার ছায়া সিনেমা হলের কাছে একটি পেট্রল পাম্পের এক কর্মী আবার বলেন, “আসলে এত ক্ষুদ্র টাকার হিসেব নিয়ে বেশির ভাগ ক্রেতাই মাথা ঘামান না। কিন্তু দেখতে গেলে গাড়ির ট্যাঙ্ক ভর্তি করে দিলে প্রতি গাড়িতে ৬০-৭০ টাকা কারচুপি লাভ থাকে। এই লাভের ভাগ কর্মীরা তো নেনই, মালিকও ছাড়েন না।”
যাদবপুরের একটি পেট্রল পাম্প সূত্রে আবার খবর, এই কারচুপি করা তেলই দিনের শেষে বিক্রি হয় কালোবাজারে। যেখানে ৯০ টাকা লিটারের তেল পাওয়া যায় ৭০ বা ৮০ টাকাতেও। কসবা থানায় এমনই একটি তেল-চক্রের ফাঁদে পড়ার অভিযোগকারী সুবিমল কর্মকারের দাবি, কয়েক বছর আগে কলকাতা হাইকোর্টেও এমন ‘কাটার তেল’-এর রমরমা বাজারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। তার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। বহু গাড়িচালকই ময়দান এলাকায় কাটা তেল বিক্রির ব্যবসা চালান। পেট্রল পাম্পের সূত্রেই এমন তেল বিক্রি হয় বিভিন্ন গ্যারাজেও। কোনও পেট্রল পাম্প দিনে ১০ হাজার লিটার তেল বিক্রি হয়েছে দেখাতে পারে। কিন্তু তার থেকেই হয়তো হাজার লিটার তেল বাঁচিয়ে বিক্রি করে গ্যারাজে।
সুবিমলের কথায়, “আমিও এমন কাটার তেলের ফাঁদে পড়েছিলাম। গাড়ি সারাতে দিয়ে দেখি, ১৮ লিটার তেল উধাও! প্রশ্ন করায় বলা হয়েছিল, সারানোর সময়ে না কি লিক হয়ে তেল পড়ে গিয়েছে!”
ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্রসেনজিৎ সেন যদিও বলেন, “আগে সত্যিই এমন অভিযোগ ভূরি ভূরি আসত। কিন্তু এখন আমরা তেমন কাজ করতেই দিচ্ছি না। জ্বালানির দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে বলেই এখন এত বেশি সচেতন হয়েছেন গ্রাহকেরা। তাই এ সব নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে।” সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, “পেট্রল সত্যিই বাষ্প হয়ে যায়। তাই ০.২৫ মিলিলিটার কম দেওয়া হয়।” অভিযোগ তো উঠছে ০.২৫ মিলিলিটারের থেকেও বেশি কারচুপি করার! তা ছাড়া বাষ্প হওয়ার সঙ্গে গ্রাহককে কম দেওয়ার সম্পর্ক কোথায়? স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি অ্যাসোসিয়েশনের কারও কাছেই।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক আধিকারিক বলেন, “বেশ কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শহরের পেট্রল পাম্পগুলি দ্রুত ঘুরে দেখার পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই করা