গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
সল্টলেক সেক্টর-ফাইভে রমরমিয়ে চলছিল ভুয়ো কল সেন্টার। সেখান থেকে একটি আন্তর্জাতিক সফটঅয়্যার কোম্পানির প্রযুক্তিগত সহায়তা কেন্দ্রের কর্মীর পরিচয় দিয়ে ফোন করা হত আমেরিকা, কানাডা অস্ট্রেলিয়া সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের।
প্রযুক্তিগত সহায়তা করার নামে তাঁদের পাঠানো হত ভাইরাস এবং ম্যালওয়্যারে ভরা সফটঅয়্যার। আর সেই সফটঅয়্যার ব্যবহার করে বিপাকে পড়তেন গ্রাহকরা। তারপর তাদের বাধ্য করা হত মোটা অঙ্কের টাকা দিতে। তারপরই মুক্তি মিলত ওই ম্যালওয়্যার থেকে। এ ধরনের প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছিল ওই ভুয়ো কল সেন্টার। ডিআইজি সিআইডি মিতেশ জৈন বুধবার বলেন,‘‘ আমরা ওই সফ্টওয়্যার কোম্পানির থেকে প্রথম অভিযোগ পাই। তদন্ত করতে শুরু করে আমাদের সাইবার অপরাধ দমন শাখা। মঙ্গলবার রাতে আমাদের পাঁচটি দল হানা দেয়। ”
মঙ্গলবার রাতভর অভিযানে সল্টলেক সেক্টর-ফাইভের এ রকম পাঁচটি কলসেন্টারের পর্দাফাঁস করেন রাজ্য সিআইডি-র আধিকারিকরা। আটক করা হয়েছে ছ’জন তরুণী-সহ ১৫ জনকে। সিআইডি সূত্রে খবর, ভিন রাজ্যের বাসিন্দারাও রয়েছেন আটকদের দলে। পরে সকালে গ্রেফতার করা হয় ৭ জনকে। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘ আমরা সফ্টওয়্যার সংস্থার যে অভিযোগ পেয়েছি সেখানে দেখা যাচ্ছে গ্রাহকরা একটি পপ আপ মেসেজ পেতেন নিজেদের কম্পিউটারে। সেই মেসেজে ওই আন্তর্জাতিক সফ্টওয়্যাক কোম্পানির নাম লেখা থাকত। ফলে সহজেই মানুষ বিশ্বাস করে ওই মেসেজে ক্লিক করত। ক্লিক করার সঙ্গে সঙ্গে কাজ করা শুরু করত ওই ভাইরাসে ঠাসা ম্যালওয়্যার। ওই ভাইরাসের সাহায্যে গ্রাহকের কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ চলে যেত জালিয়াতদের হাতে।” এর পরই ওই কলসেন্টার গুলি থেকে ফোন করে তোলাবাজির ঢংয়েই মোটা টাকা দাবি করা হত কম্পিউটারটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে।
আরও পড়ুন: গুজরাত দাঙ্গায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ক্লিন চিট, নানাবতী কমিশনের রিপোর্ট পেশ বিধানসভায়
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন সৈয়দ জাফর ইমাম নামে এক ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে ইমামই গোটা চক্রের পান্ডা। তাঁর সঙ্গী বাকি ৬ জনের কি ভূমিকা ছিল তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধৃত সাতজনকেই এ দিন আলিপুর আদালতে পেশ করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির প্রতারণা, জালিয়াতির বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে যোগ করা হয়েছে তথ্য প্রযুক্তি আইনও।
সম্প্রতি এ ধরনেরই একটি প্রতারণা চক্র পাকড়়াও করেছিল কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ। গ্রেফতার করা হয়েছিল চক্রের মূল পাণ্ডা সিদ্ধার্থ বন্ঠিয়াকে। জানা গিয়েছিল, সিদ্ধার্থও ঠিক ওই পথেই ভুয়ো কলসেন্টার খুলে ইংল্যান্ডের প্রায় ২৩ হাজার গ্রাহককে প্রতারণা করেছিলেন। লন্ডন পুলিশ প্রতারকদের হদিশ না পেলেও, ওই আন্তর্জাতিক সফটঅয়্যার কোম্পানির করা অভিযোগের সূত্র ধরে কলকাতা পুলিশ শরৎ বোস রোড এবং তপসিয়ায় চলা ওই কলসেন্টারগুলোর হদিশ পায়। ওই প্রতারণা চক্রের পর্দাফাঁস করার জন্য লন্ডন পুলিশের কমিশনারও ব্যাপক প্রশংসা করেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের সুরে কথা বলছে কিছু দল, সিএবি নিয়ে বিরোধীদের নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী
সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, সিদ্ধার্থের সংস্থা ছাড়াও এ রকম আরও ভুয়ো কলসেন্টার রয়েছে যারা বিদেশের গ্রাহকদের প্রতারণা করছে, এমন খবর তাঁরা পাচ্ছিলেন। সেই সূত্র থেকেই মূলত বিদেশ থেকে আসা টাকার লেনদেন-থেকে ওই কলসেন্টারটি চিহ্নিত করা হয়।