মেট্রোয় মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি —নিজস্ব চিত্র
দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ফের বাড়তে শুরু করেছে। তাই এ বার যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করতে চলেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। মেট্রোয় সফরে মাস্ক পরা আগেই বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু এ বার মুখে মাস্ক না থাকলে অথবা তা ঠিক ভাবে না পরলে সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি কোনও যাত্রীকে যদি দেখা যায় ট্রেনের কামরায় মাস্ক ছাড়া আছেন, তা হলে রেলরক্ষী বাহিনীর নজরদারিতে ধরা পড়লে তাঁকেও জরিমানা করা হতে পারে।
মহারাষ্ট্র, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কেরল, মধ্যপ্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্যে সংক্রমণ ফের বাড়ছে। ওই সব রাজ্যে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞেরা। মহারাষ্ট্রে দূরত্ব-বিধি না মানা এবং মাস্ক ব্যবহারে সাধারণ মানুষের অনীহাকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। বুধবার সংক্রমণ আটকানোর পথ স্থির করতে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন এই নির্দেশিকা জারি হয়েছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
কলকাতা মেট্রোর পক্ষ থেকে এ দিন সন্ধ্যায় জারি করা একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, মেট্রোযাত্রীদের মাস্ক পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে। যাত্রীদের মধ্যে কেউ মাস্ক ব্যবহার না করলে অথবা ঠিক মতো মাস্ক না পরলে তাঁকে জরিমানা বা শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে।
করোনাকালে ছ’মাস বন্ধ থাকার পরে গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ফের মেট্রো পরিষেবা চালু হয়েছে। সেই সময়ে ভিড় এড়াতে ই-পাস ব্যবহার-সহ একাধিক বিষয়ে কড়াকড়ি ছিল। দূরত্ব-বিধি মেনে চলার জন্য সব আসনে যাত্রীদের বসা নিয়েও নিষেধাজ্ঞা ছিল। করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে জানুয়ারি থেকে মেট্রো কর্তৃপক্ষ ই-পাস তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এর কিছু দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়াই যাত্রীদের একটা বড় অংশ দূরত্ব-বিধির তোয়াক্কা না করে ঘেঁষাঘেঁষি করে সব আসনে বসতে শুরু করেন। ফলে কামরায় একটি করে আসন ছেড়ে ছেড়ে বসার যে নিয়ম করা হয়েছিল, তা কার্যত উঠে যায়। সম্প্রতি যাত্রীদের একাংশের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অনীহা চোখে পড়ছে বলে অভিযোগ। ভিড়ের সময়ে মেট্রোয় যে ভাবে বিপুল সংখ্যক যাত্রী যাতায়াত করছেন, তাতে কোভিড-বিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে যে কোনও রকমের শিথিলতা সংক্রমণকে বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। সেই আশঙ্কা থেকেই মেট্রোয় মাস্ক ব্যবহারে ফের কড়াকড়ি শুরু হচ্ছে বলে খবর।
সম্প্রতি মেট্রোয় যাতায়াতের ক্ষেত্রে ফের টোকেন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সংক্রমণের আশঙ্কায় মেট্রোর কর্মী সংগঠন এ নিয়ে তীব্র আপত্তি করে। ফলে সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসেন কর্তৃপক্ষ। তাই আপাতত টোকেন ব্রাত্যই থাকছে। যাত্রীদের সচেতন করতে সব স্টেশনে প্রচারে বিশেষ জোর দেওয়া হবে। মাস্ক পরা, স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার-সহ বিভিন্ন বিষয়ে যাত্রীদের সচেতন করা হবে। এ দিনের নির্দেশ সম্পর্কে মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোভিড-বিধি মানার ক্ষেত্রে যাত্রীদের আরও সজাগ করতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
নতুন নির্দেশিকায় মেট্রোর নিত্যযাত্রীদের অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, যাত্রীদের একাংশের অসতর্কতা সমস্যা তৈরি করছে। আরপিএফ-এর তৎপরতা ওই সব যাত্রীদের বেপরোয়া আচরণে লাগাম টানতে পারলে মেট্রো যাত্রায় সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা কমবে বলে মনে করছেন তাঁরা।