ফাইল চিত্র।
দাউদাউ করে জ্বলছে গোটা বস্তি। আগুনের শিখা বাড়তে বাড়তে এতটাই উপরে উঠেছে যে, উঁচুতে থাকা বিদ্যুতের তার প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে। এর মধ্যেই ফাটছে একের পর এক গ্যাস সিলিন্ডার। রাস্তার যে দিকে এই বস্তি, তার ঠিক উল্টো দিকেই পেট্রল পাম্প। এলাকার লোক প্রমাদ গুনছেন, আগুন পেট্রল পাম্প পর্যন্ত পৌঁছে গেলে কী হবে! কিন্তু বার বার ফোন করে বা এলাকার ছেলেরা মোটরবাইকে দমকল কেন্দ্রে গিয়ে কাকুতি-মিনতি করলেও তখনও পর্যন্ত একটি দমকলের গাড়িও এসে পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ। অগত্যা বাড়ির বালতিতে ধরে রাখা টাইম কলের জল আর বালি নিয়ে শুরু আগুনের সঙ্গে যুদ্ধ!
কয়েক মাস আগেই বাগবাজারের হাজার বস্তির এই ঘটনায় দমকলের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। দমকলের গাড়ি দেরি করে আসায় পথ অবরোধও করেছিলেন স্থানীয়েরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি বিবৃতি দিতে হয় তৎকালীন দমকলমন্ত্রীকে।
যদিও এর পরেও পরিস্থিতির কিছুমাত্র বদল হয়নি বলে অভিযোগ অনেকেরই। গত ২০ দিনে একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দমকলের ভূমিকা দেখে তাঁদের দাবি, বহু ক্ষেত্রেই দমকল সময়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমানো যেত। আতঙ্কের মধ্যে ছোটাছুটি করারও প্রয়োজন পড়ত না।
যেমন, গত ৫ মার্চ ট্যাংরার দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডে একটি বন্ধ রবারের কারখানায় আগুন লাগে। কিন্তু সকাল ৯টা নাগাদ অগ্নিকাণ্ডের খবর জানানো হলেও দমকল প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত ৭টি ইঞ্জিন গেলেও তার আগেই টাইম কলের জল দিয়ে স্থানীয়েরা আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলেছিলেন বলে দাবি তাঁদের।
এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘বার বার ফোন করার পরেও দমকল আসছে না দেখে মাথা কাজ করছিল না। সে সময়ে পাড়ারই এক জন বাড়িতে তুলে রাখা জলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করার কথা বলেন। ঘটনাচক্রে তার কিছু আগেই পাড়ার টাইম কল থেকে ঘরে ঘরে জল তুলে রাখা হয়েছিল। সেই দেড়-দু’হাজার বালতি জল দিয়েই শুরু হয় অগ্নি নির্বাপণের চেষ্টা। সে যাত্রায় বড় বিপদ থেকে উদ্ধার পেলেও দমকল কেন সময়ে আসবে না?’’
একই প্রশ্ন তুলছেন ট্যাংরা থানার মেহের আলি লেনের বাসিন্দারাও। সেখানে গত ১২ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ একটি রেক্সিনের গুদামে আগুন লাগে। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ, আগুন লাগার ঘণ্টাখানেক পরেও দমকলের গাড়ি পৌঁছতে পারেনি। পরে বিধ্বংসী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ১৭টি ইঞ্জিন সেখানে যায়। এমনকি, স্থানীয় খাল থেকে পাম্প করে জল তুলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হয়। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘এক সময়ে মনে হচ্ছিল, সব জ্বলে গেলে তার পরে কি দমকল আসবে?’’ দমকলের তরফে যদিও দাবি, ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পথে রেলব্রিজের নীচ দিয়ে গাড়ি ঢুকতে না পারায় পৌঁছতে কিছুটা দেরি হয়েছিল।
একই ভাবে কিছুটা দেরিতে দমকল পৌঁছনোর অভিযোগ রয়েছে গার্ডেনরিচের একটি তেলের গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাতেও। গত ১০ মার্চের ওই ঘটনায় দমকলের মোট ছ’টি ইঞ্জিন আগুন নেভানোর চেষ্টা চালালেও সকাল সাড়ে ৮টায় লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দুপুর সাড়ে ৩টে পেরিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দমকল দেরিতে আসার কারণেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসতে এতটা সময় নিয়েছে। যদিও দমকলের তরফে দাবি, ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় গুদাম পর্যন্ত পৌঁছতে বেগ পেতে হয়েছে তাদের।
সম্প্রতি রাতে বেহালার সংহতি পার্কের অগ্নিকাণ্ড ঘিরেও এমনই দাবি, পাল্টা দাবি চলেছে। সেখানে একটি প্লাস্টিকের গুদামে আগুন দ্রুত ছড়াচ্ছে দেখেও প্রথমে দমকলের মাত্র দু’টি ইঞ্জিন এসেছিল বলে অভিযোগ। শেষে অবশ্য সাতটি ইঞ্জিন গিয়ে বহুক্ষণের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ক্ষেত্রেও দমকলের দেরিতে পৌঁছনোর অভিযোগ করেছেন স্থানীয়েরা।
যদিও দমকল দফতরের ডিজি রণবীর কুমার বলেন, ‘‘কোথায় কখন আগুন লাগবে, সেটা তো আগে জানা যায় না! আগুন লাগার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পৌঁছনোর চেষ্টা করা হয়।’’ তাঁর আরও দাবি, অগ্নি নির্বাপণের কিছু প্রযুক্তিগত ব্যাপার থাকে। সাধারণ মানুষ সব সময়ে তা বুঝতে পারেন না, তা-ই অভিযোগ করেন।