—ফাইল চিত্র
মধ্য কলকাতার বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট ঘিরে অপরাধের তালিকা যেন ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। গত শুক্রবার ওই তল্লাটেই ফিয়ার্স লেনে ৭৫ বছরের এক বৃদ্ধের গলার নলি কাটা দেহ উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ খুনের তদন্ত শুরু করলেও রবিবার রাত পর্যন্ত কোনও গ্রেফতারির খবর নেই। এর মধ্যেই দিন কয়েক আগের একটি ঘটনা সামনে এল। যেখানে এক ব্যক্তিকে ক্ষুর দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠল। রক্তাক্ত অবস্থায় ওই ব্যক্তি সংজ্ঞা হারালেন কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারের দরজার সামনে। এই ঘটনায় অবশ্য শনিবার গভীর রাতে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
ঘটনাস্থল মুচিপাড়া থানার অন্তর্গত। পুলিশ সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার রাতে লালবাজারের ‘বাহির’ দরজার সামনে এক ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন বলে খবর যায়। লালবাজারেরই কয়েক জন আধিকারিক গিয়ে দেখেন, আহত ব্যক্তি সংজ্ঞা হারিয়েছেন। তাঁর মাথায় এবং পিঠে গভীর ক্ষতের দাগ। দ্রুত তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বৃহস্পতিবার সেখানেই জ্ঞান ফেরে তাঁর।
লালবাবু যাদব নামে বছর পঁয়তাল্লিশের ওই ব্যক্তি পুলিশকে জানান, ঘটনার রাতে প্রায় দু’টো নাগাদ বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট ধরে তিনি কর্মস্থল থেকে মদন দত্ত লেনে বাড়ির দিকে ফিরছিলেন। ঘণ্টেশ্বর মন্দিরের কাছে তাঁর পথ আটকায় মহম্মদ সেলিম নামে এক যুবক। অভিযোগ, সেলিম ধাক্কা মেরে লালবাবুকে রাস্তায় ফেলে দেয়। এর পরে পাশে পড়ে থাকা একটি বাঁশ তুলে তাঁকে পেটাতে শুরু করে। অভিযোগ, মারের চোটে লালবাবু অজ্ঞান হয়ে পড়লে সঙ্গে আনা ক্ষুর বার করে সেলিম তাঁকে একাধিক বার কোপায়। এর পরে লালবাবুর থেকে নগদ ১৮ হাজার টাকা এবং একটি মোবাইল ফোন ছিনতাই করে সে পালায় বলে অভিযোগ। ঘটনার পরে কোনও মতে ছুটে-পালিয়ে লালবাজারের গেট পর্যন্ত পৌঁছে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন লালবাবু।
আরও খবর: টিকা নিয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ৪৪৭ জনের, গুরুতর নয়, বলল কেন্দ্র
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭ (খুনের চেষ্টা), ৩৯৪ (ছিনতাই) ও ৩৯৭ (ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে আঘাত করা) ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, শুরুতে কিছুতেই অভিযুক্ত সেলিমকে চিহ্নিত করা যাচ্ছিল না। এলাকার কয়েকটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে ঘটনার সময়ের একটি ভিডিয়ো পান তদন্তকারীরা। যদিও তা থেকেও অভিযুক্তকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল না। এর পরে স্থানীয় সূত্র মারফত শুরু হয় খোঁজ। সেই সূত্রেই বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের কাছে একটি মোবাইলের দোকানে পাওয়া যায় ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনটি।
আরও খবর: জোট হলে কংগ্রেসের জেতা আসনে প্রার্থী দেবেন না আব্বাস, দাবি সোমেন পুত্রের
জানা গিয়েছে, ফোন বিক্রি করে একটি নতুন ছোট ফোন ও সিম কার্ড কিনেছিল অভিযুক্ত। সেই নম্বরেই ফোন করে ওই মোবাইল ফোনের দোকানের মালিক ডেকে আনেন সেলিমকে। সেখান থেকেই শনিবার রাতে গ্রেফতার করা হয় তাকে। জেরায় সেলিম জানায়, লালবাবুকে সে মঙ্গল নামে চেনে। মঙ্গলের সঙ্গে এক বার মদন দত্ত লেনে তার হাতাহাতি হয়েছিল। সেই রাগ থেকেই গত মঙ্গলবার রাতে ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে সে।
যদিও ফিয়ার্স লেনের খুন এবং কাছেই এই ঘটনায় ওই চত্বরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। লালবাজারের এত কাছে এমন ক্ষুর মারার ঘটনা ঘটলেও তা পুলিশের টহলদারি গাড়ির চোখে পড়ল না কেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে। লালবাজারের এক আধিকারিক যদিও জানিয়েছেন, এই ঘটনার মতো ফিয়ার্স লেনের খুনের ঘটনাতেও অভিযুক্ত দ্রুত গ্রেফতার হবে।