ছবি এএফপি।
প্রতি বর্ষায় জল-যন্ত্রণা থেকে তাঁদের মুক্তি নেই— এটাকেই ভবিতব্য বলে ধরে নিয়েছেন বাসিন্দারা। রাজারহাট-গোপালপুর এলাকার ২৭টি ওয়ার্ডের এমন ছবি বদলাতে ৪০০ কোটি টাকার ভূগর্ভস্থ নিকাশি তৈরির পরিকল্পনা করেছে বিধাননগর পুরসভা। কেএমডিএ-র নির্দেশে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে খসড়া প্রস্তাব। সূত্রের খবর, অনুমোদন পেলে প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে।
রাজারহাট-গোপালপুরের বাসিন্দাদের বড় অংশের অভিযোগ, এলাকার উন্নয়নে সাবেক রাজারহাট-গোপালপুর পুর এলাকা বিধাননগর পুরসভার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে কাজ হলেও জল জমার সমস্যা অনেকাংশে রয়ে গিয়েছে। অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা রক্ষা করতে পারেনি পুরসভা। এ দিকে, নির্বাচিত পুর বোর্ডের মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।
চলতি বছরেই মেয়াদ ফুরোচ্ছে বিধাননগরের পুর বোর্ডের। এর মধ্যে মেয়র পরিবর্তন হয়েছে। যদিও বাসিন্দাদের অভিযোগ মানতে নারাজ পুর কর্তৃপক্ষ। মেয়র পারিষদ দেবাশিস জানা জানান, দায়িত্ব পাওয়ার পরে রাজারহাট-গোপালপুর এলাকার ২৭টি ওয়ার্ডের নিকাশি নিয়ে পর্যালোচনা করে পুরসভা। পুরসভার বক্তব্য, অপরিকল্পিত ভাবে ওই এলাকায় গজিয়ে উঠেছে একের পর এক বহুতল। অথচ নিকাশির পর্যাপ্ত পরিকাঠামো করেনি তৎকালীন রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা। দায়িত্বে আসার পরে সুসংহত ভূগর্ভস্থ নিকাশি ব্যবস্থা তৈরিতে জোর দেয় বর্তমান পুর বোর্ড। কিন্তু এত বড় প্রকল্প তৈরিতে অনেক সময় লাগে। তা মাথায় রেখে আপৎকালীন ভিত্তিতে বিভিন্ন কাজ করা হয়েছে।
পুরসভা জানাচ্ছে, ওই এলাকায় ৪৮টি পাম্প রয়েছে। বর্ষায় আরও ৪০টি পাম্প ভাড়া করে চালানো হয়। এ ছাড়া এক এবং দু’নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগস্থলে একটি পাম্পিং স্টেশন এবং ভূগর্ভস্থ নিকাশির লাইন করা হয়েছে। তাদের দাবি, এর ফলে সমস্যা কিছুটা কমেছে।
এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন-সহ একাধিক দাবি নিয়ে সম্প্রতি পুরসভায় স্মারকলিপি দিয়েছে বাম-কংগ্রেস। নিউ টাউনে বিধাননগর পুরসভার সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি দফতরের সাম্প্রতিক বৈঠকেও উঠে এসেছে এই সমস্যার কথা। মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানান, জল জমার সমস্যা মেটাতে পাম্পিং স্টেশন তৈরি-সহ একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
পুরকর্তাদের একাংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, শুধু প্রকল্প হাতে নিলেই হবে না। খালগুলিতে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা, নিকাশি নালার উপরে দোকান তৈরি-সহ ‘দখলদারির’ মানসিকতা থেকে বাসিন্দাদের বেরিয়ে আসতে হবে। পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৭ সালে নিকাশির পরিকল্পনার নকশা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় এক সংস্থাকে। ২০১৯ সালে সেই কাজ শেষ হয়। বিষয়টি কেএমডিএ-কে জানানো হলে তাদের পরামর্শ মতো কারিগরি ও আর্থিক দিক থেকে প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য পাঠানো হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বর্তমান বোর্ডের মেয়াদ শেষের মুখে বলে বাসিন্দাদের দাবি, কবে এই প্রকল্প রূপায়িত হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এই প্রসঙ্গে মেয়র পারিষদ জানান, প্রকল্পের ব্যয় একা বহন করার ক্ষমতা পুরসভার নেই। রাজ্য সহযোগিতা করলে বা সরকারের অনুমোদন মিললে ঋণ নিয়ে ব্যয় বহন করা যাবে। তিনি বলেন, ‘‘এত বড় প্রকল্প রাতারাতি হয় না। পরপর প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। জনস্বার্থ ও সব পরিষেবা বজায় রেখে কাজ করতে সময় লাগবে।’’