প্রতীকী ছবি।
অন্যান্য বছর শীত পড়তে না পড়তেই শুরু হয়ে যায় নানা ধরনের মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা জলসা। কিন্তু এই করোনা আবহে এ বার মেলা, অনুষ্ঠান, এমনকি স্বাধীনতা সংগ্রামীর জন্মদিবসও পালিত হচ্ছে অনলাইনে।
অনলাইনে আয়োজিত একটি মেলার উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, স্কুলের পঠনপাঠন যদি অনলাইনে হতে পারে, গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাচক্র যদি ওয়েবিনারের মাধ্যমে করা যায়, তা হলে মেলাই বা নয় কেন? কেন হবে না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান? তাঁদের মতে, অনলাইনে অনুষ্ঠান হলে বিষয়টি দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো হয় ঠিকই, কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য-বিধি মেনে কিছু করতে গেলে অনলাইনই সব চেয়ে সুরক্ষিত জায়গা। এর মাধ্যমে সামাজিক দায়িত্ববোধেরও পরিচয় দেওয়া যায় বলে মনে করেন তাঁরা।
প্রতি বছর কলকাতার মোহরকুঞ্জে যে ‘জঙ্গলমহল উৎসব’ অনুষ্ঠিত হত, তা এ বার হল অনলাইনে, ওই উৎসবের ফেসবুক পেজে। মেলায় এসে দর্শকেরা যা যা দেখতেন ও শুনতেন, ফেসবুক পেজেও তা-ই দেখলেন ও শুনলেন তাঁরা। জঙ্গলমহল উৎসবের উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, জঙ্গলমহলের শিল্পীরা এ বার নিজেদের গ্রামে বসেই অনুষ্ঠান করেছেন। সেই অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে উৎসবের ফেসবুক পেজে। এমনকি, ওই মেলায় যা যা বিক্রি হয়, অনলাইনেও সেই সব জিনিসের অর্ডার দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল।
জঙ্গলমহল উৎসবে প্রতি বারই মোহরকুঞ্জে এসে অনুষ্ঠান করেন বোলপুরের রামনগর গ্রামের শিল্পী তুলসী মাঝি। তুলসী এ বারও অনুষ্ঠান করলেন, তবে পুরোটাই অনলাইনে। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে কলকাতায় যাই। অনুষ্ঠান করি। কত লোকের সঙ্গে আলাপ হয়। মেলার মঞ্চে আমাদের নৃত্য পরিবেশিত হয়। এ বার করোনার জন্য সব বাতিল। মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে এ বারও গ্রামের স্কুলের ছেলেমেয়েদের নিয়ে অনলাইন অনুষ্ঠান করলাম। আমাদের একটি অন্যতম বড় পরব হল বাতনা পরব। স্কুলের ছেলেমেয়েরা সেই পরবে নাচল ধামসা-মাদলের সঙ্গে।’’
অনলাইনে গত ৪ থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলল এই মেলা। বীরভূমের তুলসী মাঝিই শুধু নন, পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শিল্পীরা করলেন ঝুমুর গান ও ছৌ নৃত্য। ধামসা-মাদলের যুগলবন্দিও করেছেন তাঁরা। মেলার উদ্যোক্তা অরুণ চক্রবর্তী বললেন, “শিল্পীরা অনলাইনে অনুষ্ঠানের সুযোগ পাওয়ায় খুব খুশি। বহু দর্শক অনলাইনেই ওঁদের নাচ-গান উপভোগ করেছেন।’’
প্রতি বছর শতাব্দীপ্রাচীন তালতলা পাবলিক লাইব্রেরি তাদের প্রতিষ্ঠা দিবসে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে। ওই গ্রন্থাগারের প্রেসিডেন্ট শঙ্কর নাথ বললেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে এ বার লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করা যায়নি। সেই অনুষ্ঠান আমরা অনলাইনে করব বলে ঠিক করেছি। সেই সঙ্গে আমাদের তালতলা পত্রিকারও একটি অনুষ্ঠান হবে অনলাইনে। লাইভ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পরে রেকর্ডিং দেখারও ব্যবস্থা থাকবে।” শঙ্করবাবু জানান, সারা বছর ধরে অনলাইনে নানা ধরনের আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছেন তিনি। ফলে এখন অনলাইনে কোনও অনুষ্ঠান করা আর সমস্যার নয়।
অনলাইন অনুষ্ঠান কলকাতার শিল্পীদের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছে ভিন্ রাজ্যের শিল্পীদেরও। সেই সব অনুষ্ঠানে এটাই সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে মনে করেন করছেন আয়োজকেরা। এমনই একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা, রাঁচীর বাসিন্দা সুবীর লাহিড়ী জানালেন, গত ৩ ডিসেম্বর ক্ষুদিরামের জন্মদিবস তাঁরা পালন করেছিলেন অনলাইনে। সুবীরবাবু বললেন, “ক্ষুদিরামের জন্মদিনে কলকাতা ও রাঁচীর শিল্পীরা মিলেমিশে গেলেন। অনলাইন মাধ্যমে এটাই সব চেয়ে বড় পাওনা। ফেসবুক লাইভে ওই অনুষ্ঠান করেছি। এই শীতে এমন আরও নানা অনুষ্ঠান আমরা করব।”