উপযুক্ত কারণ ছাড়া বাজার বেশি উঠলে তা এক সময় নামে বটে। —প্রতীকী চিত্র।
শেয়ার বাজার ও টাকার অবাধ পতন যেন থামতেই চাইছে না। ২৬ সেপ্টেম্বর নজির (৮৫,৮৩৬) গড়ার পর থেকে নেমে চলেছে সেনসেক্স। গত শুক্রবার ঠেকেছে ৭৭,৩৭৯ অঙ্কে। অর্থাৎ এখনও পর্যন্ত পড়েছে ৮৪৫৭ পয়েন্ট (৯.৮৫%)। অন্য দিকে তলানিতে ঠেকেছে টাকার দাম। শুক্রবার টাকায় ডলার প্রথম ৮৬ পেরিয়েছে। নজির গড়ে হয়েছে ৮৬.০৪ টাকা। ফলে দুশ্চিন্তা বাড়ছে লগ্নিকারীদের, বিশেষত যাঁরা দু’তিন বছরে শেয়ার ও ফান্ডের বাজারে পা রেখেছেন। কারণ, এমন পতন তাঁরা দেখেননি। ৬ জানুয়ারি সেনসেক্সের ১২৫৮ পয়েন্ট নামার জন্য নতুন ভাইরাসকে দায়ী করা হয়েছিল। পরে জানা গেল সেটি করোনার মতো তেমন মারাত্মক নয়। তবে অর্থনীতিকে যে ‘ভাইরাস’ ক্রমশ দুর্বল করে দিচ্ছে, তা-ও কম আশঙ্কার নয়। একে বাগে আনতে সরকার এবং রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে অতি দ্রুত মাঠে নামতে হবে।
পণ্যের দাম বাড়ছে, চাহিদা কমছে, কর্পোরেট সংস্থার আর্থিক ফল খারাপ হচ্ছে, জিডিপি বৃদ্ধির হার শ্লথ, ক্রমশ নীচে নামছে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার। এত সব সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ করাই এখন সরকারের কাছে বিরাট চ্যালেঞ্জ। উপযুক্ত কারণ ছাড়া বাজার বেশি উঠলে তা এক সময় নামে বটে। তবে অনেকটা নামার পরে শেয়ারের দাম কিছুটা স্বভাবিক জায়গায় পৌঁছলে, তা ফের ঘুরেও দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। সে জন্যই দু’একটি সদর্থক ঘটনা চাই, যাকে বাজারের পরিভাষায় ‘ট্রিগার’ বলে। অর্থাৎ প্রায় ১০% পড়ার পরে সূচককে ঊর্ধ্বমুখী করতে একাধিক অর্থনৈতিক ‘ট্রিগার’ চাই। যা দিতে পারে শুধু সরকার এবং রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক।
অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আসন্ন বাজেট বড় ভূমিকা নিতে পারে। তবে শিল্পের পাশাপাশি দেশবাসীর কল্যাণে সরকারকে কিছু বলিষ্ঠ পদক্ষেপ করতে হবে। আর্থিক বৈষম্য কমানোর ব্যবস্থা চাই, যাতে নিচু তলার মানুষের হাতে বেশি টাকা যায়। কর ছাঁটাই করলে মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। ঋণ মকুব কমিয়ে জনকল্যাণে বেশি টাকা ঢালতে হবে। এই সব কিছু পণ্যের চাহিদা বাড়বে। চাঙ্গা হবে শিল্প। কর্মসংস্থান বাড়বে। সংস্থাগুলির আর্থিক ফল ভাল হলে জিডিপি বেশি হারে বাড়বে। ফিরতে শুরু করবে বিদেশি লগ্নিও। তখন মাথা নামাবে ডলার। উঠবে টাকার দাম।
বাজারকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর দ্বিতীয় অস্ত্র রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে। মনে করা হচ্ছে, শিল্পে প্রাণ ফেরাতে ফেব্রুয়ারির ঋণনীতিতে তাদের সুদ কমানো জরুরি। এতে খরচ কমলে শিল্প ফের সুদিন দেখার আশা করতে পারে। ডিসেম্বরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি মাথা নামালে আরবিআই সুদ কমানোর পথে সদর্থক সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা। আজ বেরোবে মূল্যবৃদ্ধির পরিসংখ্যান। ঋণনীতি বৈঠক ৫-৭ ফেব্রুয়ারি।
সংস্থাগুলি অক্টোবর-ডিসেম্বরের ফল প্রকাশ শুরু হয়েছে। টিসিএস ভাল ফল করায় দুর্বল বাজারেও বেশ কিছু তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার শেয়ার দর মাথা তোলে গত শুক্রবার। আরও কিছু বড় সংস্থা উন্নত হিসাবের খাতা সূচককে শক্তি জোগাবে। লগ্নিকারীদের নজর থাকবে আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের আর্থিক নীতির উপরেও, বিশেষত ভারত সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে।
বাজার এতটা কমায় বিপুল পড়েছে বেশির ভাগ শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডের (একুইটি ফান্ড) ন্যাভ। এতে বেশ মুষড়ে পড়েছেন বহু লগ্নিকারী। তবে এমন বাজার অল্প দামে শেয়ার এবং ফান্ডে লগ্নির সুযোগ করে দেয়। লগ্নি করতে হবে প্রতিটি পতনে, তবে একলপ্তে নয়। এসআইপি চালাতে হবে। অতীতে প্রত্যেক বার তলানিতে নেমে ফের মাথা তুলেছে বাজার। কেন্দ্র সঠিক পদক্ষেপ করলে এ বারও তা হবে। এই কথা মাথায় রেখেই এখনও বিপুল লগ্নি ঢুকছে ফান্ড, নতুন ইসুতে।
(মতামত ব্যক্তিগত)