Jadavpur University

দুঃসাহস দমনের চেষ্টা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ব়্যাগিংয়ে অভিযুক্তদের মার্কশিট না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত

যাদবপুরের অ্যান্টি ব়্যাগিং কমিটির সিদ্ধান্ত, র‌্যাগিংয়ে যাঁরা জড়িত, বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের পঠনপাঠন চললেও পরীক্ষার ফলাফলের মার্কশিট তাঁদের দেওয়া হবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:৩৩
Share:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।

প্রায় দেড় বছর আগের র‌্যাগিং-ক্ষত জড়িয়ে আছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। মেন হস্টেলের তেতলা থেকে পড়ে প্রথম বর্ষের নবাগত ছাত্র মৃত্যুর পরে সরাসরি অভিযুক্তদের পুলিশ ধরলেও যাদবপুরের র‌্যাগিং-কাণ্ডের অনেক পুরোধাই বহাল তবিয়তে বিশ্ববিদ্যালয়ে বা হস্টেলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ। নানা ভাবে চেষ্টা করেও সেই ‘দোষীদের’ বিরুদ্ধে ছিটোফোঁটা পদক্ষেপ করতে পারেননি যাদবপুর কর্তৃপক্ষ। উল্টে র‌্যাগিংয়ে জড়িতেরা ‘ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ’ মারফত কাঙ্ক্ষিত চাকরি পেয়ে যাচ্ছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। অবশেষে এই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ করেছেন যাদবপুর কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি যাদবপুরের অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটির বৈঠকে র‌্যাগিংয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কার্যকর করতে নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

যাদবপুরের অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটির সিদ্ধান্ত, র‌্যাগিংয়ে যাঁরা জড়িত, বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের পঠনপাঠন চললেও পরীক্ষার ফলাফলের মার্কশিট তাঁদের দেওয়া হবে না। ফলে যাদবপুর থেকে বেরিয়ে কারও নতুন চাকরিতে যোগদান সহজ না-ও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসে যাদবপুরের অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি। তখনই যাদবপুরে র‌্যাগিংয়ে জড়িতদের মার্কশিট আটকে রাখার কথা ভাবা হয়। ঘটনা হচ্ছে, ২০২৩-এর ১০ অগস্ট যাদবপুরের মেন হস্টেলের তেতলা থেকে পড়ে ছাত্রের মৃত্যুর এক বছর পরে অ্যান্টি র‌্যাগিং স্কোয়াড ও অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে চিহ্নিত ৩২ জন পড়ুয়াকে কারণ দর্শানোর চিঠি (শো-কজ়) পাঠান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই ৩২ জনের মধ্যে ১৪ জনের বিরুদ্ধে পকসো আইনের ধারায় পুলিশের মামলা চলছে। তাঁরা এখন জেলে। আলিপুর কোর্টে মামলার সাক্ষ্য চলছে পুরোদমে। এবং সম্প্রতি একটি মামলায় হাই কোর্ট ওই অভিযুক্তদের জামিন না-দেওয়ার মতই প্রকাশ করেছে। কিন্তু আরও বেশ কয়েক জন পড়ুয়া যাদবপুরের ওই র‌্যাগিংয়ে জড়িত বলে যাদবপুর কর্তৃপক্ষ মনে করলেও তাঁদের শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

শো-কজ়ের চিঠি পাঠানোর পরে ইতিমধ্যে কয়েক জন ছাত্রকে (প্রাক্তন ও বর্তমান) বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে সাময়িক বহিষ্কার বা কয়েকটি সিমেস্টার সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেন যাদবপুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ১৫ জন পড়ুয়া হাই কোর্টে গেলে বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। হাই কোর্ট আপাতত ওই ১৫ জনের বিরুদ্ধে যাদবপুর কর্তৃপক্ষের শাস্তিমূলক পদক্ষেপে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। ফলে হস্টেল বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাঙ্গনে তাঁরা বহাল তবিয়তেই ঘুরছেন, ক্লাস করছেন বা পরীক্ষা দিচ্ছেন। সম্প্রতি র‌্যাগিংয়ের অন্যতম অভিযুক্ত, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্র ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ মারফত চাকরি পেয়েছেন বলেও দাবি। যাদবপুরের অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটির সাম্প্রতিক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা উঠে আসে। তখনই সিদ্ধান্ত হয়, কোর্টের নির্দেশ মেনে অভিযুক্ত ছাত্রদের যাদবপুরে ক্লাস করা বা হস্টেলে থাকতে দেওয়া হলেও কোর্টের নির্দেশ ছাড়া কাউকে পরীক্ষার মার্কশিট দেওয়া হবে না।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশের আশা, এই বিষয়টি কার্যকর করা গেলে বেপরোয়া ছাত্র মহলে হয়তো একটা বার্তা যাবে। র‌্যাগিংয়ের দুঃসাহস একটু হলেও ধাক্কা খাবে।

মেন হস্টেলে ২০২৩-এর অগস্টের ঘটনাটির পরেও অবশ্য যাদবপুরে হস্টেলে বা অন্যত্র বিক্ষিপ্ত র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। সেই প্রেক্ষিতেও অ্যান্টি র‌্যাগিং স্কোয়াডের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত সদর্থক বলে মনে করা হচ্ছে। আজ, সোমবার আলিপুর কোর্টে পকসো বিশেষ আদালতে ২০২৩-এর অগস্টের র‌্যাগিংয়ে মৃত্যুর মামলার শুনানি হওয়ার কথা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement