অভিনব: হেলমেটহীন বাইকচালককে জরিমানা করার পরে তাঁকে দিয়েই নিজস্বী তোলাচ্ছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার, পার্ক সার্কাসে। ছবি: সুমন বল্লভ ফাইল চিত্র।
বেপরোয়া যানবাহন নিয়ন্ত্রণে জরিমানার অঙ্ক বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছিল পরিবহণ দফতর। বুধবার প্রজাতন্ত্র দিবসেই যা বলবৎ করতে শুরু করেছে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ। প্রথম দিনেই বিধি-ভঙ্গকারী গাড়ির বিরুদ্ধে জরিমানা ধার্য করা হয়েছে প্রায় ১৪ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা! জরিমানার আগের হার বজায় থাকলে যা আদায় হত, তার তুলনায় প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা বেশি! কলকাতা পুলিশ সূত্রেই এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে। যা নিয়ে এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘ধার্য হওয়া জরিমানার সবটা বিধি-ভঙ্গকারীরা মিটিয়ে দিলে সরকারের এক দিনে বাড়তি আয় হবে প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা। যা জরিমানার আগের হারের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি!’’
পুলিশ সূত্রের খবর, প্রজাতন্ত্র দিবসে বিধি-ভঙ্গকারী গাড়ির বিরুদ্ধে মোট মামলা হয়েছে ১৯১৫টি। যার মধ্যে ট্র্যাফিক সিগন্যাল ভাঙায় মামলার সংখ্যা ৩৭৬। আগে প্রথম বার কেউ এই অপরাধ করলে ১০০ টাকা জরিমানা করা হত। কিন্তু এখন সেটাই হয়েছে ৫০০ টাকা। ফলস্বরূপ আগে যেখানে ৩৭৬টি ক্ষেত্রে ১০০ টাকা করে জরিমানা করে সরকারের আয় হত ৩৭৬০০ টাকা, এখনও সেখানে আয় হচ্ছে প্রায় এক লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা। একই ভাবে বেআইনি পার্কিংয়ের জন্য আগের ১০০ টাকা জরিমানা বেড়ে হয়েছে ৫০০ টাকা। প্রজাতন্ত্র দিবসে বেআইনি পার্কিংয়ের অভিযোগে পুলিশ ৯১৫টি মামলা করেছে। এ ক্ষেত্রে জরিমানা থেকে সরকারের আয় হওয়ার কথা প্রায় চার লক্ষ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা। আগের তুলনায় যা প্রায় তিন লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা বেশি।
ট্র্যাফিক পুলিশ হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালানো-সহ বেশ কিছু অভিযোগে ১২৮ ও ১২৯ নম্বর ধারায় মামলা করতে পারে। আগে ১০০ টাকা থাকলেও এখন ওই খাতে জরিমানা বেড়ে হয়েছে এক হাজার টাকা। এই দু’টি ধারায় মামলা হয়েছে যথাক্রমে ১৩২ এবং ২৭৭টি। ফলে জরিমানা ধার্য হয়েছে যথাক্রমে এক লক্ষ ১৮ হাজার ৮০০ টাকা এবং দু’লক্ষ ৪৯ হাজার ৩০০ টাকা। গতি-সীমা লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে আগের ৩০০ টাকা জরিমানা এখন বেড়ে এক হাজার টাকা হয়েছে। এই ধারায় মামলা হয়েছে ১০৭টি। যা থেকে সরকারের বাড়তি আয় হতে পারে প্রায় ৭৪ হাজার ৯০০ টাকা। একই ভাবে ‘থার্ড পার্টি’ বিমা করা নেই, এমন গাড়ির ক্ষেত্রে জরিমানা ৪০০ থেকে বাড়িয়ে দু’হাজার টাকা করা হয়েছে। বুধবার রাতে ১৩টি মামলা হওয়ায় এ ক্ষেত্রে আয় বৃদ্ধি হতে পারে প্রায় ২০ হাজার টাকা। তবে সরকারের সব চেয়ে বেশি আয় হতে পারে বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানোর জরিমানা থেকে। ওই অপরাধে আগে জরিমানা ছিল এক হাজার টাকা। এখন পাঁচ হাজার। পুলিশ সূত্রের খবর, এই ধারায় বুধবার রাতে মামলা হয়েছে ৪৫টি। হাজার টাকা করে হলে আগে যেখানে ৪৫ হাজার টাকা আয় হত, এখন পাঁচ হাজার টাকার হিসাবে আয় হতে পারে প্রায় দু’লক্ষ ২৫ হাজার টাকা।
তবে ‘নো এন্ট্রি জ়োন’-এ ঢুকে পড়া বা রেজিস্ট্রেশনের বিধি-ভঙ্গকারী গাড়ির ক্ষেত্রে আগের মতোই দুই এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা রয়েছে। এই দু’ধরনের ঘটনায় বুধবার মামলা হয়েছে ১১টি এবং দু’টি। পুলিশকর্মীদের দাবি, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে জরিমানার অঙ্ক যে হেতু আদালতে ঠিক হয়, তাই ওই খাতে আয়ের অঙ্ক এখনই পাওয়া সম্ভব নয়। এই ধরনের বিধি-ভঙ্গের ক্ষেত্রে মামলা রুজু হয়েছে ৩৭টি।
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘যে কোনও জরিমানাকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যাওয়ার সুযোগ থাকে বিধি-ভঙ্গকারীর কাছে। সেখানে মামলা লড়ে জিতলে ঠিক আছে, নইলে জরিমানা তাঁকে মেটাতেই হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একাধিক মামলা হওয়ার পরেও জরিমানা না মিটিয়েই গাড়ি বা মোটরবাইক নিয়ে ঘুরছেন বিধি-ভঙ্গকারী। পরে লোক আদালত করে কিছু ছাড় দিয়ে টাকা মেটানোর সুযোগ দেওয়া হয়। ফলে যে পরিমাণ আয় সরকারের হতে পারত, অনেক ক্ষেত্রেই তা হয় না।’’
লালবাজারের কর্তারা জানাচ্ছেন, জরিমানা বাড়ানোর পাশাপাশি বকেয়া জরিমানা মেটানোর উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে।