Madan Mitra On SSKM

বৃত্ত পূর্ণ করে দল আমায় মালা পরিয়ে দিল, নতুন জন্ম হল, তৃণমূলকে বাণ ছুড়ে ‘ধন্যবাদ’ মদনের

তৃণমূল জমানায় তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এসএসকেএম হাসপাতাল। আর তা শুনে অভিমান চেপে মদন দলকে ধন্যবাদ জানালেন। টেনে আনলেন কয়লা, গরু পাচার থেকে কাটমানি প্রসঙ্গ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৩ ১৭:১৫
Share:

কড়া ভাষায় আক্রমণ। ফাইল চিত্র।

কংগ্রেস জমানায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সিপিএম জমানাতেও হয়েছে। এ বার তৃণমূল আমলেও। আর তা নিয়ে তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের দাবি, দল তাঁর জীবনে মামলার বৃত্ত পূর্ণ করে দিল। কটাক্ষের সুরে দলকে ‘ধন্যবাদ’ জানালেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসাই করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী।

Advertisement

বিতর্কের শুরু শুক্রবার রাতে। এসএসকেএম হাসপাতালে এক রোগীকে ভর্তি করানো নিয়ে শুরু হয় বিবাদ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিবাদের পরে নবান্ন মদনের পাশে থাকেনি। মদনও দল ছাড়ার হুঙ্কার দেন। পরে তাঁকে বুঝিয়ে শান্তও করে তৃণমূল। শনিবার সারা দিন ধরেই এসএসকেএমের ঘটনা নিয়ে টানাপড়েন চলেছে। এর মধ্যে তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মদনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৯ এবং ৫০৬ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। আর তা নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে দলের এমন নেতাদের আক্রমণ করলেন মদন। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘আমি কাটমানি তোলার জন্য, আবাস যোজনার টাকা তোলার জন্য কেস খাইনি। এক স্বাস্থ্যকর্মীকে হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করায় মামলা খেয়েছি।’’ এর সঙ্গেই মদনের সংযোজন, ‘‘কংগ্রেস আমলে আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সিপিএম আমলেও হয়েছে, বিজেপিও করেছে। এ বার নিজের দল, নিজের সরকার মামলা করল। আমার জীবনে মামলার বৃত্ত পূর্ণ হল। আমার কোনও আক্ষেপ নেই। বিজেপির পয়সা খেয়ে দলের ক্ষতি করিনি। দলকে ধন্যবাদ। আজ আমার নতুন জন্ম হল।’’

শুক্রবার রাতে বাইক দুর্ঘটনায় আহত শুভদীপ পাল নামে এক ব্যক্তিকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি নিতে চাননি বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে মদন গেলেও রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এর পর সেখানে দাঁড়িয়েই মদন বলেছিলেন, দরকার হলে তিনি নিজের ঘড়ি-আংটি বিক্রি করে ওই যুবকের চিকিৎসা করাবেন। হাসপাতালের বিরুদ্ধে দালালরাজের অভিযোগ তুলে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবিও করেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি ওই ব্যক্তিকে ভর্তি করাতে পারেননি।

Advertisement

সে দিন ঠিক কী হয়েছিল জানাতে শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করেন এসএসকেএমের ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, হাসপাতাল চত্বরে কোনও রকম অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীও তাঁদের পাশেই আছেন। উল্টে নাম না করে হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থা করা হয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগও করেন তিনি। একই সঙ্গে জানান, যাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের সকলের ছবি সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে। সেই ফুটেজ দেখে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই মতোই মদনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়।

এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে ‘গুন্ডামি’র অভিযোগ করেছে শুনে মদনও পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করেন শনিবার বিকেলে। তিনি বলেন, এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে রাজ্যের প্রতিটি সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা পেতে বাধ্য। মদনের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থা করা যাবে না! আমি ওঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। যিনি গতকাল (শুক্রবার) আহত হয়েছিলেন, তিনিও স্বাস্থ্যকর্মী। তাঁর পাশে দাঁড়াতেই আমি এসএসকেএমে গিয়েছিলাম। এটা যদি অপরাধ হয়ে থাকে, তা হলে আমায় তাড়িয়ে দিন! চলে যাব। যা বলবেন মেনে নেব।’’ শুক্রবার রাতে এসএসকেএমে দাঁড়িয়ে হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাদের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন মদন। শনিবার দুপুরেও একই দাবি তোলেন তিনি। এর পরে রাতে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে উদ্যোগী হন। মদনের সঙ্গে কথা বলার পরে ভুল বোঝাবুঝি মিটে গিয়েছে বলে দলের পক্ষে জানানো হয়। কিন্তু রবিবার আবার সরব হলেন মদন। রবিবার মদন বলেন, ‘‘কেস খেয়ে আমি একটুও লজ্জিত নই। কেস খাওয়া আমার কপালে আছে। সোনা পাচার, গরু পাচারের জন্য কেস খায়নি। নিজের কোনও লোককে হাসপাতালে ভর্তি করতে গিয়ে কেস খাইনি।’’ এর পরে অভিমানী সুরে বলেন, ‘‘কণ্ঠে আমার কাঁটার মালা, কেসের মালা ফুলের মালা নয়, যাঁরা কেস করেছেন, ভাল করেছেন। এ বার আমি কামারহাটিতে বুক ফুলিয়ে ঢুকব। সোনা পাচার, কয়লা পাচার, গরু পাচারের জন্য কেস খাইনি, কেস খেয়েছি স্বাস্থ্যকর্মীকে ভর্তি করার জন্য। আমার গর্ব, আমি জনগণের জন্য কেস খেয়েছি। আমি তৃণমূল বিধায়ক হয়েও তৃণমূল আমলে কেস খেয়েছি।’’

দল সম্পর্কে এমন কথা বললেও তিনি যে ‘দুঃখিত’ বা ‘অভিমানী’ তা মানতে চাননি মদন। বলেন, ‘‘আমার কোনও দুঃখ, অভিমান নেই। ওই ব্যক্তির জন্য মুখ্যমন্ত্রী যে ব্যবস্থা করেছেন, তা দেখে আমি আপ্লুত। এটাই আমাদের সরকারের মানবিক মুখ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement