সাহেববাগান এলাকায় চলছে বাসিন্দাদের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবার রাতে এক মহিলার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর কোন্দলে ধুন্ধুমার মানিকতলায়। ভাঙচুর করা হল স্থানীয় বিদায়ী কাউন্সিলর বা প্রশাসক বোর্ডের ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরের বাড়ি।
মানিকতলা থানা সূত্রে খবর, রাত সওয়া ১০টা নাগাদ ৪৪ বছরের পুষ্পা বর্মা নামে ১৮ ক্যানাল ইস্ট রোডের এক বাসিন্দা জল তুলতে গিয়ে তড়িদাহত হন। ওই বস্তিটি সাহেব বাগান বলে পরিচিত। বাসিন্দারা পুলিশকে জানিয়েছেন, রাতে পুষ্পা চৌবাচ্চা থেকে লোহার বালতিতে জল তুলছিলেন। সেই সময় তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। স্থানীয় এক ইলেক্ট্রিসিয়ান পুলিশকে জানিয়েছেন, যে চৌবাচ্চার জলই বিদ্যুদায়িত হয়ে গিয়েছিল। ফলে সেই জলে লোহার বালতি নামানো মাত্রই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন ওই মহিলা।
পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। ততক্ষণে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে সিইএসসি-র পক্ষ থেকে সেখানকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তার পর মহিলাকে উদ্ধার করে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আইন মেনে সেই দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন: ট্যাক্সির পিছন খুলতেই সব্জির বস্তার আড়ালে উঁকি দিচ্ছে মানুষের মাথা!
শুক্রবার সকাল থেকে সেই মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। সাহেব বাগানের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতা অমল চক্রবর্তীকে গাফিলতির জন্য দায়ী করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁরা মানিকতলা মেন রোড অবরোধ করেন। তারই মাঝে উত্তেজিত জনতার একটি অংশ হরিশ নিয়োগী রোডে অমল বাবুর বাড়িতে হামলা চালায়। প্রচুর মহিলা ছিলেন ওই দলে। দেখা যায়, অমল বাবুর বাড়ি লক্ষ্য করে ওই জনতা এলোপাথাড়ি ইট-পাথর ছুড়ছেন।
এই চৌবাচ্চা থেকে জল তুলতে গিয়েই তড়িদাহত হন মহিলা। —নিজস্ব চিত্র।
পরিস্থিতি সামাল দিতে কলকাতা পুলিশের বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ অবরোধ তুলতে লাঠি চার্জ করে। যদিও পুলিশের দাবি, বার বার অনুরোধ করার পর অবরোধ না ওঠায় পুলিশ অবরোধকারীদের তাড়া করে।
ততক্ষণে গোটা ঘটনা রাজনৈতিক মোড় নিয়েছে। কারণ অমলবাবুর অভিযোগ, শুক্রবারের গন্ডগোলের নেপথ্যে রয়েছে তৃণমূলেরই একাংশ। অমলবাবুকে ফোন করলে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘ মন্ত্রী সাধন পান্ডের লোকজন বিজেপি-র লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাড়িতে ভাঙচুর করেছে। এলাকায় অশান্তি পাকিয়েছে। আমার বাড়ির সিসিক্যামেরায় ধরা পড়়েছে কারা ভাঙচুর করেছে।” সাহেব বাগানের এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, ‘‘ পুষ্পার বাড়ির সামনেই একটি সিইএসই-র বাতিস্তম্ভ রয়েছে। সেই বাতিস্তম্ভ প্রায়ই বিদ্যুদায়িত হয়ে যায়। এর আগেও বেশ কয়েক বার অমলবাবুকে অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।” অন্য এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, বস্তির বিভিন্ন ঘরে যে বিদ্যুৎ সংযোগ গিয়েছে তা অপরিকল্পিত ভাবে গিয়েছে। কাউন্সিলরকে বার বার বলেও তিনি কোনও ব্যবস্থা করেননি।” কী ভাবে জলের চৌবাচ্চা বিদ্যুদায়িত হল তা নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে সিইএসই-র এক আধিকারিক ইঙ্গিত দেন, ওই এলাকায় বেশ কিছু বেআইনি বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। সেখান থেকেই কোনও ভাবে জলের চৌবাচ্চা এবং সংলগ্ন এলাকা তড়িদায়িত হয়েছে। যদিও স্থানীয় বাসিন্দারা এই অভিযোগ মানতে নারাজ।
আরও পড়ুন: করোনা উপসর্গ? থানার মাধ্যমে বিনামূল্যে উপায় বাতলে দেবেন চিকিৎসক
ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর অমলবাবু এই গাফিলতির অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন,‘‘ এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি তো ইলেকট্রিসিয়ান নই। আর জনপ্রতিনিধি হয়েছি বলে যদি আমার গাফিলতি হয়, তবে স্থানীয় বিধায়ক সাধন পান্ডেও ভোটে জিতে এসেছেন। তিনিও সমান ভাবে দায়ী।” ঘটনার পরেই অমলবাবুর বাড়িতে যান প্রশাসক বোর্ডের বরো কোঅর্ডিনেটর অনিন্দ্য কিশোর রাউত। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,‘‘ যে কোনও মৃত্যু দুঃখজনক। তবে তাই বলে ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরের বাড়ি ভাঙচুর করা হবে? যারা করেছেন তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।” যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয় যে অমলবাবুর অভিযোগ তাঁর দলের লোকই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তার উত্তরে অনিন্দ্যবাবু স্বীকার করেন, ‘‘হামলাকারীরা তাঁর দলেরই লোকজন।” এই অভিযোগ নিয়ে সাধন পান্ডের প্রতিক্রিয়া জানতে তাঁকে একাধিক বার ফোন করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। তাঁকে হোয়াটস অ্যাপ এবং মেসেজ করা হলেও তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত।