(বাঁ দিকে) শান্তনু সেন। কাকলি সেন (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
আরজি কর-কাণ্ডে নিজের মতামত প্রকাশ্যে জানিয়ে দলের মুখপাত্রের পদ হারিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন। এ বার তাঁর স্ত্রী কলকাতা পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর কাকলি সেনকে দলীয় কাউন্সিলরদের নিয়ে তৈরি হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বহিষ্কার করা হল। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, শুক্রবার তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের ‘নির্দেশে’ কাকলিকে ওই হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পরে পরেই মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন শান্তনু-জায়া। উভয়ের মধ্যে কী কথোপকথন হয়েছে, সে বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছুই জানাননি তাঁরা। তবে পুরসভা সূত্রে খবর, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ‘নির্দেশেই’ যে তাঁকে হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে, তা কাকলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রতি বার নির্বাচনের পর নতুন কাউন্সিলরেরা নির্বাচিত হলে তাঁদের নিয়ে একটি হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ তৈরির প্রথা রয়েছে কলকাতা পুরসভায়। যেখানে কলকাতা পুরসভার নানা নির্দেশ, কাজকর্মের তথ্য দেওয়া হয় ধারাবাহিক ভাবে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের পুর নির্বাচনে ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হন কাকলি। তাঁর আগে এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন শান্তনু। ২০১৮ সালে কাউন্সিলর থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করেন। তাই ২০২১ সালের পুর নির্বাচনে তাঁর বদলে প্রার্থী হন স্ত্রী কাকলি। ভোটে জয়ী হলে কলকাতা পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরদের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হন তিনি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তৃণমূলের এক সর্বোচ্চ নেতার ‘নির্দেশেই’ কাকলিকে হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ থেকে সরানো হয়েছে। আরজি কর-কাণ্ডে শান্তনুর বক্তব্যকে প্রকাশ্যেই সমর্থন জানিয়েছিলেন স্ত্রী কাকলি। এমনকি আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের খুনের ঘটনার পর প্রকাশ্যেই রাজ্যের নারী সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন শান্তনু-জায়া। প্রসঙ্গত, শান্তনু কাকলির একমাত্র কন্যা সৌমিলী সেনও আরজি করে ডাক্তারি পড়ছেন। সেই হাসপাতালে মেয়ের সুরক্ষা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তাঁরা। আবার ১৪ অগস্ট রাতে ‘মেয়েদের রাত দখল’ কর্মসূচিতে সিঁথিতে মেয়ে সৌমিলীকে নিয়ে সামিল হন কাকলি। আর তাতেই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের ‘ক্ষোভ’ চরমে ওঠে। তার পরেই কাকলিকে হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ থেকে সরানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কাকলি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছেন, ‘‘আমি এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাই না।’’
ঘটনাচক্রে, আরজি কর-কাণ্ডে নিজের মতামত জানানোর পর দলের মুখপাত্র পদ থেকে সরানো হয় শান্তনুকে। আরজি কর হাসপাতাল পরিচালনা নিয়ে রাজ্য সরকারের নানা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করায় দলের সদর দফতর তৃণমূল ভবনে তাঁর প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি রবিবার মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ার ক্লাব কালীঘাট মিলন সংঘে যে ‘মুখ্যমন্ত্রীর দরবার’ বসে, সেখানেও শান্তনুকে আসতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। আর তার পর শান্তনু-জায়াকে দলীয় কাউন্সিলরদের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ থেকে সরানোকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ঘটনা বলেই মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শদাতা পদে রয়েছেন শান্তনু। তাই কলকাতা পুরসভার ভবনে তাঁর নিজস্ব চেম্বার রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, দলের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ হওয়ার কারণে সেই পদ থেকেও তাঁর অপসারণ এখন সময়ের অপেক্ষা।