প্রতিষেধকের কারণে টান পড়তে পারে রক্তে। প্রতীকী ছবি।
করোনা প্রতিরোধে অবশেষে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নাগরিকদের জন্য প্রতিষেধক দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ছাড়পত্র মিলেছে। ১ মে থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নয়া নির্দেশিকা মেনে প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও এই কাজ
দ্রুত শুরু হবে বলেই জানা গিয়েছে। তবে প্রতিষেধক মেলার সুখবরের সঙ্গে নতুন আশঙ্কার মেঘও উঁকি দিতে শুরু করেছে। রাজ্যের প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হলেই রক্তসঙ্কট আরও প্রকট হবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। কারণ সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনার প্রতিষেধক নেওয়ার পরে দীর্ঘদিন রক্তদান থেকে বিরত থাকতে হবে। ফলে ১৮ বছরের বেশি বয়সী যুবক-যুবতীদের প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হলে একটা বড় অংশের রক্তদাতারা বেশ কিছু দিনের এর আওতার বাইরে চলে যাবেন। ফলে রাজ্যে রক্তের সঙ্কট বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে।
সরকারি তথ্য বলছে, ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়স্ক যে কোনও সুস্থ মানুষ প্রতি তিন মাস অন্তর রক্তদান করতে পারেন। তবে রক্তদাতার ওজন হতে হবে ৪৫ কেজির ঊর্ধ্বে। এর পাশাপাশি আরও কিছু শর্ত থাকে। তার মধ্যেই পড়ছে করোনার প্রতিষেধক নেওয়ার বিষয়টি। রাজ্যের সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনার প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার ২৮ দিন পরে কেউ রক্ত দান করতে পারবেন। তার আগে রক্ত দান করা যাবে না। ফলে করোনার প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ় থেকে দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়া এবং তার পরে আরও ২৮ দিন পর্যন্ত রক্তদান থেকে বিরত থাকতে হবে। ফলে প্রায় তিন মাস বিশাল সংখ্যক কমবয়সি রক্তদাতা এর আওতার বাইরে থাকবেন বলেই মনে করছেন রক্তদানের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনের একটি বড় অংশ।
এ দিকে, শহরের বিভিন্ন রক্তদান কর্মসূচির উদ্যোক্তাদের থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, উৎসাহী রক্তদাতাদের মধ্যে তরুণ-তরুণীদের সংখ্যাই তুলনামূলক ভাবে বেশি থাকে।
ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে গরমকালে এমনিতেই রক্তের সঙ্কট বাড়ে। অতিমারির দরুণ সেই সঙ্কট আরও বেড়েছে। করোনা-বিধি মেনে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করলেও দাতাদের সংখ্যা কমেছে। রক্তের সঙ্কট এর পরে আরও তীব্র হলে বহু রোগীর জীবন সংশয় হওয়ার আশঙ্কা করছে রক্তদানের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলি।
এই রক্ত সঙ্কটের কথা মাথায় রেখেই শহরে রক্তদানের আয়োজন করছে বেশ কিছু সংগঠন। এমনই একটি কর্মসূচির স্লোগান হল, ‘আসুন টিকাকরণের আগে আমরা রক্তদান করি’। এই কর্মসূচির অন্যতম উদ্যোক্তা কৃষ্ণেন্দু সাহা বলেন, ‘‘প্রতি বছরই আমরা রক্তদান শিবির করি। সেখানে দেখা যায়, মূলত কমবয়সিরাই ভিড় করেন। এ বার ১৮-র বেশি বয়সীরা করোনার প্রতিষেধক নেবেন, অনেক দিন রক্ত দিতে পারবেন না। এই অতিমারি পরিস্থিতিতে রক্তের সঙ্কট যাতে আরও না বাড়ে তাই আমরা এই কর্মসূচি করার উদ্যোগ নিয়েছি।’’
যদিও এই বিষয়ে চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলেন, ‘‘করোনার প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার পরে ২৮ দিন পর্যন্ত রক্তদান থেকে বিরত থাকতে হয়। রাজ্যে ১৮-র ঊর্ধ্বে সকলের জন্য প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হলে রক্তদানের ক্ষেত্রে এই নিয়মই মানা হবে। যদিও রাজ্যে একই দিনে বিপুলসংখ্যক যুবক-যুবতীর টিকাকরণ সম্ভব নয়। তাই প্রতিষেধক দেওয়ার শুরুর দিকে কিছু কম বয়সি রক্তদাতা রক্তদানের আওতায় বাইরে থাকলেও পরবর্তী কালে এই সমস্যা আর থাকবে না বলেই মনে হয়।’’