দগ্ধ: চেতলা রোডের কারখানায় আগুন নেভানোর চেষ্টায় দমকল। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
ইটের দেওয়াল আর টিনের ছাউনি দেওয়া বিশাল গুদাম। ভিতরে রাসায়নিক ভর্তি সার সার ড্রাম। পাশেই রাখা ব্যাটারি, প্লাস্টিকের মতো দাহ্য বস্তু। এ দিক-ও দিক থেকে ঝুলছে বিদ্যুতের তার। ভেঙে ঝুলে রয়েছে বিদ্যুতের বোর্ড। সেটাকেই দড়ি দিয়ে বেঁধে কাজ চালানো হচ্ছে। গুদামের ভিতরে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই বলেই অভিযোগ। এর মধ্যেই প্রতি রাতে লরির পর লরিতে ঢুকছে মালপত্র। সকালে ছোট গাড়ি ভর্তি হয়ে সেগুলি চলে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রান্তে।
তারাতলা, একবালপুর, ট্যাংরা, তিলজলা, তপসিয়া-সহ শহরের একাধিক জায়গার গুদামে ঢুঁ মারলে সর্বত্র দেখা যাচ্ছে এক ছবি। অগ্নি-নির্বাপণের ন্যূনতম ব্যবস্থা তো কোন ছার, কোথাও দমকলের গাড়ি ঢোকার রাস্তাটুকুও নেই বলে অভিযোগ। সম্প্রতি ট্যাংরার মেহের আলি লেনে রেক্সিনের গুদামে আগুন লাগার ঘটনা সামনে আসতেই প্রশ্ন উঠেছিল শহরের গুদামগুলির অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে। ওই গুদামে সেই ব্যবস্থা যথাযথ ছিল না বলে প্রাথমিক তদন্তে জানিয়েছিল দমকল।
এর পরেই শহরের গুদামগুলির অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা দেখতে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার সকালে চেতলা রোডে রঙের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রমাণ করল, অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে ওঠা প্রশ্ন কতখানি যুক্তিযুক্ত। অভিযোগ, ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় এই গুদাম তৈরি করে রং-সহ অন্যান্য রাসায়নিক দিনের পর দিন রাখা হলেও আগুন নেভানোর ব্যবস্থা ছিল না। ফলে আগুন দ্রুত ছড়ায়। পাশাপাশি আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে দমকলকর্মীদের। এ দিকে, একের পর এক গুদামে আগুন এবং তদন্তে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থার ত্রুটি সামনে আসায় প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের ভূমিকায়। কেন দমকলও নিয়মিত নজরদারি চালায় না, উঠেছে সেই প্রশ্নও।
গুদামের লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম হল, পুরসভার পরিদর্শনের পরে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা দেখতে দমকলের ফের পরিদর্শন করার কথা। দমকল সূত্রের খবর, এর পাশাপাশি বিদ্যুতের পয়েন্ট এবং ওয়্যারিংও দেখা হয়। দাহ্য পদার্থ রাখতে অগ্নি-নির্বাপণের নিয়মবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা দমকল দেখে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়। এই লাইসেন্স প্রতি বছর নবীকরণ করার কথা। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থার শংসাপত্র ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে গুদামের ব্যবসা চলছে। গুদাম মালিকদের যুক্তি, করোনার জেরে ব্যবসার মন্দার কারণে এই অবস্থা। শহরের এক গুদাম মালিকের বক্তব্য, ‘‘করোনায় দু’বছর ধরে ব্যবসা কার্যত বন্ধ। গত কয়েক মাস যাবৎ ব্যবসা শুরু হলেও লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না। ফলে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থার নবীকরণ করতে গিয়েও অনেকে পিছিয়ে আসছেন।’’ কলকাতা পুরসভার এক কর্তার দাবি, ‘‘গুদামগুলি কী অবস্থায় রয়েছে, তা দেখতে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। দমকলকেও বলা হয়েছে নজরদারি চালাতে।’’ শহরের গুদামগুলির বেহাল অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে কী ভাবছে দমকল, জানতে মন্ত্রী সুজিত বসুকে ফোন ও মেসেজ করা হয়েছিল। তিনি ফোন ধরেননি, মেসেজেরও উত্তর দেননি।