প্রতীকী ছবি
গাছ পড়ে ঝড়ের পাঁচ দিন পরেও শহরে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন বহু জায়গায়। প্রবল গরমে বিদ্যুৎহীন এবং কার্যত নির্জলা হয়ে এখনও দিন কাটছে বহু মানুষের। বিদ্যুতের সংযোগের দাবিতে সোমবারেও বিক্ষোভ হয়েছে শহরের বিভিন্ন জায়গায়। দুর্ভোগ কবে কাটবে তা নিয়ে চলছে চাপান-উতোর। সোমবার পুরমন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিমও এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। শুধু ঠেলাঠেলিই মুখ্য হয়ে রইল দিনভর।
জল ও বিদ্যুতের দাবিতে এ দিনও শহরে, বিশেষত দক্ষিণ কলকাতা এবং দক্ষিণ শহরতলির বহু জায়গাতেই বিক্ষোভ দেখান অসহায় বাসিন্দারা। বেহালা, টালিগঞ্জ, যাদবপুর, সন্তোষপুর, গড়িয়ার মতো বহু এলাকায় এখনও বহু মানুষের বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। বেহালায় এমনও ছবি দেখা গিয়েছে, যেখানে অন্তঃসত্ত্বাকে সুস্থ রাখার জন্য অন্য পাড়া থেকে বিদ্যুতের সংযোগ আনতে হয়েছে একটি বাড়িতে। বহু জায়গাতেই বিক্ষোভকারীদের বলতে শোনা গিয়েছে ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। যাঁরা পারছেন, সিইএসসি-র কর্মীদের কার্যত ছিনতাই করে কাজ করাতে নিয়ে যাচ্ছেন। শৃঙ্খলাপূর্ণ কোনও ব্যবস্থা করতে সিইএসসি কিংবা পুরসভা— কাউকেই দেখা যাচ্ছে না।
আমপানের দাপটে কলকাতায় সাড়ে পাঁচ হাজার গাছ পড়েছে। এত বিপুল বিপর্যয়ের মোকাবিলায় পুরসভার ভূমিকা নিয়ে বারবারই প্রশ্ন উঠছে। কখনও সেই প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী। কখনও আবার পুরসভার ভূমিকার সমালোচনা করেছেন প্রাক্তন মেয়রেরা। পরিস্থিতি সামলাতে শেষ পর্যন্ত গাছ কাটতে নামতে হয়েছে সেনাবাহিনীকেও। এই অবস্থায় বিভিন্ন মহলের বক্তব্য, শুধুই সিইএসসি-কে কাঠগড়ায় না তুলে বিপর্যয় মোকাবিলায় পুরকর্মী, ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখুন পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম।
আরও পড়ুন: ‘সকলে সুস্থ হলে সেটাই আমাদের ইদ’
এ দিন পুর ভবনে ফিরহাদ বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের সঙ্গে পুরসভার কোনও সম্পর্ক নেই। ওটা একটা বেসরকারি সংস্থা। ওরা সময়ে কাজ করতে না পারায় ভুগতে হয়েছে বহু বাসিন্দাকে। এক দিনে ৫ হাজারেরও বেশি গাছ কেটে পরিষ্কার করার ক্ষমতা পুরসভার নেই। সেটা একমাত্র ভগবানের পক্ষেই সম্ভব।’’
তাঁর আরও দাবি, ‘‘১২ এবং ১৫ নম্বর বরো অফিসও বিদ্যুৎহীন। রাস্তা পরিষ্কার, গাছ কাটা পুরসভার কাজ। বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় সিইএসসি। ওদের বলেছি এত দেরি কেন? আগে থেকে প্রস্তুতি নেননি কেন?’’
তিনি এ দিন জানান, ৪, ৭, ৮, ৯, ১১, ১২ এবং ১৬ এই সাতটি বরোয় সব চেয়ে বেশি গাছ পড়েছে। তাঁর দাবি, সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের উপরে বড় বড় গাছ পড়েছিল। ওই রাস্তা সচল করা গিয়েছে। শহরের বড় রাস্তার
উপরে পড়ে থাকা গাছ কাটার কাজও শেষ। পুরসভার কর্মী-সহ সেনাবাহিনী, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল, বন দফতর, কেএমআরসিএল-এর (মেট্রো রেল) কর্মীরাও গাছ কাটার কাজে সহায়তা করেছেন। তবে অলিগলিতে পড়ে থাকা গাছ কাটা শেষ করতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে বলেও ফিরহাদ জানান।
তিনি এ দিন জানান, সিইএসসি তাঁকে জানিয়েছে মঙ্গলবারের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। সিইএসসি-কে আরও লোক বাড়াতে বলা হয়েছে। এবং আর যে ধৈর্য রাখা যাবে না, তা-ও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। যদিও বিদায়ী মেয়রের বক্তব্য নিয়ে সিইএসসি-র আধিকারিকেরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
তাঁদের দাবি, পরিস্থিতির উন্নতিতে তাঁরা সব রকমের চেষ্টা করছেন। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, সবার সঙ্গে সমন্বয় রেখে, লোকবল বাড়িয়ে তারা বিদ্যুৎহীন অঞ্চলগুলিতে পরিষেবা দ্রুত চালু করার সব রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দিন-রাত কাজ করছেন তাদের বিদ্যুৎকর্মীরা।
আরও পড়ুন: রাস্তার পাশে জমছে কাটা গাছ, চিন্তা চুরির