হাসপাতালে সীতা রাও। ফাইল ছবি।
গঙ্গাসাগরে এসে ঠিকানা হারানো বৃদ্ধা ফিরলেন পরিবারের কাছে। প্রায় চার মাস পরে রবিবার রাতে বৃদ্ধাকে নিতে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে কলকাতায় আসেন তাঁর পরিজনেরা। আজ, মঙ্গলবার অ্যাম্বুল্যান্সে করে বৃদ্ধাকে নিয়ে তাঁরা রওনা দেবেন বাড়ির পথে।
ঘটনার সূত্রপাত জানুয়ারিতে। অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে বাসে গঙ্গাসাগর যাওয়ার জন্য একটি দলের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন বছর আশির সীতা রাও। গঙ্গাসাগর ঘুরে দলের সঙ্গে ফিরেও আসেন কলকাতায়। ময়দানে থাকছিলেন। ফেরার আগে হঠাৎ শৌচকর্মের জন্য বাস থেকে নেমে গিয়েছিলেন বৃদ্ধা। তার পরে আর বাসের খোঁজ পাননি। ময়দান এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে করতেই গাড়ির ধাক্কায় আহত হন সীতা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ফেব্রুয়ারি নাগাদ ময়দান এলাকায় এক বৃদ্ধাকে রাস্তার ধারে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁর শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। বৃদ্ধা দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অনুমান করে তাঁকে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। কিন্তু এক দিকে ভাষার সমস্যা, সেই সঙ্গে দুর্ঘটনায় মানসিক ভারসাম্য হারানো বৃদ্ধার নাম-পরিচয় জানতে হিমশিম খাচ্ছিল পুলিশ। এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘বৃদ্ধা যে ভাষায় কথা বলছিলেন, তা বুঝতে পারছিলেন না কেউ। তাঁর সঙ্গে না ছিল আধার কার্ড, না ছিল অন্য পরিচয়পত্র। সেই সঙ্গে অসংলগ্ন কথাও বলছিলেন। দোভাষীর সাহায্য নিয়ে জানা যায়, ফেরার বাস থেকে শৌচকর্মের জন্য তিনি নেমে গিয়েছিলেন। আর বাস খুঁজে পাননি।’’
বৃদ্ধার পরিবারের খোঁজ পেতে পুলিশ এবং হাসপাতালের তরফে ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ওই ক্লাবের সেক্রেটারি অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘‘গঙ্গাসাগর মেলার জন্য এসে ওই বৃদ্ধা যে হারিয়ে গিয়েছেন, সেটুকুই পুলিশ জানতে পেরেছিল। ভাষার সূত্র ধরেই আমরা ভিন্ রাজ্যে যোগাযোগ করি। সেই সূত্রে মেলে পরিবারের সন্ধান।’’ জানা যায়, অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়ার বাসিন্দা বৃদ্ধার নাম সীতা রাও। গঙ্গাসাগর মেলায় এসে আর ফিরে যাননি। পরিবারের সদস্যেরা বারকয়েক কলকাতায় এসে খোঁজাখুঁজিও করেছিলেন। অম্বরীশ বলেন, ‘‘হ্যাম রেডিয়ো এবং পুলিশের মাধ্যমে আমরা ভিন্ রাজ্যে বৃদ্ধার ছবি ছড়িয়ে দিই। সেই সময়ে অন্ধ্রপ্রদেশের আজহার রমেশ বলে এক ব্যক্তি বৃদ্ধার ঠিকানার সন্ধান দেন। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলানো হয়। সকলকেই চিনতে পারেন তিনি।’’
জানা গিয়েছে, গত শনিবার হাসপাতালে বসে ভিডিয়ো কলে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন বৃদ্ধা। ফোনেই ছেলের থেকে পরিবারের বাকিদের খোঁজ নেন। সে দিনই কলকাতায় আসার তোড়জোড় শুরু করেন পরিজনেরা। বৃদ্ধাকে নিতে এসেছেন ছেলে ও নাতিও। নাতি রবি কুমার বলেন, ‘‘ফোনে দিদিমার সঙ্গে কথা হয়েছিল। ওঁকে যে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারছি, তাতেই স্বস্তি।’’