হাওড়া ময়দান মেট্রো স্টেশন। —ফাইল চিত্র।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শিয়ালদহ থেকে সেক্টর ফাইভের তুলনায় দৈনিক ১০ গুণেরও বেশি যাত্রী এসপ্লানেড-হাওড়া পথে সফর করার সম্ভাবনা দেখছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। শুধু তা-ই নয়, হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত পুরো পথে মেট্রো চালু হলে দৈনিক যাত্রীর সংখ্যা ২৫ লক্ষে দাঁড়াতে পারে বলেই অনুমান করা হয়েছে। সম্ভাব্য পরিসংখ্যান নিয়ে এমনই আশা ও আশঙ্কার দোলাচলে মেট্রোকর্তাদের একাংশ। যা এক দিকে যেমন মেট্রোর আয়বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে, তেমন এটি আশঙ্কারও কারণ। ওই বিপুল যাত্রীর চাপ সামলানোর জন্য যথেষ্ট সংখ্যক কর্মীর অভাব নিয়েই এখন ভাবিত মেট্রোর কর্তারা।
পূর্বে সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহের মধ্যে যে সূচি মেনে মেট্রো চলে, পশ্চিমে এসপ্লানেড থেকে হাওড়ার মধ্যে সেই একই সূচি মানা হবে বলে মেট্রোর তরফে জানা গিয়েছে। শিয়ালদহ থেকে সেক্টর ফাইভ মেট্রোপথে দৈনিক ৪০ থেকে ৫০ হাজার যাত্রী সফর করেন। এসপ্লানেড থেকে হাওড়ার মধ্যে ওই যাত্রী সংখ্যাই দিনে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লক্ষ বা তারও বেশি হতে পারে বলে মেট্রো সূত্রের খবর।
পাশাপাশি, মেট্রো পরিষেবা শুরু হলে বদলে যাবে বি বা দী বাগ-এসপ্লানেড অঞ্চলের পরিবহণ চিত্রও। পড়াশোনা, চাকরি, ব্যবসা-সহ নানা কাজে যে সব যাত্রীরা বাসে হাওড়া থেকে এসপ্লানেড আসেন, তাঁদের বড় অংশই মেট্রোর অনায়াস সফর বেছে নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। বেসরকারি বাস ১০ বা ১৫ টাকার যে বর্ধিত ভাড়া নেয়, তার তুলনায় মেট্রোর সফর আরামদায়ক এবং সস্তা। ট্রেনে উঠলে ৮ মিনিটে যাত্রীরা সরাসরি হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে যাবেন। এ জন্য তাঁদের স্টেশনের অপরিচ্ছন্ন সাবওয়ের দোকানের ভিড় ঠেলেও যেতে হবে না।
যে সব যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে বি বা দী বাগ অথবা কলকাতা হাই কোর্টের অফিসপাড়ায় আসেন, তাঁদের অধিকাংশই এখন ফেরি পরিষেবা বেছে নেন। হাওড়া থেকে লঞ্চ ধরে শিপিং কর্পোরেশন বা ফেয়ারলি প্লেসের ঘাটে নামেন তাঁরা। এমন যাত্রীর সংখ্যা এক লক্ষের কাছাকাছি। মেট্রো চালু হলে ওই যাত্রীদের বড় অংশ ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর বি বা দী বাগের অফিসপাড়া সংলগ্ন মহাকরণ স্টেশনকে সফরের প্রয়োজনে বেছে নিতে পারেন। ফলে বেসরকারি বাস এবং মিনিবাসের মতোই বিপুল সংখ্যায় যাত্রী হারাতে পারে ফেরি পরিষেবা।
আবার বাবুঘাটগামী যাত্রীদের বড় অংশ ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কার্জন পার্ক লাগোয়া এসপ্লানেড স্টেশনের ইডেন প্রান্তকে বেছে নিতে পারেন। যে সব নিত্যযাত্রী বেসরকারি বাস, মিনিবাস, ফেরি, শাটল ট্যাক্সি ভাগাভাগি করে ব্যবহার করেন, তাঁদের সিংহভাগ মেট্রোয় চলে আসবেন। এসপ্লানেড থেকে হাওড়া এবং হাওড়া ময়দান যেতে আরামদায়ক ও দ্রুত গতির এই সফরে সর্বাধিক ১০ টাকা দিতে হবে যাত্রীদের। এর ফলে, হাওড়া ময়দানগামী বাসের যাত্রীরাও মেট্রোর দিকেই ঝুঁকবেন।
উল্টো দিকে, শহরতলির ট্রেনের মতোই দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রীরাও হাওড়া স্টেশন থেকে গন্তব্যে পৌঁছতে ওই মেট্রোকেই পরিবহণের মাধ্যম হিসেবে পেতে পছন্দ করবেন। মেট্রোকে ঘিরে পরিবহণ চিত্রের এই সব সম্ভাব্য বদল ভাবাচ্ছে আধিকারিকদের। মেট্রোর ছাড়পত্র দিতে গিয়ে চিফ সেফটি কমিশনারও বিপুল সংখ্যক যাত্রীর সম্ভাবনার দিকটি তুলে ধরে চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন।
মেট্রো সূত্রের খবর, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক যাত্রীর ভিড় সামাল দিতে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর বিভিন্ন স্টেশনে যথেষ্ট কর্মী প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে দু’ভাবে ভাবছেন কর্তৃপক্ষ। নিজস্ব কর্মী এবং বেসরকারি সংস্থার কর্মী দিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর পরিকল্পনা হচ্ছে। স্টেশন পরিচালনার কাজে মেট্রোর নিজস্ব কর্মীদের ব্যবহার করা হবে। কিন্তু টিকেটিং জ়োনের বাইরে বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষীদের ব্যবহার করা হতে পারে। হাওড়া স্টেশনের টিকিট বুকিং কাউন্টার সামলানোর ক্ষেত্রেও বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। সেই সব খুঁটিনাটি চূড়ান্ত হলেই চলতি মাস থেকে পরিষেবা শুরুর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।