ক্ষতি: দু’মাসেরও বেশি সময় সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল লঞ্চ পরিষেবা। ফাইল চিত্র
ট্রেন বন্ধ থাকায় যাত্রীর সংখ্যা কমে গিয়েছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। যার জেরে টিকিট বিক্রির হার কমে গিয়ে সর্বকালীন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে সরকার আরও এক মাসের জন্য লকডাউন ঘোষণা করায় ‘হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি’র লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ওই সমিতির আর্থিক সঙ্কট এখন এমনই যে, জুলাই মাসে কর্মীদের বেতন কী ভাবে হবে, কী ভাবেই বা লঞ্চ পরিষেবা চালু থাকবে, তা ভেবে পাচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ। রাজ্য সরকারের কাছে তাই সাহায্যের আবেদন জানালেন ওই সমবায় সমিতির কর্তারা।
সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনার জেরে চালু হওয়া লকডাউনের কারণে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। যার ফলে সমিতির আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় দু’কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা। কর্মীদের ৬৯ দিনের বকেয়া বেতন দিতে হয়েছে সংস্থার স্থায়ী আমানত ভেঙে। শুধু বেতন বাবদই খরচ হয়েছে এক কোটি পাঁচ লক্ষ টাকা। এর সঙ্গে আবার গত ১ জুন থেকে যুক্ত হয়েছে ফেরি পরিষেবা চালু রাখার খরচ। যাত্রী-সংখ্যা এতটাই কমে গিয়েছে যে, দৈনিক প্রায় এক লক্ষ ৪০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে ওই সংস্থার।
সমবায় সমিতির এক কর্তা জানান, গত এক মাসে প্রতিদিন গড়ে যত যাত্রী হয়েছে, তা স্বাভাবিক দিনের যাত্রী-সংখ্যার মাত্র দুই শতাংশ। চাঁদপাল ঘাটে সেটাই ১৬ শতাংশ, নাজিরগঞ্জে ৪৫ শতাংশ, গোলাবাড়ি ঘাটে ১৩ শতাংশ এবং গার্ডেনরিচে ১৫ শতাংশ। কাশীপুর লঞ্চঘাট, আর্মেনিয়ান ঘাট, গেঁওখালি ঘাট, শিবপুর জেটি ও বাউড়িয়া জেটি ভেঙে পড়ে থাকায় সেখান থেকে এক টাকাও আয় হয়নি।
রাজ্য সরকারকে দেওয়া চিঠিতে সমিতির তরফে জানানো হয়েছে, গঙ্গায় মোট লঞ্চঘাট রয়েছে ১৮টি। ১১টি ঘাটে সমিতির লঞ্চ চলে। তাদের মোট ৩৪টি লঞ্চ রয়েছে। কর্মী ৩৪০ জন। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সমস্ত ঘাটে লঞ্চ পরিষেবা চালু রাখতে এবং কর্মীদের বেতন বাবদ দৈনিক যে খরচ হয়, তা সামাল দিতে গিয়ে জলপথ পরিবহণ পরিষেবাই চরম সঙ্কটে পড়েছে। এই অবস্থা আরও মাসখানেক চললে সংস্থা যে মুখ থুবড়ে পড়বে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।
সমিতির প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য শাশ্বত বসুচৌধুরী বলেন, ‘‘আমাদের সমস্যার কথা বিস্তারিত জানিয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছি। এই অবস্থায় জলপথ পরিবহণ পরিষেবা কী ভাবে স্বাভাবিক থাকবে, তা রাজ্য সরকার জানালে সে ভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
পরিচালন সমিতির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় বছর দুয়েক আগে বোর্ড ভেঙে দিয়ে ওই সংস্থার ভার প্রশাসকমণ্ডলীর হাতে তুলে দেয় রাজ্য সমবায় দফতর। কর্মচারীদের একাংশের অভিযোগ, গত দু’বছরে প্রশাসকেরা সমবায় সমিতির নানা বেহিসেবি খরচ বন্ধ করে দিলেও আয়ের দিকে নজর দেননি।
তাঁদের অভিযোগ, আহিরীটোলা ঘাটের জন্য বহু টাকা ইন্দো-সুইস ট্রেডিং কোম্পানির কাছে পড়ে থাকলেও তা তোলা হয়নি। হাওড়া স্টেশন চত্বরে রাস্তায় যে হোর্ডিং ভাড়া দেওয়া হয়েছে, তারও লক্ষ লক্ষ টাকা বকেয়া। সেই টাকাও আদায় করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। বর্তমানে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত লঞ্চ চালানো হচ্ছে। কর্মীদের একাংশের মতে, সময় আরও বাড়ালে ক্ষতির পরিমাণ কমতে পারে।