ছবি: সংগৃহীত
ওরা শেষ লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিল ২০১৯ সালে, নবম থেকে দশম শ্রেণিতে ওঠার সময়ে। তার পরে করোনার প্রকোপের কারণে গোটা দশম শ্রেণিতে কোনও পরীক্ষা হয়নি। বাতিল হয়েছে মাধ্যমিকও। এই পরিস্থিতিতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বিশেষ মূল্যায়নের উপরে নির্ভর করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে চলেছে এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। কিন্তু যে বিষয়গুলি নিয়ে তারা একাদশে ভর্তি হতে আগ্রহী, সেগুলিতে তারা কতটা দক্ষ, সেটা যাচাই করতে ভর্তির পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে শহরের বেশ কিছু স্কুল। সংশ্লিষ্ট স্কুলের কর্তৃপক্ষেরা জানাচ্ছেন, এত দিন তাঁরা মাধ্যমিকের মেধা তালিকার ভিত্তিতে ভর্তি নিতেন। কিন্তু এ বার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনলাইনে পরীক্ষার আয়োজন করার পরিকল্পনা করছেন তাঁরা।
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য যেমন জানালেন, তাঁরা প্রতি বছর মেধা তালিকা অনুযায়ী একাদশে ভর্তি নেন। কিন্তু এ বার তাঁরা অনলাইনে পরীক্ষা নেবেন পড়ুয়াদের। পরিমলবাবু বলেন, “অনলাইনে প্রতিটি বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট নম্বরে কম সময়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রশ্ন এমন ভাবে করা হবে, যা বই দেখে লেখা কঠিন। সংশ্লিষ্ট বিষয়টি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকলে তবেই উত্তর লেখা যাবে।’’ তিনি জানান, তাঁদের স্কুলে প্রতি বার অন্য স্কুল থেকে অনেক ছাত্র ভর্তি হতে আসে। এই বছর যে পদ্ধতিতে মূল্যায়ন হচ্ছে, তাতে প্রচুর পড়ুয়া হয়তো ভাল নম্বর পাবে। তাই পরিমলবাবুর মত, ভর্তির পরীক্ষা না নিলে পরবর্তীকালে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর এলাকার সরস্বতী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জয়তী মিত্র মজুমদার জানান, তাঁরা নিজেদের স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য আলাদা করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন না। তবে যারা অন্য স্কুল থেকে ভর্তি হতে আসবে, তাদের জন্য পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। জয়তীদেবী বলেন, “আমাদের স্কুলের ছাত্রীরা কে, কোন বিষয়ে ভাল তা আমরা অনেকটাই জানি। কিন্তু অন্য স্কুলের মেয়েদের সম্পর্কে কিছু জানি না। তাই ওরা যে বিষয় নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পড়তে চায়, সেগুলিতে কতটা দক্ষ, তা একটু যাচাই করে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কোভিড-বিধি মেনে স্কুলে খুব কম সময়ের জন্য ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করার কথা ভাবা হয়েছে।”
এলাকার মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলি থেকে অনেক পড়ুয়াই তাঁদের স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হতে আসে বলে জানিয়েছেন সারদাপ্রসাদ ইনস্টিটিউট ফর বয়েজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সঞ্চয়িতা চৌধুরী রায়। তিনি বলেন, “এ বার হয়তো সেই চাপটা আরও বেশি হবে। তবে লিখিত পরীক্ষা না নিলেও পড়ুয়াদের ইন্টারভিউ নেওয়া যেতেই পারে। তার মাধ্যমেই বুঝব, ওই পড়ুয়া যে বিষয়গুলি নিয়ে ভর্তি হতে চায়, তাতে তার জ্ঞান বা দক্ষতা কতটা রয়েছে।”
উচ্চ মাধ্যমিকে কী কী বিষয় নির্বাচন করলে এক জন পরীক্ষার্থীর ভাল হয়, তা বুঝিয়ে ইতিমধ্যেই পড়ুয়া ও তাদের অভিভাবকদের কাউন্সেলিং শুরু করেছে গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজ় টাকি হাউস। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা বসাক বলেন, “উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এক জন পড়ুয়া কোন বিষয় নিয়ে ভর্তি হচ্ছে, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। দেখা গেল, এ বারের মূল্যায়নে হয়তো কোনও পড়ুয়া বিজ্ঞান বিষয়ে ভাল নম্বর পেয়েছে। কিন্তু সেই বিষয়ে তার দক্ষতা বা জ্ঞান কম। সে ক্ষেত্রে কি বিজ্ঞানের বিষয়গুলি নিয়ে তার ভর্তি হওয়া উচিত? পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে, তাদের কাউন্সেলিং করে বোঝাচ্ছি, কোন বিষয় নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলে ভাল ফল করার
সম্ভাবনা রয়েছে।”