Arrest

চিকিৎসক প্রজ্ঞাদীপার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় অবশেষে তাঁর সঙ্গী গ্রেফতার

গত সোমবার রাতে ঘটনার পরেই কৌশিকের বিরুদ্ধে মেয়েকে শারীরিক নিগ্রহের পরে খুনের অভিযোগ করেছিলেন প্রজ্ঞাদীপার মা ঝর্না হালদার। কৌশিকের গ্রেফতারির খবর যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩ ০৭:১৮
Share:

থানা থেকে আদালতের পথে কৌশিক সর্বাধিকারী। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

চিকিৎসক প্রজ্ঞাদীপা হালদারের (৩৭) অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার সকালে অবশেষে গ্রেফতার হলেন তাঁর সঙ্গী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও চিকিৎসক কৌশিক সর্বাধিকারী। অভিযোগ, তিনি প্রজ্ঞাদীপাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছেন। এ দিন কৌশিককে ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম স্বাতী মৌলিক এফআইআর খতিয়ে দেখে ও অভিযুক্তের পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে ছ’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। ২৯ জুন মামলা আদালতে উঠবে।

Advertisement

গত সোমবার রাতে ঘটনার পরেই কৌশিকের বিরুদ্ধে মেয়েকে শারীরিক নিগ্রহের পরে খুনের অভিযোগ করেছিলেন প্রজ্ঞাদীপার মা ঝর্না হালদার। এ দিন কৌশিকের গ্রেফতারির খবর যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি। বার বার প্রশ্ন করেন, ‘‘সত্যিই ধরা পড়েছে?’’ এর পরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

গোল গলার সবুজ রঙের সুতির জামা, ট্রাউজ়ার্স ও স্নিকার্স পরা, মাঝারি উচ্চতার বছর পঞ্চাশের কৌশিক এ দিন আদালতে যাওয়া থেকে ব্যারাকপুর থানার লক-আপে ফেরা পর্যন্ত নিজের আইনজীবী-বন্ধু সুদীপ মৈত্র ছাড়া কারও সঙ্গেই কথা বলেননি। শুনানি চলাকালীন আদালতের লক-আপে অন্য অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়িয়ে সওয়াল শুনেছেন। তাঁর আইনজীবী এ দিন বিচারকের কাছে দাবি করেন, তাঁর মক্কেল নির্দোষ। তাঁর এ-ও দাবি, প্রজ্ঞাদীপার সঙ্গে লিভ-ইন সম্পর্কেও ছিলেন না কৌশিক। কারণ, তাঁদের পরিচয় ২০১৯ সালে হলেও তখন তিনি লাদাখে কর্মরত। এক বছর আগে ব্যারাকপুরের বেস হাসপাতালে অফিসার ইন-চার্জ পদে নিযুক্ত হন কৌশিক। আইনজীবীর বক্তব্য, ম্যান্ডেলা হাউস ব্যারাকপুর ব্রিগেডের অবিবাহিত অফিসারদের আবাসন। সেখানে লিভ-ইন পার্টনারের সঙ্গেও থাকা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘‘সেখানে প্রজ্ঞাদীপার আসা-যাওয়া ছিল। ঘটনার দিন বিকেলেও এসেছিলেন।’’ আইনজীবীর আরও দাবি, প্রজ্ঞাদীপা অবসাদে ভুগছিলেন। গত মে মাসে কৌশিকই কলকাতার দু’জন মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। প্রজ্ঞাদীপা নিয়মিত অবসাদের ওষুধ খেতেন এবং আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে দাবি তাঁর। পরে কৌশিকও মানসিক চাপ কমাতে ওষুধ খেতেন। সেই ওষুধ যাতে লক-আপে কৌশিককে দেওয়া হয়, সেই আর্জিও জানান আইনজীবী। বিচারক পুলিশকে সেই ব্যবস্থা করতে বলেন।

Advertisement

সরকারি আইনজীবী সুদীপ সরকারের প্রশ্ন, ‘‘কৌশিকের সঙ্গে লিভ-ইন সম্পর্ক না থাকলে রাতে তাঁর ঘর থেকে প্রজ্ঞাদীপার দেহ মিলল কী করে? আশ্চর্যের বিষয় হল, অবসাদগ্রস্ত চিকিৎসক যদি আত্মহত্যাই করবেন, তা হলে ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ থাকার কথা। অভিযুক্ত অনেক রাতে ফিরে দেখলেন প্রণয়ীর ঝুলন্ত দেহ। তার পরেও ফাঁস খুলে দেহ নামানোর বদলে তিনি বেরিয়ে গেলেন!’’ তাঁর দাবি, ‘‘বিষয়টি যতটা সহজ ভাবে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে, তত সহজ নয়। আত্মহত্যায় প্ররোচনা, না কি খুন, তা-ও দেখা দরকার। এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কি না, তা-ও তদন্তসাপেক্ষ।’’

সোমবার রাতে ঘটনার আগে কৌশিকের চার বাংলাদেশি বন্ধুর উপস্থিতির কথা জেনেছেন তদন্তকারীরা। ব্যারাকপুরে কেন্দ্রীয় একটি সংস্থার অতিথিশালায় উঠেছিলেন ওই চার জন। যাঁদের সঙ্গে সে দিন দীর্ঘ সময় কাটান কৌশিক। তাঁর আইনজীবীও বলেন, ‘‘কৌশিক বাংলাদেশি বন্ধুদের নিয়ে গিয়ে ব্যারাকপুরের দর্শনীয় স্থানগুলি দেখাচ্ছিলেন। পরে বৃদ্ধাশ্রমে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যান। তাই কখন প্রজ্ঞাদীপা আত্মহত্যা করলেন, জানার কথা নয় তাঁর। বাড়ি ফিরে প্রজ্ঞাদীপাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেই চিকিৎসক হিসাবে বুঝে যান যে, দেহে প্রাণ নেই। তাই পরিজনদের খবর দিতে ছোটেন। কেউ ফোন না ধরায় বারাসত অবধি স্কুটার চালিয়ে প্রজ্ঞাদীপার মা-বাবার বাড়িতে যান কৌশিক। সেখানে কেউ দরজা না খোলায় ফিরে এসে ব্রিগেডিয়ারকে সব জানান।’’ প্রজ্ঞাদীপার মায়ের দাবি, এ তথ্য ঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘‘কৌশিককে তো আমরাই বার বার খুঁজেছি, কথা বলতে চেয়েছি। ও আসেনি। মিথ্যা বলছে। রাত দেড়টায় ব্যারাকপুর ব্রিগেড থেকে ফোনে খবর দেওয়া হয়। সেখানে গিয়েও ওর সঙ্গে কথা বলতে গেলে এড়িয়ে গিয়েছে।’’

ব্যারাকপুরের নগরপাল অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে কিছু হয়েছে, না কি আচমকা, ঘটনার সময়ে অন্য কেউ ছিল কি না, তা জানতে ফরেন্সিক পরীক্ষা হবে। আত্মহত্যায় প্ররোচনার যথেষ্ট তথ্য আমাদের হাতে আছে। তার ভিত্তিতেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তে যে সত্য সামনে আসবে, তা আদালতে পেশ করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement