চরম সঙ্কটে কর্মীরা। প্রতীকী ছবি।
পুজোর মুখে গত পাঁচ মাস ধরে বেতন পাননি রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত এক হাজারেরও বেশি দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মী। চরম সঙ্কটে দিন কাটছে তাঁদের।
কেবল তাঁদের দুরবস্থাই নয়, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেহাল অবস্থা নিগমের ওয়েবসাইটটিরও। কাঁচা মাছ-সহ রান্না করা মাছের হোম ডেলিভারি থেকে শুরু করে অনলাইনে মাছ বিক্রি বছর তিনেকের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। অথচ ওয়েবসাইট দেখাচ্ছে, এ সব কিছুই চালু রয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগম বছরের পর লাভজনক সংস্থা হিসাবে পরিচিত ছিল, হঠাৎ করে তার এমন মুখ থুবড়ে পড়ার কী কারণ? মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী আর্থিক সঙ্কটের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘কর্মীরা পাঁচ মাস ধরে বেতন পাননি। নিগম আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কর্মীদের বকেয়া বেতন যাতে শীঘ্রই দেওয়া যায়, সেই চেষ্টা করছি।’’
রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের ওয়েবসাইটে গেলেই বোঝা যাবে সংস্থার দুরবস্থা কতটা! এখনও প্রাক্তন মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি-সহ প্রাক্তন এমডি-র নাম ও ছবি রয়ে গিয়েছে সেখানে। দীর্ঘদিন ধরে ওয়েবসাইট সংস্কার না হওয়ায় মানুষ বেশ বিরক্ত। অনেকের প্রশ্ন, অনলাইন মাছ বিক্রি বন্ধ থাকলেও ওয়েবসাইটে সে সব চালু রয়েছে বলে দেখাচ্ছে। ফলে খোঁজখবর করতে গিয়ে শেষমেশ বিভ্রান্ত হতে হচ্ছে। অথচ বছর তিনেক আগে পর্যন্ত রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের ছবিটা পুরোপুরি আলাদা ছিল। সেই সময়ে অনলাইনে বিভিন্ন কাঁচা মাছ, রান্না করা পদ বিক্রি হত। মেলা, উৎসবে স্টল দিয়ে সংস্থা বেশ লাভজনক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল। নিগম সূত্রের খবর, বছর তিনেক আগে পর্যন্ত ব্যাঙ্কে কয়েকশো কোটি টাকা স্থায়ী আমানত ছিল। কিন্তু বর্তমানে অবস্থা এমন পর্যায়ে যে গত পাঁচ মাস ধরে কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না।
বিভিন্ন জেলায় নিগমের ১২টি জায়গায় মাছ চাষের খামার রয়েছে। গত পাঁচ মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় এই সব প্রকল্পের দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মীরা চরম অনিশ্চতায় দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘পুজোর আগে বকেয়া পাব কি না, জানি না। ধারদেনা করে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।’’
সূত্রের খবর, গত তিন বছর ধরে হঠাৎ করে ছবিটা বদলাতে থাকে। মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রতি নিগমের পূর্বতন ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে সরিয়ে বেনফিশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শর্মিষ্ঠা দাসকে নিগমের যুগ্ম দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের নয়া ম্যানেজিং ডিরেক্টর শর্মিষ্ঠা দাস বলেন, ‘‘কর্মীদের বকেয়া বেতন যতটা পারছি মেটাচ্ছি। সমস্যা দীর্ঘদিনের। রাতারাতি এর সমাধান সম্ভব নয়। আমরা কর্মীদের বিষয়টা আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করছি। ওয়েবসাইট সংস্কার করতে বলা হয়েছে।’’