প্রতীকী ছবি।
বাসে পিষ্ট হয়ে এক স্কুটারচালকের মৃত্যু এবং একাধিক বাসযাত্রীর জখম হওয়ার ঘটনার একটি মামলায় মূল অভিযুক্ত বাসচালক নিম্ন আদালত থেকে আগাম জামিন পেয়েছিলেন। গত সোমবার তা খারিজ করে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, অভিযুক্ত চালককে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে পারবে কলকাতা পুলিশ। ঘটনাচক্রে, তার পরেই বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজার থানা এলাকার বাসিন্দা গোলক ঘোষ নামে ওই চালক আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের এজলাসে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তাকে দু’দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, উপরোক্ত দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল গত বছরের ৬ নভেম্বর। ওই দিন সকালে সার্ভে পার্ক থানা এলাকার ইএম বাইপাসে শুভজিৎ শূর (২২) নামে এক স্কুটারচালককে বেপরোয়া ভাবে পিষে দেয় গড়িয়া-বাগবাজার রুটের একটি বেসরকারি বাস। গুরুতর জখম অবস্থায় শুভজিৎকে ইএম বাইপাস সংলগ্ন একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। যাত্রীদের অভিযোগ, ওই যুবককে ধাক্কা মারার পরে পুলিশের নজর এড়িয়ে পালানোর জন্য বাসচালক গোলক আরও বেপরোয়া ভাবে বাস চালাতে শুরু করে। এর ফলে বাসের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিতে জখম হন অনেক যাত্রী। বাসের জানলা ও লোহার রডে আঘাত লেগেও অনেকে গুরুতর জখম হন। যাত্রীদের আরও অভিযোগ, ঠিক মতো বাস চালানোর জন্য চালককে হাজার অনুরোধ করা সত্ত্বেও সে কান দেয়নি। শেষে বাঘা যতীন উড়ালপুলের কাছে বাস থামিয়ে চম্পট দেয় গোলক।
তদন্তে নেমে চালকের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। তার খোঁজে মন্দিরবাজার থানা-সহ আশপাশের সব থানায় তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। কিন্তু গোলকের সন্ধান মেলেনি। ঘটনার সপ্তাহখানেক পরে আলিপুর আদালতের জেলা বিচারকের এজলাসে আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিনের আবেদন করে অভিযুক্ত চালক। জেলা বিচারক তা মঞ্জুর করেন।
কিন্তু পুলিশ সূত্রের খবর, দুর্ঘটনায় মৃত স্কুটারচালকের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট, একাধিক বাসযাত্রীর সাক্ষ্য এবং ফরেন্সিক রিপোর্টে উঠে আসে, ওই দুর্ঘটনার জন্য বাসচালকই সম্পূর্ণ ভাবে দায়ী। এর পরেই কলকাতা পুলিশের তরফে হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে চালকের আগাম জামিন খারিজের আবেদন জানানো হয়। সম্প্রতি সমস্ত তথ্যপ্রমাণ যাচাই করে বিচারপতি বসাক তা খারিজ করেন।
আদালত সূত্রের খবর, নিম্ন আদালতের দেওয়া নির্দেশের ক্ষেত্রে বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ এবং সাক্ষ্য যাচাই না করে আগাম জামিন মঞ্জুর করা সঠিক আইনি পদক্ষেপ নয়। তাঁর আরও পর্যবেক্ষণ, অবিলম্বে আগাম জামিন খারিজ করে অভিযুক্ত চালককে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার প্রয়োজন রয়েছে।
বিচারপতির এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। বাসচালকের বেপরোয়া মনোভাব এবং কোনও রকম ট্র্যাফিক আইন না মেনে গাড়ি চালানোর জন্য প্রাণ গিয়েছে এক তরতাজা যুবকের, গুরুতর জখম হয়েছেন একাধিক ব্যক্তি। এক বছর পরেও জখম যাত্রীদের কেউ কেউ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। মানবিকতার দিক থেকেই চালকের আগাম জামিন খারিজের আর্জি জানানো হয়েছিল। বিচারপতি সঠিক নির্দেশই দিয়েছেন।’’