শহরের অধিকাংশ পুর স্কুলেই দুয়ারে সরকারের শিবির করা হবে। ফাইল চিত্র।
আগামী কাল, ১ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি। চলবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত। কলকাতা পুরসভা এলাকায় পুর স্কুলগুলিতে দুয়ারে সরকারের শিবির করা হবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। এক দিকে ওই কর্মসূচিতে পুর স্কুলের বহু শিক্ষককে কাজে লাগানো হবে। তার উপরে আবার পুর স্কুলেই শিবির হওয়ায় সেখানকার পঠনপাঠন প্রবল ভাবে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন খোদ শিক্ষকেরাই। পুর স্কুলগুলির ওই শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রতি বারই দুয়ারে সরকার কর্মসূচির জন্য তাঁদের কাজে লাগানো হয়। এবং প্রতি বারই সেই কারণে শিশুদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হয়। এ বারেও যার অন্যথা ঘটবে না। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ পড়ুয়াদের অভিভাবকেরাও।
পুরসভার সোশ্যাল সেক্টর বিভাগ সূত্রের খবর, শহরের অধিকাংশ পুর স্কুলেই দুয়ারে সরকারের শিবির করা হবে। ইতিমধ্যেই স্কুলগুলিতে পুরসভার তরফে এই সংক্রান্ত বার্তা পাঠানো হয়েছে। মেয়র পারিষদ (সোশ্যাল সেক্টর) মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, ‘‘স্কুলগুলিতে দুয়ারে সরকারের শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে ঠিকই, তবে তার জন্য বিদ্যালয়ের পঠনপাঠনে কোনও সমস্যা হবে না। শিবিরের পাশাপাশি ক্লাসও চলবে।’’ কিন্তু, দুয়ারে সরকারের শিবির হলে সেই স্কুলে স্বাভাবিক পঠনপাঠন কী ভাবে একসঙ্গে চলবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকেরা। দক্ষিণ কলকাতার একটি পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের অভিযোগ, ‘‘দুয়ারে সরকার শিবির আর স্কুলের পঠনপাঠন, কিছুতেই একসঙ্গে চলতে পারে না। দুয়ারে সরকার শিবির করলে ক্লাস বন্ধ রাখতেই হবে।’’
পুরসভার প্রাথমিক স্কুলগুলির শিক্ষকদের বক্তব্য, কোভিড-পর্বে পুর স্কুলে পঠনপাঠন ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ছাত্রছাত্রীদের সেই ক্ষতি পূরণ করতে কোভিড-পরবর্তী সময়ে যখন তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তখন দুয়ারে সরকার শিবিরের মতো কর্মসূচির জেরে সেই চেষ্টা আবার অনেকটা পিছিয়ে যাচ্ছে। ওই কাজে পুর শিক্ষকদের যুক্ত করার পাশাপাশি স্কুল ভবনগুলিকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। যার জেরে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে অসংখ্য পড়ুয়ার।
১-২০ এপ্রিল দুয়ারে সরকার শিবিরের জন্য ৭৪২ জন পুরকর্মীকে কাজে লাগানো হবে। যাঁদের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যাই ৩৩০। এ শহরে দুশোর বেশি পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের মোট সংখ্যা ৬০০-র একটু বেশি। তাই প্রশ্ন উঠেছে, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রায় ৫০ শতাংশকে দুয়ারে সরকার শিবিরে কাজে লাগানো হলে ছাত্রছাত্রীদের পড়াবেন কারা? পুরসভা পরিচালিত একটি স্কুলের এক শিক্ষকের প্রশ্ন, ‘‘দুয়ারে সরকার শিবিরের জন্য কেন শিক্ষকদের নিযুক্ত করা হবে? পুর কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি বেশ কিছু বিদ্যালয় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আসলে পুর বিদ্যালয়গুলি থাকুক, এটাই পুর কর্তৃপক্ষ চান না।’’
অতীতেও দুয়ারে সরকার শিবিরের জন্য পুরসভার শিক্ষকদের একটি বড় অংশকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। উত্তর কলকাতার একটি পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের অভিযোগ, ‘‘এখন সবে ক্লাস শুরু হয়েছে। এই সময়ে টানা এক মাস পঠনপাঠন বিঘ্নিত হলে ছাত্রছাত্রীরা বিপদে পড়বে।’’ পুরসভার শিক্ষা বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দুয়ারে সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। নাগরিকদের সুবিধার্থে এই উদ্যোগ। স্কুল বন্ধ রেখে দুয়ারে সরকারের শিবির হবে না। আবার শিক্ষকের অভাবে বিদ্যালয়ের পঠনপাঠনও বিঘ্নিত হবে না। সবটাই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’