ফাইল চিত্র
এক বছর তিন মাস ধরে কলকাতা পুরসভা পরিচালিত প্রাথমিক স্কুলগুলির যাবতীয় পঠনপাঠন বন্ধ। অভিযোগ, করোনা আবহে পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের মধ্যে কোনও যোগাযোগই নেই। ফলে বিপন্ন খুদেদের ভবিষ্যৎ।
গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর পুরসভার শিক্ষা দফতর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। যেখানে বলা হয়েছিল, স্কুলগুলি থেকে সেপ্টেম্বরে মিড-ডে মিলের খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের সময়েই শিক্ষকেরা অভিভাবকদের হাতে প্রতি বিষয়ের ওয়ার্কশিট তৈরি করে দেবেন। সেখানে পড়ুয়ারা উত্তর লিখে অভিভাবকদের মাধ্যমে স্কুলে জমা দেবে। গত বছর লকডাউন উঠে যাওয়ার পর সেপ্টেম্বরে প্রশ্ন-উত্তরের ওয়ার্কশিট তৈরি করে স্কুল অভিভাবকদের হাতে দেওয়া শুরু করেছিল। অভিযোগ, এক মাস পরে, অক্টোবরেই পড়ুয়াদের মূল্যায়ন করার সেই ক্রিয়াকলাপ (অ্যাক্টিভিটি টাস্ক) বন্ধ হয়ে যায়। এবং পুর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তা বন্ধ করা হয় বলেই দাবি। তখন থেকেই পড়ুয়ারা পঠনপাঠন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
দক্ষিণ কলকাতার একটি পুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকের অভিযোগ, “গত এক বছর ধরে শিক্ষকেরা কখনও সোশ্যাল সেক্টর, কখনও দুয়ারে সরকার, কখনও বা স্বাস্থ্য বিভাগে কাজ করছেন। অবাক বিষয়, শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষাদানের কাজটাই আমাদের দিয়ে করানো হচ্ছে না! অথচ ওয়ার্কশিট বন্ধ হওয়ায় অভিভাবকেরা নালিশ করছেন, ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা থেকে সরে গিয়েছে। ওই মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু থাকলে ওদের কিছুটা পড়াশোনার চর্চা থাকত।” শিক্ষকদের আশঙ্কা, এর ফলে অতিমারি-পরবর্তী সময়ে স্কুলছুটের সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে যাবে।
শহরে পুরসভা পরিচালিত ২৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। যার মধ্যে ৫৮টি হিন্দি মাধ্যম স্কুল। সেখানকার বেশির ভাগ পড়ুয়া বিহার বা উত্তরপ্রদেশের বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে থাকছে। তারা হয়তো আর কলকাতায় ফিরবে না বা ফিরলেও কাজে যুক্ত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা শিক্ষকদের।
গত বছরের মার্চের শেষে লকডাউন শুরুর পর থেকেই রাজ্যের অন্যান্য স্কুলগুলির মতো পুর প্রাথমিক স্কুলও বন্ধ হয়ে যায়। তবে জুনে লকডাউন উঠে যাওয়ার পর থেকে প্রতি মাসে নিয়মিত মিড-ডে মিলের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বন্ধ আছে স্কুলের আসল কার্যক্রম— পড়াশোনা।
প্রায় ছ’হাজার পড়ুয়া এবং প্রায় ৬০০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নিয়ে কী ভাবছে পুর প্রশাসন? এক মাস ওয়ার্কশিট দেওয়ার পরেও তা বন্ধ করে দেওয়া হল কেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতেই চাননি কলকাতা পুরসভার শিক্ষা দফতরের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ তথা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। তবে শিক্ষকদের অন্য কাজের দায়িত্ব সম্পর্কে তাঁর জবাব, “স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষকদের অন্য কাজে লাগানো হচ্ছে।’’