উৎসব: সেমিফাইনালের পরে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে নিকোলা ফাসিনো ও ফ্রান্সভক্তদের উল্লাস। ছবি সংগৃহীত।
ফরাসিতে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ কী করে বলে জানেন? আজ, রবিবারের বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে রসিকতায় মেতেছেন কলকাতার আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ-এর পড়ুয়ারা কয়েক জন।
‘মেসি বোকু’ মানে অজস্র ধন্যবাদ। নীল-সাদা জার্সির ‘এলএম টেন’ লিয়োনেল মেসির নামের সঙ্গে ফরাসির ‘মেসি’ (merci) বানানের ফারাক আছে। তবে কেউ ফরাসিতে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলে এখন লিও মেসিকে মনে পড়াই স্বাভাবিক। শহরে কিছুটা সংখ্যালঘু ফরাসি সমর্থকদের উদ্দেশে কলকাতার অত্যুৎসাহী আর্জেন্টিনা ভক্তদের টিপ্পনীও শোনা যাচ্ছে, এ বিশ্বকাপের পরে ফরাসিতে ‘মেসি বোকু’র মানেটাই পাল্টে যাবে! মেসিরা সেমিফাইনালের মতো ফাইনালে গোলের মালা পরালেও কি ফরাসিরা ‘মেসি বোকু’ বলবেন, তবে ঠিক ধন্যবাদ জানাতে নয়! এ সব শুনে খুব হাসছিলেন আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ডিরেক্টর নিকোলা ফাসিনো। তবে কলকাতায় ফ্রান্স পিছিয়ে বলে তিনি মোটেই মানতে চাইলেন না।
নিকোলা মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের কথা জানেন। বললেন, “যা বুঝেছি, কলকাতা যথার্থ ফুটবল-রসিক একটা শহর। এখানেও কত লোক এমবাপে বলতে অজ্ঞান! সেমিফাইনালে কলকাতার মধ্যরাতে আলিয়ঁসের বড় পর্দায় দেখছি, আমাদের গোলকিপার উগো লরিস মরক্কোর পর পর আক্রমণ রুখছেন, আর হলঘরে কত জন হাততালি দিচ্ছেন। খুব আবেগের মুহূর্ত সেটা। দেশের বাইরে আছি, মনেই হচ্ছিল না!”
কলকাতায় ফরাসি সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে এত দিন ফ্রান্সের ম্যাচগুলো অনেকে একসঙ্গে দেখেছেন। তবে আজ, রবিবার আলিয়ঁস ও কলকাতার ফরাসি কনসুলেটের কর্মী, পড়ুয়া, আধিকারিক তথা কলকাতার ফ্রান্সপ্রেমীরা একসঙ্গে পার্ক স্ট্রিটের একটি নাইট ক্লাবে ফাইনাল দেখবেন। মার্সেইয়ের ছেলে নিকোলা ছোটবেলায় জিদানকে দেখেছেন। কলকাতার বিশিষ্ট ফরাসিবিদ চিন্ময় গুহ আবার ওই দলের লিলিয়াম থুরামের পরিচিত। লিলিয়ামের ছেলে, ফ্রান্সের এই দলের ফরোয়ার্ড মার্কুসকেও ক’বছর আগে দেখেছেন চিন্ময়। বললেন, “ভারতীয় হিসেবে ফ্রান্সকে দেখলে আলাদা করে মনে হয়, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান! বাপ, ঠাকুরদা যেখানেই জন্মান, নীল জার্সিধারী টিমটায় সবাই ফরাসি। উদারতার এই বোধে ইউরোপে ওরা সব থেকে এগিয়ে। এটাই ফরাসি বিপ্লবের মূল্যবোধ।”
নিকোলা, চিন্ময়রা আশাবাদী হলেও ফাইনালের ফল নিয়ে গণনায় সাবধানি ফ্রান্সের কনসাল জেনারেল দিদিয়ে তলপ্যাঁ। এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে মিল রয়েছে কলকাতাবাসী আর্জেন্টাইন তরুণী রোক্সানা ঠাকুরের। ফাইনালে কে জিতবে? জিজ্ঞাসা করলে বলবেন, “দেখা যাক! জিতবই বলব না।” রোক্সানার বর চিরঞ্জীব ঠাকুর বললেন, “এটা ওর তুক বলতে পারেন! আর্জেন্টিনার ম্যাচ থাকলে কখনওই জিতব বলবে না। ও জিতব বললে নাকি আর্জেন্টিনা হেরে যায়!” ৩৬ বছর বাদে বিশ্বজয়ের হাতছানির মধ্যে রোক্সানা পাগলের মতো মিস করছেন বাবা ও ভাই মিগুয়েলকে। বাবাদের প্রজন্ম দিয়েগোয় মজে থাকলেও রোক্সানা কিন্তু মনে করেন, “মাঠ ও মাঠের বাইরের ব্যালান্সে এগিয়ে মেসিই! ফাইনালে যা-ই হোক, আমি বলব, মেসি এখনই সেরা!” রোজারিও, কোরিয়েন্তেস থেকে পাঠানো আত্মীয়দের ভিডিয়োতেই মজেআছেন কলকাতার আর্জেন্টিনীয় বধূ। বাড়িতে আর্জেন্টিনার সুরাও মজুত। টেনশনে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে টাইব্রেকারের সময়ে রান্নাঘরে বসেছিলেন রোক্সানা। বললেন, “পেনাল্টি নয়! ফাইনালটা তাড়াতাড়ি শেষ হোক! এটাই চাইছি!” যা-ই হোক, আনন্দ, বেদনায় এই মেয়ের পাশে থাকবে কলকাতাও।