প্রতীকী ছবি।
কলকাতা ও হাওড়ার রাস্তায় চলাচল করা ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি বাতিলের জন্য জাতীয় পরিবেশ আদালতে প্রস্তাবিত রূপরেখা জমা দিল রাজ্য পরিবহণ দফতর। যেখানে আগামী পাঁচ বছরে প্রায় ৩৫ হাজার পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ির পাশাপাশি দেড় হাজারেরও বেশি সরকারি গাড়ি, যেগুলি ১৫ বছর বা তার বেশি সময় অতিক্রম করেছে, সেগুলি বাতিল করার কথা বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পুরনো গাড়ি বাতিলের রূপরেখা তৈরির জন্য পরিবেশ আদালতের নির্দেশে বছর দুয়েক আগে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়েছিল রাজ্য সরকার। ঠিক হয়েছিল, সেই কমিটিই পুরনো গাড়ি বাতিলের বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সুপারিশ করবে।
বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, ধাপে ধাপে পুরনো গাড়ি বাতিলের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হবে। তার পরেও বৈধ শংসাপত্র না-থাকা ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি কলকাতা ও হাওড়ার রাস্তায় চলাচল করলে রাজ্য সরকার মোটা টাকা জরিমানা করতে পারবে। দূষণ ছড়ানোর কারণে জরিমানার অঙ্ক নির্ধারণ করবে সরকার।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দুই শহরে ডিজ়েল, পেট্রল ও অন্য জ্বালানিচালিত (সিএনজি, এলপিজি, ইলেক্ট্রিক) যাত্রিবাহী এবং ব্যক্তিগত গাড়ি-সহ নথিভুক্ত যানের সংখ্যা ২৩,৪২,৪৩২। যার মধ্যে যাত্রিবাহী নয় (নন-ট্রান্সপোর্ট), এমন গাড়ির সংখ্যা ২১,৯৫,৭৮৮ (৯৩.৭%) এবং বাণিজ্যিক যাত্রিবাহী গাড়ির (ট্রান্সপোর্ট) সংখ্যা ১,৪৬,৬৪৪ (৬.৩%)।
রিপোর্ট অনুযায়ী, পেট্রল এবং ডিজ়েলচালিত গাড়ির ৩.৫ শতাংশই শহরের যান-দূষণের নেপথ্যে রয়েছে। প্রতি এক হাজার গাড়ির মধ্যে ৬৮টি দশ বছরের পুরনো ডিজ়েলচালিত গাড়ি দূষণের জন্য দায়ী। অন্য দিকে, ১৫ বছরের পুরনো পেট্রলচালিত প্রতি এক হাজার গাড়ির মধ্যে ১০০টি গাড়ি যান-দূষণের কারণ।
ফলে নথিভুক্ত তালিকা থেকে এই সমস্ত পুরনো গাড়ি বাদ দেওয়া এবং সেগুলি বাজেয়াপ্ত করার জন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছে কমিটি। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী, পুরনো গাড়ির প্রকৃত সংখ্যা পেতে হলে যান নথিভুক্তকরণের তালিকা আপডেট করা দরকার। বৈধ শংসাপত্রহীন ১৫-২০ বছরের পুরনো গাড়ির মালিকের নাম ও গাড়ির নম্বর উল্লেখ করা হবে সংবাদপত্র, রাজ্য পরিবহণ ও পরিবেশ দফতর, রাজ্য পুলিশ এবং কলকাতা পুলিশের ওয়েবসাইটে। আগামী তিন মাসের মধ্যে ওই মালিকদের সংশ্লিষ্ট আরটিও-তে হাজির হয়ে পুরনো গাড়ি বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে।
একই ভাবে আগামী তিন মাসের মধ্যে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুরনো গাড়িমালিকদের বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করার কথাও বলা হয়েছে। যাতে তাঁরা নিজেদের পুরনো গাড়ির শংসাপত্র (ভিন্টেজ কার ব্যতীত) জমা দিয়ে পুরো প্রক্রিয়া সম্পাদনে সাহায্য করেন। তবে এই সুপারিশ কতটা কার্যকর হবে, সে ব্যাপারে সংশয়ী পরিবেশকর্মীদের একাংশ। এক পরিবহণ বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘২০০৮ সালে কলকাতা হাইকোর্ট পুরনো গাড়ি বাতিলের কথা বলেছিল। তার পরে ১৩ বছর কেটে গিয়েছে। এখনও বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি।’’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘বছরের পর বছর শুধু নির্দেশিকা জারি করা ছাড়া এ বিষয়ে তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করা হয়নি। এ বার যে রূপরেখার কথা বলা হয়েছে, তা সুদূরপ্রসারী।’’