জলমগ্ন: এ ভাবে জমা জল ঠেলেই চলছে যাতায়াত। বালিটিকুরির নতুন পল্লিতে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
আমপান হওয়ার পরে জমা জল নামতে লেগেছিল এক মাস। তার ঠিক পরেই এসে গিয়েছে বর্ষা। এ বার রোজই জমা জলের পরিমাণ বেড়ে চলেছে এলাকায়। রাস্তায় জমে রয়েছে পাঁক মেশা কালো জল। দীর্ঘদিন ধরে সেই কালো জল জমে থাকায় এলাকায় দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে গিয়েছে। পচা জল ঘেঁটে যাতায়াত করতে করতে চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বৃষ্টি হলেই জল জমবে। আর বর্ষার সময়ে সেই জল নামতে সময় লাগে অন্তত চার মাস। গত কয়েক বছর ধরে হাওড়ার দাশনগর এলাকার বালিটিকুরি কালীতলার নতুন মন্দির সংলগ্ন বাসিন্দাদের যেন এটাই ভবিতব্য।
হাওড়া পুরসভার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের অর্ন্তভুক্ত ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, অলিগলিতে সর্বত্রই দাঁড়িয়ে রয়েছে পাঁচ থেকে ছ’ইঞ্চি পাঁক জল। সেই জল ঢুকে গিয়েছে বিভিন্ন বাড়ির উঠোনেও। এলাকার বাসিন্দারা জানান, তাঁরা হাওড়ার পুর কমিশনারকে চিঠি দিয়েছেন দফায় দফায়। কয়েক দিন বড় নিকাশি নালা থেকে পাঁক তোলার কাজও হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, অবস্থার হেরফের হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন হাজরা বলেন, ‘‘এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা পুরো ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। পুরসভাকে বারবার জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। এই বিষাক্ত জলের মধ্যেই আমাদের বসবাস করতে হচ্ছে।’’
বাসিন্দাদের অভিযোগ, হাওড়া পুরসভায় যখন থেকে প্রশাসক বসানো হয়েছে, তার পর থেকেই আর এলাকায় নিকাশির সংস্কার হয়নি। ঘনবসতিপূর্ণ ওই এলাকা দিয়ে গিয়েছে আট ফুট গভীর ও দশ ফুট চওড়া একটি নিকাশি নালা। প্রায় সাত কিলোমিটার লম্বা ওই নালা দিয়ে ৭, ৮, ৯, ২২, ৪৯ এবং ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাশির জল যায়। দাশনগর রেল সেতুর পাশের ঝিল থেকে শুরু হয়ে নালাটি মিশেছে হাওড়ার মূল নিকাশি নালা পচাখালের সঙ্গে। সেই খাল নাজিরগঞ্জের কাছে গঙ্গায় মিশেছে। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই নালা থেকে বছরের পর বছর পলি না-তোলায় সেটির গভীরতা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র এক ফুটে। এখন ছ’টি ওয়ার্ডের নিকাশির জল বহন করার ক্ষমতা নেই নালাটির। সামান্য বৃষ্টিতেই নালা উপচে ভেসে যাচ্ছে এলাকা।
স্থানীয় বাসিন্দা মিলন দেয়াশী বলেন, ‘‘গত বছর তৎকালীন পুর কমিশনার জানিয়েছিলেন, প্রায় বুজে যাওয়া ওই নিকাশি নালা থেকে পাঁক তুলে ফেলা হবে। সেখানে আবর্জনা যাতে না-পড়ে, তার জন্য নালার উপরে তারের জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়ার কথাও হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ আজও হয়নি।’’ এই বর্ষাতেও তাই এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের ভোগান্তি কমেনি। এলাকার বাসিন্দা, প্রবীণ চিকিৎসক মনোরঞ্জন দেয়াশী বলেন, ‘‘বিষাক্ত জমা জল থেকে চর্মরোগ বাড়ছে। পানীয় জল দূষিত হয়ে ব্যাপক ভাবে আন্ত্রিকও ছড়াতে পারে। আমি পুরসভাকে বারবার চিঠি দিয়েছি কিন্তু কোনও পদক্ষেপ আজ পর্যন্ত করা হয়নি।’’
এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর ত্রিলোকেশ মণ্ডলের দাবি, ‘‘জমা জলের সমস্যা থাকলেও পলি তোলার কাজ পুরসভা করেছে। কিছু মানুষ অকারণে বিরোধিতা করছেন।’’ বাসিন্দাদের অবশ্য দাবি, হাওড়া পুরসভায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে নির্বাচিত বোর্ড না-থাকার ফলে পুর পরিষেবার মান যে তলানিতে পৌঁছেছে, তাঁদের এলাকার পরিস্থিতিই তার প্রমাণ। হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ওই এলাকায় নিকাশির কাজ চলছে। নর্দমা থেকে পলি তোলা হয়েছে বলে আমি জানি। কেন জল জমে আছে, খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’