নাছোড়: গরমের মধ্যে টানা আন্দোলন মঞ্চে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এক চাকরিপ্রার্থী। সোমবার, ধর্মতলায়। ছবি: সুমন বল্লভ
এক দিকে রাস্তার পিচ থেকে ওঠা আগুনের হলকা, অন্য দিকে মাথার উপরে থাকা পলিথিনের ছাউনি ভেদ করে রোদের তীব্র তাপ। দুইয়ে মিলে রাস্তার ধারে ফুটপাতে বসে আক্ষরিক অর্থেই দগ্ধ হচ্ছিলেন ওঁরা। সোমবার দুপুর ১টায় ধর্মতলার গান্ধী মূর্তির পাদদেশে বসে থাকা এসএসসি পাশ নবম থেকে দ্বাদশের মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত চাকরিপ্রার্থীদের গরম মোকাবিলা করার জন্য ভরসা বলতে শুধু হাতপাখা। কিন্তু ৪০ ডিগ্রি গরম কি হাতপাখায় মানে? অগত্যা তীব্র দহনজ্বালায় পুড়ছেন তাঁরা।
ধর্নামঞ্চের চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, এই গরমে তাঁদের মধ্যে কেউ না কেউ প্রতিদিনই অসুস্থ হচ্ছেন। বিশেষত, যাঁরা রোজা রেখেছেন তাঁদের অবস্থা সব চেয়ে খারাপ। কাউকে কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে। কেউ কেউ বাড়ি চলে যাচ্ছেন। কিন্তু সকলেই সমস্বরে জানালেন, বিক্ষোভ-মঞ্চে জায়গা ফাঁকা থাকছে না। কারণ, নতুন কেউ তাঁদের সমর্থনে চলে আসছেন এই মঞ্চে। এক চাকরিপ্রার্থী মিঠুন মণ্ডল বলেন, ‘‘যতই গা-জ্বালানো গরম পড়ুক না কেন, দাবি পূরণ হওয়া পর্যন্ত আমরা নড়ব না। এক জন অসুস্থ হয়ে বাড়ি কিংবা হাসপাতালে যাবেন, কিন্তু ফাঁকা থাকবে না মঞ্চ। আরও পাঁচ জন এখানে আসবেন। সোমবারের এই তীব্র গরমেও আমরা ৬০ জনের মতো ধর্নামঞ্চে আছি।’’
গরমে রাস্তার পিচ গলে গেলেও দাবি আদায়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাহুল দাস, শুভদীপ মান্না, টুসি সাহারা। রাহুল বলেন, ‘‘গান্ধী মূর্তির পাদদেশে আমাদের ১৯০ দিন হয়ে গেল। পুরসভা জলের ব্যবস্থা করলেও এত জনের জন্য তা পর্যাপ্ত নয়। জল কিনে খাওয়ার মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। তবু সেটাও করতে হচ্ছে। কেউ কেউ জলের বোতল দিয়ে যাচ্ছেন।’’ আর এক চাকরিপ্রার্থী শুভদীপের কথায়, ‘‘আমাদের এই মঞ্চ অরাজনৈতিক মঞ্চ। তা সত্ত্বেও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বহু লোক এসেছেন। আমাদের সমর্থনে কথা বলেছেন। আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চাইছি। ওঁকে আমাদের দাবির কথা জানাতে চাই। আসা-যাওয়ার পথেও যদি মুখ্যমন্ত্রী অন্তত এক বার আমাদের দেখে যেতেন, মনে বল পেতাম। ২০১৯ সালে আমাদের অনশন মঞ্চে তো উনি এসেছিলেন। আমাদের নিয়োগের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন।’’
মিঠুন জানান, মুখ্যমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ার প্রতিবাদে আগামী ২৯ এপ্রিল মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত সব প্রার্থীর চাকরির দাবিতে শহরে মহামিছিল করবেন তাঁরা। ধর্নামঞ্চে বসে থাকা রাহুল বলেন, ‘‘আমাদের যে সহযোদ্ধারা রোজা রেখেছেন, গরমে সব চেয়ে কষ্ট পাচ্ছেন তাঁরা। আবু নাসের ঘরামি, রিজিয়া সুলতানা, সালেহা পরভিনরা দিনভর উপোস করে আছেন। তা করতে গিয়ে তাঁরা অসুস্থ বোধ করছেন। কিন্তু আন্দোলনের পথ ছাড়েননি। হয়তো একটু বেশি অসুস্থ হলে বাড়ি চলে যাচ্ছেন। কিন্তু দু’-এক দিনের মধ্যেই ফের চলে আসছেন ধর্নামঞ্চে।’’
এই মঞ্চেই টানা এত দিন ছিলেন ক্যানসার আক্রান্ত চাকরিপ্রার্থী সোমা দাস। সম্প্রতি শরীর খারাপ হওয়ায় তিনি বীরভূমের নলহাটির আশ্রমপাড়ায় বাড়িতে চলে গিয়েছেন। সেখান থেকেই ফোনে সোমা বললেন, ‘‘তীব্র গরমে ওখানে অসুস্থ হয়ে পড়ছিলাম। এই অসুখের জন্য আমাকে ডাক্তারের বেঁধে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী খেতে হয়। ওখানে ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া হত না। তাই কয়েক দিনের জন্য বাড়ি এসেছি। শরীর একটু ঠিক হলেই আবার ওই ধর্নামঞ্চে ফিরে যাব। এই আন্দোলন থামবে না।’’