২০১৫ সালের বই মেলা। —ফাইল চিত্র।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এক বছর বন্ধ থাকার পরে ২০২২ সালে আবার ফিরছে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মেলা চলবে ১৪ দিন। কিন্তু ফের যাবতীয় ব্যবস্থাবিধি করা হলেও বইমেলা কি তার স্বমহিমায় ফিরতে পারবে? না কি করোনাকালে বিধিনিষেধ মেনে আয়োজন করতে গিয়ে বইমেলা হারাবে তার চিরাচরিত জৌলুস? করোনাকালের এই বইমেলায় কি সকলেরই প্রবেশাধিকার থাকবে, না কি সেখানেও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে? এমন নানা প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বইপ্রেমীদের মনে।
বইমেলার আয়োজক পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “৩১ জানুয়ারি বইমেলা হওয়ায় আমরা সবাই খুশি। তবে সব দিক খতিয়ে দেখেই বইমেলার আয়োজন করতে হবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
আগামী বছর ৩১ জানুয়ারি থেকে বইমেলা শুরু হওয়ার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি সেই ঘোষণার পর থেকেই উচ্ছ্বসিত প্রকাশক ও বইপ্রেমীরা। প্রকাশকদের একাংশের মতে, গত বছর থেকে অফলাইনে বই কেনাবেচা কার্যত তলানিতে এসে ঠেকেছে। সেই সঙ্গে বইমেলাও আয়োজিত হয়নি। তাই আর মাত্র দু’মাসের মধ্যে বইমেলা আয়োজিত হতে চলেছে, এ কথা জেনে তাঁরাও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
তবে বইমেলার ভিড় সামলাতে করোনা-বিধি যে মানতেই হবে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত প্রকাশকেরা। মেলার প্রতিটি প্রবেশপথে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা ও জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা থাকবে, তা-ও নিশ্চিত। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নেওয়া আছে কি না, শুধু তা দেখেই কি মেলায় প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে? না কি প্রবেশ অবাধ হবে অন্যান্য বছরের মতো? বইমেলায় আগত সকলের দু’টি ডোজ় নেওয়া আছে কি না, তা পরীক্ষা করাই বা কী ভাবে সম্ভব?
গিল্ডের এক কর্তার কথায়, ‘‘দুর্গাপুজোর আগে একটি জনস্বার্থ মামলায় হাই কোর্ট রায় দিয়েছিল, কোনও মণ্ডপে ঢোকা যাবে না। বইমেলার কিছু দিন আগে যদি এমন কোনও রায় বেরোয় যে, স্টলে ঢোকা যাবে না, দোকানে বাইরে থেকে দেখে যে ভাবে বই কেনা হয় সে ভাবেই বই কিনতে হবে, তা হলে আবার সেই ভাবে স্টল সাজাতে হবে। শেষ মুহূর্তে স্টলের পরিবর্তন করতে গিয়েও বিপত্তি হতে পারে।’’ করোনাকালে এক-একটি স্টল কতটা বড় রাখতে হবে, সেটাও চিন্তায় রাখছে প্রকাশকদের।
বইমেলায় খাবারের স্টলের সংখ্যা এবং সেগুলি কী ভাবে থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। স্বাস্থ্য-বিধি মেনে খাবারের স্টলগুলির মধ্যে কতটা দূরত্ব থাকতে হবে, সেটাও ভাবাচ্ছে আয়োজকদের। বইমেলার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ লিটল ম্যাগাজিনের স্টলগুলি প্রতি বারই থাকে গা- ঘেঁষাঘেঁষি করে। এ বার করোনা-বিধি মানতে গেলে সেই স্টলগুলিকেই বা কেমন ভাবে রাখতে হবে, সেই প্রসঙ্গও ভাবাচ্ছে আয়োজকদের।
চিন্তা থাকছে বইয়ের স্টলের সংখ্যা নিয়েও। আগামী বইমেলার থিম কান্ট্রি বাংলাদেশ। গিল্ড জানাচ্ছে, আগেই ঠিক ছিল, ২০২০ সালের বইমেলার চেয়ে বেশি দেশ ২০২১ সালে অংশ নেবে না। কিন্তু করোনার কারণে শেষ পর্যন্ত সেই বইমেলা বাতিল হয়। তাই ২০২২-এ কতগুলি দেশ আসতে পারবে, তা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে। গিল্ডের সভাপতি সুধাংশুশেখর দে বলেন, “সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। কত দিন মেলা চলবে, তা নিয়েও কথাবার্তা চলছে। প্রথমে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বইমেলা করার কথা বলা হলেও চেষ্টা করা হচ্ছে সেটা বাড়িয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করার। দিনের সংখ্যা বাড়লে মানুষ আরও ফাঁকায় ফাঁকায় মেলায় ঘুরতে পারবেন।”