অ্যালেন পার্ক ও সংলগ্ন এলাকায়। নিজস্ব চিত্র।
ডিসেম্বরের শেষেই পার্ক স্ট্রিটে শুরু হবে সরকারি কার্নিভাল। ঝলমলে আলোয় সেজে ওঠা রাস্তায় পালিত হবে বড়দিন এবং বর্ষবরণের উৎসব। ফুটপাতের সাজ মনে করাবে বিদেশি শহরকে। তা সত্ত্বেও অনেকে মজা করে বলেন, আকাশের দিকে তাকালেই যে তারের জঙ্গলে বাধা পায় দৃষ্টিপথ, সেটাই মনে করিয়ে দেয়, আসলে শহরটা কলকাতা।
কার্নিভালের আগেই রয়েছে পুর নির্বাচন। কিন্তু পার্ক স্ট্রিটের যে অ্যালেন পার্কে প্রতি বছর সরকারি কার্নিভালের সূচনা হয়, সেখানে দাঁড়িয়ে দেখা গেল, তারের জঙ্গলে ছেয়ে রয়েছে গোটা এলাকা। রাস্তার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত মাকড়সার জালের মতো তারের উপরে তার ঝুলে রয়েছে। শহরের উপর দিয়ে গত কয়েক বছরে ফণী, বুলবুল, আমপান, ইয়াসের মতো ঘূর্ণিঝড় বয়ে গিয়েছে। কিন্তু শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে তারের জঙ্গলের ঘনত্ব কমেনি বলেই অভিযোগ শহরবাসীর। লালবাজারের হিসাব বলছে, সব ক’টি ঘূর্ণিঝড়েই তারের জঙ্গল নাগরিক জীবনকে ব্যাহত করেছে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ৪২ জনের মৃত্যুর কারণ এই তারের জঙ্গল।
দৃশ্যদূষণ তো বটেই, সেই সঙ্গে মানুষের মৃত্যুফাঁদ হয়ে ঝুলতে থাকা তারের জঙ্গল কত দিনে সরবে, তা নিয়ে পুর নির্বাচনের আগে কোনও আশার কথা শোনাতে পারেনি কলকাতা পুরসভা। পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর বিদায়ী প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের অবশ্য দাবি, তৃণমূল নতুন কলকাতা পুর বোর্ড তৈরির পরে শহরকে তারের জঙ্গলমুক্ত করতে বিশেষ ভাবে নজর দেবে। ফিরহাদ বলেন, ‘‘অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবস্থা করাটাই আমাদের লক্ষ্য। যেখানে মাটির নীচ দিয়ে তার নিয়ে যাওয়া যাবে না, সেখানে ট্রে-র মধ্যে তার পুরে দেওয়া হবে। কিন্তু তারের জঙ্গল সরানো হবেই। আমরা বার বার বলা সত্ত্বেও এখনও ব্যবসায়ীরা বহু জায়গাতেই সহযোগিতা করছেন না। অকেজো তারের জঙ্গলে শহর ভরিয়ে রেখেছেন।’’
যদিও শহরের কেব্ল ব্যবসায়ীদের দাবি, অকেজো তার কেটে ফেলা হচ্ছে। তারের জঙ্গল একসঙ্গে গোছা পাকিয়ে ‘ড্রেজ়িং’ করার কাজ চলছে অনেক জায়গাতেই।
কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর বিদায়ী সদস্য দেবাশিস কুমারের কথায়, ‘‘মাটির নীচ দিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে শহরে। মাটির নীচে জলের লাইন, বিদ্যুতের লাইন বাঁচিয়ে কাজ করতে হয়। তাই সেই কাজ অত্যন্ত সাবধানে, সময় নিয়েই করতে হবে।’’
শহরের কেব্ল অপারেটরেরা জানাচ্ছেন, অপটিক্যাল ফাইবারের কাজ খরচসাপেক্ষ। বর্তমানে কালীঘাট থেকে রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত ২.২ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ওই কাজ চলছে। দেড় কিলোমিটারের বেশি রাস্তার কাজ ইতিমধ্যেই শেষ। তাঁরা জানান, এর পরে টালিগঞ্জ থেকে শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড় পর্যন্ত তারের জঙ্গল অপসারণের একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা চলছে। সেই কারণে ইন্টারনেট ও বিভিন্ন ব্রডব্যান্ড পরিষেবা সংস্থাগুলিকেও বলা হয়েছে নিজেদের কার্যকর তারগুলিকে চিহ্নিত করতে। আলিপুরে সার্ভে বিল্ডিংয়ের কাছে মাথার উপরে ঝোলা কিছু তারে বিভিন্ন রঙের ট্যাগ ঝুলতেও দেখা গিয়েছে।
কেব্ল ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘অল বেঙ্গল কেব্ল অ্যান্ড ব্রডব্যান্ড অপারেটর্স ইউনাইটেড ফোরাম’-এর যুগ্ম সম্পাদক তাপসকুমার দাস বলেন, ‘‘আমরা পুরসভার সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কাজ করছি। রুবি থেকে গড়িয়াহাট উড়ালপুল পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে এখন আর কোথাও তারের জঙ্গল নেই। ড্রেজ়িংয়ের মাধ্যমে তার গোছা করে সুন্দর ভাবে উপরে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরাও চাই, তারের জঙ্গল থেকে মুক্ত হোক শহর। কিন্তু কিছু সময়ের প্রয়োজন।’’