শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর ধারাবাহিক হামলার ঘটনায় ভারতে রাজনৈতিক ভাবে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা রাজ্য বিজেপির ‘অন্যতম মুখ’ শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর ওই প্রতিবাদের জেরে বাংলাদেশের মৌলবাদী শক্তি তাঁকে হত্যার ছক কষেছে বলে খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে অমিত শাহের অধীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। চলতি সপ্তাহে অমিতের মন্ত্রক থেকে শুভেন্দুর উপর হামলার আশঙ্কার কথা জানানো হয় বিরোধী দলনেতার দফতরে। পাশাপাশিই, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরকেও বিষয়টি বিস্তারিত জানানো হয়েছে। নবান্নের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বিরোধী দলনেতার উপর হামলার আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও (মমতার হাতেই রাজ্যের পুলিশ এবং স্বরাষ্ট্র দফতর রয়েছে)। তার পরে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করেই শুভেন্দু নিরাপত্তা ঢেলে সাজার কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
এমনিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জেড প্লাস’ পর্যায়ের নিরাপত্তা পান শুভেন্দু। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই নিরাপত্তায় বদল আনা হচ্ছে বলেই মন্ত্রক সূত্রের খবর। শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, নতুন নিরাপত্তা অনুযায়ী বিরোধী দলনেতার কনভয়ের জন্য মোতায়েন করা হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনীর ২২ জন জওয়ানকে। শুভেন্দুর নিরাপত্তায় প্রয়োজনে মহিলা নিরাপত্তারক্ষী ব্যবহার করা নিয়েও ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। রাজ্যের যে কোনও সীমান্তবর্তী এলাকায় বিরোধী দলনেতা কর্মসূচিতে গেলে তাঁকে দেওয়া হতে পারে বুলেট নিরোধক গাড়ি। শুভেন্দুর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে রাজ্যের কিছু ‘স্পর্শকাতর’ এলাকা চিহ্নিতও করা রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর। সে ক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেই শুভেন্দুর নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করছে অমিতের মন্ত্রক।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, এ বার থেকে বিরোধী দলনেতা রাজ্যের যেখানেই কর্মসূচিতে যাবেন, সেখানকার স্থানীয় তথ্য রাজ্য প্রশাসনের কাছ থেকে জানবে শাহের মন্ত্রক। অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রয়োজন হলে তা মোতায়েন করবে রাজ্য পুলিশ। নবান্নের একটি সূত্রের বক্তব্য, এ বিষয়ে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিকদের। কোনও কর্মসূচিতে অনেকে বিরোধী দলনেতার সঙ্গে ছবি তুলতে আসেন। বহু ক্ষেত্রে শুভেন্দুর দেহরক্ষীরা তাঁদের বিনা বাধায় ছবি তুলতে দেন। কিন্তু এর পর কেউ বিরোধী দলনেতার সঙ্গে ছবি তুলতে চাইলে আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তল্লাশি করে দেখবেন দেহরক্ষীরা। তাঁরা নিশ্চিত হলে তবেই বিরোধী দলনেতার সঙ্গে ছবি তোলা যাবে।
রাজ্য প্রশাসনের এক অধিকারিকের কথায়, ‘‘রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে, বিরোধী দলনেতার সুরক্ষা তথা নিরাপত্তা দিতে যে যে সহযোগিতা কেন্দ্রীয় সরকার চাইবে, তা রাজ্য দেবে।’’ বস্তুত, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর বিভিন্ন অত্যাচারের পশ্চিমবঙ্গে শুভেন্দু যে ভাবে সরব হয়েছেন, তার প্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতার ওপর বাংলাদেশি মৌলবাদী আততায়ীরা হামলা চালালে পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর তার প্রভাব পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই শুভেন্দুর নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে যে কোনও ধরনের ‘অপ্রীতিকর’ পরিস্থিতি এড়াতে চাইছে রাজ্য সরকারও। সেই কারণেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে এগোতে চাইছে নবান্ন। শুভেন্দুর সঙ্গেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ আধিকারিকেরা এ বিষয়ে কথা বলেছেন বলে বিজেপি পরিষদীয় দল সূত্রের খবর। শুভেন্দু অবশ্য বলছেন, ‘‘নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় আমার উপর হামলা হয়েছে। গত কয়েক বছরেও হামলার চেষ্টা হয়েছে। তবু সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়া ছাড়িনি। ছাড়বও না। কারণ, মানুষের জন্য রাজনীতি করেই আমার এই পর্যন্ত আসা। কে কী হামলার ছক কষছে, তা নিয়ে আমার কিছু যায়-আসে না।’’