Death

Death: প্রসূতি-মৃত্যুর হার কমাতে প্রসবোত্তর বিশেষ নজরদারি

প্রসবকালীন মৃত্যুর হার বা ‘এমএমআর’ (ম্যাটারনাল মর্টালিটি রেশিয়ো) দেশের সামগ্রিক হারের থেকেও এই রাজ্যে বেশি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২২ ০৬:০৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

প্রসবের পরবর্তী সময়ে প্রসূতিদের বড় অংশের মৃত্যুর সরকারি তথ্য উঠে এসেছে স্বাস্থ্য দফতরের সামনে। রাজ্যে প্রসবকালীন মৃত্যুর হার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, স্বাভাবিক প্রসব ও সিজ়ার, দুই ক্ষেত্রেই প্রসবের পরে মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, আচমকা উচ্চ রক্তচাপ এবং সেপসিসের কারণে মারা যাচ্ছেন সদ্য সন্তানের জন্ম দেওয়া মা। তাই চিন্তিত স্বাস্থ্য দফতর এ বার সরকারি হাসপাতালে প্রসবের পরে অন্তত ১২ ঘণ্টা প্রসূতির অবস্থার উপরে বিশেষ নজর দিতে চাইছে।

Advertisement

মঙ্গলবার এমনই নির্দেশিকা জারি করেছে তারা। তাতে জানানো হয়েছে, অবিলম্বে রাজ্যের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ, জেলা, মহকুমা ও স্টেট জেনারেল হাসপাতাল এবং সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে প্রসবোত্তর বিশেষ নজরদারি চালু করতে হবে। তার জন্য ওই সব হাসপাতালের ‘পোস্টপার্টাম’ ওয়ার্ডের (সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে মাকে যেখানে রাখা হয়) মধ্যেই চালু হচ্ছে প্রসবোত্তর নজরদারি ও পরিচর্যার জন্য বিশেষ ইউনিট। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের সই করা ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বিশেষ পোস্টপার্টাম কেয়ার ইউনিটের দায়িত্বে রাখতে হবে স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক ও প্রসব সংক্রান্ত বিষয়ে অভিজ্ঞ নার্সদের। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে থাকা এমন আট জন নার্সকে নিয়ে একটি ‘পুল’ তৈরি করতে হবে। সেখান থেকে দিনে তিনটি শিফটে দু’জন করে নার্স শুধুমাত্র প্রসবোত্তর মায়ের নজরদারি ও পরিচর্যার দায়িত্বে থাকবেন।

নির্দেশিকায় আরও জানানো হয়েছে, মেডিক্যাল কলেজ, জেলা বা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের মতো চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে প্রসবোত্তর নজরদারির জন্য পৃথক পোস্টপার্টাম কেয়ার ইউনিটের ব্যবস্থা করতে হবে। বাকি হাসপাতালে বিশেষ নজরদারির জন্য সাধারণ পোস্টপার্টাম ওয়ার্ডেই একটি জায়গা নির্দিষ্ট করতে হবে। তবে সেটি অবশ্যই নার্সদের বসার জায়গার কাছে হতে হবে। যাতে সহজেই নজরদারি চালানো যায়। প্রসবের পরের ১২ ঘণ্টার প্রতিটি মুহূর্তে প্রসূতির শারীরিক অবস্থার মাপকাঠি নথিভুক্ত করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যদি কোনও সমস্যা দেখা যায়, তা তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকদের জানাতে হবে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘‘মাতৃ-মৃত্যুর হার যাতে আরও কমানো যায়, তার জন্যই এই বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’

Advertisement

প্রসবকালীন মৃত্যুর হার বা ‘এমএমআর’ (ম্যাটারনাল মর্টালিটি রেশিয়ো) দেশের সামগ্রিক হারের থেকেও এই রাজ্যে বেশি। কয়েক মাস আগে কেন্দ্রের ‘এসআরএস’-রিপোর্টে এমন পরিসংখ্যান উঠে আসার পরে নড়ে বসে স্বাস্থ্য দফতর। ওই সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০১৭-’১৯ সালে গোটা দেশে এক লক্ষ প্রসবের নিরিখে ‘এমএমআর’ ছিল ১০৩ (২০১৬-’১৮-তে ছিল ১১৩)। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে ‘এমএমআর’ ১০৯।

এই মৃত্যুর হার কী ভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে বার বার বৈঠক করে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত হয়। যেমন, অযথা সিজ়ার না করে স্বাভাবিক প্রসবে জোর দেওয়া, মাতৃযানের সংখ্যা বৃদ্ধি, অযৌক্তিক ভাবে এবং দেরিতে করা রেফার বন্ধ, প্রসূতিদের নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা, গোটা বিষয়ের নজরদারিতে বিশেষ কমিটি গঠন, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে দৈনিক প্রসূতি মৃত্যুর কারণ স্বাস্থ্য ভবনের কাছে কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা করা প্রমুখ। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘প্রসবকালীন মৃত্যু কমাতে ধারাবাহিক পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তার জেরে এখন প্রসূতি মৃত্যুর হার কমেছে। তবে সেটি আরও কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement