বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে বড় স্ক্রিন ও জাতীয় পতাকায় সেজে উঠেছে শহরের একটি শপিং মল। শনিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
কোথাও শপিং মলের ভিতরে স্টেডিয়ামের মতো করে সাজানো হয়েছে! বড় পর্দায় ফাইনাল খেলা দেখানোর পাশাপাশি থাকছে, চার-ছয় মারা হলে স্টেডিয়ামের মতো ঢাক বাজানোর ব্যবস্থা। কোথাও আবার পাড়ার ক্লাব বা আবাসন কমিটির তরফেই একসঙ্গে বসে খেলা দেখার জন্য করা হয়েছে বড় স্ক্রিনের আয়োজন। এক জায়গায় দেখা
গেল, ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের কামনায় যজ্ঞ চলছে ফাইনালের আগের দিন। আজ, রবিবার, বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে উন্মাদনায় কার্যত ফুটছে গোটা কলকাতা শহর।
গ্রুপ লিগের সমস্ত ম্যাচে এবং সেমিফাইনালে অপরাজিত ভারত ফাইনালে ওঠায় উত্তেজনায় কাঁপছে গোটা দেশ। পিছিয়ে নেই কলকাতাও। সেমিফাইনালের আগে উচ্ছ্বাসের যে ঢেউ শহরকে আন্দোলিত করেছিল, ফাইনালের আগে তা যেন কার্যত সুনামিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মহারণ দেখার জন্য ভিড় টানতে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি শপিং মলে এলাহি ব্যবস্থা করেছেন কর্তৃপক্ষ। বড় স্ক্রিনে খেলা দেখানোর ব্যবস্থা থাকছে সেখানে। এ ছাড়া, স্টেডিয়ামের আবহ তৈরি করতে গোটা শপিং মলকে ভারতের পতাকা দিয়ে সাজানো হয়েছে। থাকছে ঢাকের ব্যবস্থাও। ওই শপিং মলে যাঁরা খেলা দেখতে যাবেন, তাঁদের সকলের হাতে ছোট একটি জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়া হবে। তাঁদের মুখে রং দিয়ে আঁকানোর ব্যবস্থাও থাকছে। ম্যাচের জন্য শনিবার থেকেই গোটা মল সাজানোর কাজ চলছে সেখানে। ওই শপিং মলের ম্যানেজার দীপ বিশ্বাস বললেন, ‘‘অনেকে ইচ্ছে থাকলেও স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখতে পারবেন না। তাই আমরা শপিং মলের ভিতরটাকে স্টেডিয়ামের রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছি।’’
বড় স্ক্রিনে খেলা দেখানোর পাশাপাশি সেখানকার রেস্তরাঁ ও পানশালাগুলিতে ম্যাচ চলাকালীন নানা রকম অফার থাকছে কসবার একটি শপিং মলে। বিশ্বকাপ ফাইনালের জন্য সেই মল-ও সেজে উঠেছে। ওই শপিং মলের অন্যতম কর্তা কে বিজয়ন বললেন, ‘‘এত বছর অপেক্ষার পরে দেশ আবার বিশ্বকাপের ফাইনালে। সকলেই যাতে সেই খেলা উপভোগ করতে পারেন, তার ব্যবস্থা করছি। কোনও খামতি রাখা হচ্ছে না।’’ ফুড কোর্টে বড় টিভি থাকছে পার্ক সার্কাস সংলগ্ন একটি শপিং মলেও।
শুধু শপিং মল নয়, শহরের একাধিক রেস্তরাঁতেও থাকছে ম্যাচ ঘিরে বিশেষ ব্যবস্থা। ওয়াটারলু স্ট্রিটের একটি রেস্তরাঁয় বড় স্ক্রিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকি, ভারতের মারা প্রতিটি ছক্কার উপরে থাকছে পানীয়ে বিশেষ ছাড়। পার্ক স্ট্রিট, ই এম বাইপাস, উল্টোডাঙা, চাঁদনি চকের বহু রেস্তরাঁ ও পানশালাতেও থাকছে নানা ধরনের আকর্ষণ। ‘ইস্টার্ন ইন্ডিয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্তরাঁ অ্যাসোসিয়েশন’-৮এর প্রেসিডেন্ট সুদেশ পোদ্দার বললেন, ‘‘আমাদের রেস্তরাঁ ও পানশালাগুলিতে এসে কেউ যাতে খেলা দেখা থেকে বঞ্চিত না হন এবং জমিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে পারেন, তার জন্য আমরা সব রকম ব্যবস্থা করছি।’’
রেস্তরাঁ ও শপিং মলের পাশাপাশি শহরের একাধিক জায়গায় থাকছে বড় স্ক্রিনে খেলা দেখানোর আয়োজন। দক্ষিণ কলকাতার কড়েয়া, যাদবপুর এবং উত্তর কলকাতার একাধিক জায়গায় থাকছে এই ব্যবস্থা। বাইপাসের একাধিক আবাসন কমিটির তরফেও বড় স্ক্রিনে খেলা দেখানোর তোড়জোড় চলছে এ দিন থেকে।
এ দিকে, ফাইনালের এক দিন আগে, টিম ইন্ডিয়ার বিজয় কামনায় যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছিল পাটুলির কেএমডিএ বাজারে। বাজার সমিতির পক্ষ থেকে এ দিন দুপুরে ভারতীয় ক্রিকেটারদের ছবি টাঙিয়ে দীর্ঘক্ষণ যজ্ঞ চলে। অন্যতম উদ্যোক্তা পলাশ হালদারের কথায়, ‘‘২০ বছর আগে এই অস্ট্রেলিয়ার কাছেই ফাইনালে হারের স্মৃতি এখনও টাটকা। এ বারও যাতে তার পুনরাবৃত্তি না হয়, তাই যজ্ঞ করছি। আশা করি, এ বার আর হতাশ হব না।’’