COVID19

ওষুধের ব্যাগে ভরা ‘উচ্ছে-বেগুন-পটল-মুলো’, করোনা আক্রান্তদের কাছে 'নাথ' কলকাতার সোমনাথ

হাতে টাকা থাকলেও যে অনেকের পক্ষে শারীরিক কারণে এবং করোনা বিধিনিষেধের জেরে বাজার যাওয়াই সম্ভব নয়। এটা বুঝেই এই পরিষেবা। জানিয়েছেন সোমনাথ।

Advertisement

পিনাকপাণি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ১৪:২৯
Share:

করোনা সংক্রমণের গোড়া থেকেই সক্রিয় সোমা‌নাথ ঘোষ।

প্রেসক্রিপশন দেখেই বোঝা যাচ্ছে রোগী করোনা আক্রান্ত। কিন্তু যতদূর জানা রয়েছে, ওই রোগীর তো বয়স হয়েছে আর বাড়িতে একাই থাকেন। তা হলে শুধু তো ওষুধ নয়, পথ্যও দরকার হতে পারে। এটা ভেবেই কয়েক জন রোগীর বাড়িতে অল্প করে বাজার করে পাঠান উত্তর কলকাতার ওষুধ বিক্রেতা সোমনাথ ঘোষ। এর পরেই রোগীদের থেকে ফোন আসতে শুরু করে। শুধু ধন্যবাদ জানাতেই ফোন নয়, সেই সঙ্গে অনেকেই বাজারের দাম দিতে চাইলেন। রাজিও হয়ে যান সোমনাথ। কারণ, তিনি ফ্রিতে বাজার নয়, ফ্রিতে 'বাজার করা'-র পরিষেবা দিতে চান। হাতে টাকা থাকলেও যে অনেকের পক্ষে শারীরিক কারণে এবং করোনা বিধিনিষেধের জেরে বাজার যাওয়াই সম্ভব নয়। এটা বুঝেই এই পরিষেবা। জানিয়েছেন সোমনাথ।

Advertisement

সোমনাথ বলেন, ‘‘আমাদের পরিবার ১৯৩২ সাল থেকে ওষুধ বিক্রির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আমাদের পরিবারে চিকিৎসকও রয়েছেন। আমি আইনজীবী হতে চাইলেও পরে ওষুধ ব্যবসায়ী হয়ে যাই। এখন একটি অনলাইন ওষুধ বিক্রির চেন চালাই। ফলে আমার কাছে এমন পরিষেবা দেওয়ার মতো কর্মীর অভাব নেই। আর সেই কারণেই যাঁদের পাশে দাঁড়াবার লোকের অভাব রয়েছে তাঁদের জন্য কাজ করছি।’’

করোনা আক্রান্ত নন এমন প্রবীণদের কাছেও বাজার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

বিধাননগরের বাসিন্দা করুণাময়ী চৌধুরী অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে একলাই থাকেন বিডি ব্লকে। এখন স্বামী করোনা পজিটিভ। গৃহবন্দি হওয়ার আগে পর্যাপ্ত বাজার করে রাখলেও পরে অনেক কিছু দরকার হয়। তখন ওষুধের দোকান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি যেন হাতে স্বর্গ পান। করুণাময়ী বলেন, ‘‘মেট্রো ফার্মা থেকে বরাবরই ওষুধ কিনি। বাড়িতে দিয়ে যায়। এ বারেও অর্ডার দিয়েছিলাম। পরে দোকান থেকে ফোন করে জিজ্ঞেস করা হয় আপনার বাড়িতে বাজার ইত্যাদি করে দেওয়া দরকার কি না! আমার বিনাখরচে সেই পরিষেবা দিই। তার পর থেকে ওঁরা নিয়মিত এসে বাজার দিয়ে গিয়েছেন। সুস্থ নই বলে ওঁদের ঘরেও ডাকতে পারছি না। কিন্তু কী উপকার যে হচ্ছে তা বলে বোঝাতে পারব না।’’ একই রকম অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন লেকটাউনের প্রবুদ্ধ সরকার। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পরিবারে চারজন সদস্য। সকলেই আক্রান্ত। তবে ওষুধের দোকান থেকে এমন পরিষেবা পাব ভাবতে পারিনি। আমি টাকা দিয়ে দিই। ওঁরা এসে স্যানিটাইজ করে সেই টাকা নিয়ে নেন, আর বাজারটা দরজার কাছে রেখে দেন।’’

Advertisement

এই প্রসঙ্গে সংস্থার অন্যতম কর্ণধার সোমনাথ বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ওষুধের ব্যবসায় যুক্ত থাকলেও এমন অতিমারি কখনও দেখিনি। গত কয়েক বছর ধরে একটা জিনিস বুঝেছি যে, এই সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। সেই চেষ্টা করেছি প্রথম থেকে। এটা এমন কিছু বড় কাজ নয়। তবে মানুষের উপকার করতে পারলে ভাল তো লাগেই। আর আমরা যাঁদের বাজার করে দিচ্ছি তাঁরা সকলেই আমাদের ক্রেতা। এটুকু পরিষেবা পাওয়ার অধিকার তাঁদের আছে বলেই আমি মনে করি।’’

সোমনাথ আরও জানান, করোনা সংক্রমণের প্রতিটি পর্বে মানুষের প্রয়োজন আলাদা আলাদা ছিল। একটা সময়ে সামান্য দামের ওষুধ পৌঁছতে অনেক দূরে যেতে হয়েছে। কারণ, সব জায়গায় সব ওষুধ পাওয়া যাচ্ছিল না। আবার যখন সাধারণের মধ্যে আর্থিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে তখন কখনও কম দামে, কখনও ধারেও ওষুধ বিক্রি করতে হয়েছে। এখন সেই সব সমস্যা নেই বললেই চলে। তবে এ বার সংক্রমণের হার যে হেতু বেশি তাই, মানুষের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার সাধ্য থাকলেও উপায় থাকছে না। সে কারণেই আমরা এই পরিষেবা দিচ্ছি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement