বেশ কয়েকটি কলেজের কিছু আসন এখনও ভর্তি হয়নি। প্রতীকী ছবি।
কোনও কলেজে আসন ফাঁকা থাকায় নতুন করে আবার অনলাইনে আবেদন চাওয়া হচ্ছে। কোথাও বা দীর্ঘ মেধা তালিকা। পড়ুয়ারা প্রতীক্ষায়। তাঁদের আশা, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারি পড়তে কিছু পড়ুয়া চলে গেলে তাঁরা পছন্দের সেই কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন।
এ বছর উচ্চশিক্ষা দফতর জানিয়ে দিয়েছিল, স্নাতক স্তরে অনলাইনে ভর্তির আবেদনের শেষ দিন ৫ অগস্ট। আর গোটা ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। কিন্তু বাস্তবে বেশ কয়েকটি কলেজের কিছু আসন এখনও ভর্তি হয়নি। তাই ওই সমস্ত কলেজ আবার অনলাইনে নতুন করে আবেদন নিতে শুরু করেছে। আশুতোষ কলেজে শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত আবার নতুন আবেদন নেওয়া হচ্ছে। ওই কলেজের বারসর মানস কবি এ দিন জানালেন, তাঁদের কলেজে সংস্কৃত এবং দর্শনে প্রায় কোনও পড়ুয়াই ভর্তি হননি। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা আবার নতুন আবেদন নিচ্ছেন।
উত্তর কলকাতার রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মন্টুরাম সামন্ত জানালেন, তাঁর কলেজে মোট আসন ১৬৯০টি। এখনও পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৯৩৫টি। মন্টুরামের বক্তব্য, তাই আবার অনলাইনে আবেদন নিচ্ছেন তাঁরা। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু কলেজের অধ্যক্ষ পূর্ণচন্দ্র মাইতি জানালেন, তাঁর কলেজে বিজ্ঞানের বিষয়গুলিতে ২৫ শতাংশ আসনও ভরেনি। তাঁরাও তাই নতুন করে আবেদন নিচ্ছেন।
গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, আসন ফাঁকা থাকলে উচ্চশিক্ষা দফতর একটি নির্দিষ্ট দিনের পরে আবার নতুন করে আবেদন নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশ দিচ্ছে। এ বার এখনও সেই নির্দেশ দেওয়া হয়নি। নির্দেশ ছাড়াই কলেজগুলির এ ভাবে নতুন করে ভর্তির আবেদন নেওয়াকে শিক্ষা দফতর উৎসাহ দিচ্ছে না বলেই খবর। নিউ আলিপুর কলেজের অধ্যক্ষ জয়দীপ ষড়ঙ্গী জানালেন, তাঁর কলেজে নৃতত্ত্ব, অর্থনীতি, রসায়ন এবং পদার্থবিদ্যায় বেশ কিছু আসন ফাঁকা পড়ে রয়েছে। তাঁরা ‘উইশ লিস্ট’ থেকে আসন ভরানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে, উচ্চশিক্ষা দফতর আবার নতুন আবেদন নেওয়ার নির্দেশ দিলে ভাল হয়। সংরক্ষিত আসন পূরণ না হওয়াটাও আসন ফাঁকা থাকার অন্যতম কারণ বলে জানালেন অধ্যক্ষেরা।
এ দিকে, লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের অধ্যক্ষা শিউলি সরকার জানালেন, তাঁর কলেজে শুধু ফারসিতে আসন ফাঁকা আছে। এ ছাড়া, প্রতিটি বিষয়েরই মেধা তালিকা দীর্ঘ। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ইংরেজি অনার্সে আবেদন করেছে পাঁচ হাজার ছাত্রী। মেধা তালিকার ৯১ পর্যন্ত ভর্তি নেওয়া গিয়েছে।’’
এ বছর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া কিছু দিন হল শুরু হয়েছে। তবে জয়েন্ট এন্ট্রান্স মেন এবং ডাক্তারি পড়ার কাউন্সেলিং শুরু হয়নি। শিক্ষা মহলের একাংশের ধারণা, যে সব পড়ুয়া ডিগ্রি কলেজগুলিতে ভর্তির আবেদন করেছেন, তাঁদের অনেকেই এই তিন কাউন্সেলিংয়ের পরে ডাক্তারি অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চলে যাবেন। তখন আসন ফাঁকা হলে মেধা তালিকায় থাকা পরবর্তী ছাত্রছাত্রীরা তাঁদের পছন্দের কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। শিউলি জানালেন, যাঁরা তাঁর কলেজে ইতিমধ্যে ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের মঙ্গলবার কলেজে ডাকা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কত জনের বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তা-ও বোঝার চেষ্টা করা হবে।
মৌলানা আজাদ কলেজের অধ্যক্ষ শুভাশিস দত্ত জানালেন, ওই কলেজেও মেধা তালিকা প্রায় অনড় হয়ে রয়েছে। এই তিনটি কাউন্সেলিং শেষ না হলে বোঝা যাচ্ছে না, কত জন পড়ুয়া থাকবেন, আর পরবর্তী কালে নতুন কত জন সুযোগ পাবেন।
শিক্ষা মহলের একাংশের বক্তব্য, ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডিগ্রি কলেজ-সহ স্নাতক স্তরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি প্রক্রিয়া একযোগে না হলে এই জট কোনও দিনও কাটবে না। এর সঙ্গেই প্রয়োজন কেন্দ্রীয় ভাবে ভর্তির ব্যবস্থা করা।