সোমবার বাতাসের মান ‘মাঝারি’ থাকার পরে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার, টানা তিন দিন তা ‘খারাপ’ থাকে।
খারাপ বাতাসের মানে ‘হ্যাটট্রিক’ করল কলকাতা।
ঠিক কালীপুজোর পর থেকে বাতাসের মানের যে অবনমন শুরু হয়েছিল, তা অব্যাহত থাকল বৃহস্পতিবারও। এর জেরে কালীপুজোর পর থেকে টানা তিন দিন দূষণের নিরিখে ‘খারাপ’ থাকল কলকাতার বাতাস। যা দেখে পরিবেশকর্মীদের একটি অংশের আশঙ্কা, শীত এখনও পড়েনি। এখনই যদি এমন অবস্থা হয়, তা হলে গোটা শীতের মরসুম তো পড়েই রয়েছে। কারণ, ঠান্ডার মরসুমে এমনিতেই দূষণের লেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী থাকে।
কালীপুজো, দীপাবলির বাজি পোড়ানোয় বাতাসের মানের উপরে যে প্রভাব পড়েছে, তা তথ্য দেখলেই বোঝা যাবে বলে জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী কালীপুজোর আগের পাঁচ দিন যদি দেখা যায়, তা হলে বাতাসের মান দু’দিন ‘মাঝারি’, দু’দিন ‘সন্তোষজনক’ ও এক দিন ‘ভাল’ ছিল। কিন্তু গত রবিবার, কালীপুজোর পর থেকেই ‘ভাল’, ‘সন্তোষজনক’-এর লেখচিত্রে পরিবর্তন আসে। সোমবার বাতাসের মান ‘মাঝারি’ থাকার পরে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার, টানা তিন দিন তা ‘খারাপ’ থাকে।
এখন বায়ুসূচক ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে ভাল, ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে থাকলে তা সন্তোষজনক, ১০১ থেকে ২০০-এর মধ্যে থাকলে মাঝারি, ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকলে খারাপ, ৩০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকলে খুব খারাপ, ৪০১ থেকে ৫০০ হল মারাত্মক খারাপ। সেখানে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, গত মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার, এই তিন দিন কলকাতার বায়ুসূচক যথাক্রমে ২১৯, ২০৫ ও ২৪৪, অর্থাৎ খারাপ। এই বাতাস ধারাবাহিক ভাবে থাকলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানির মতো রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের।
শেষ আট দিনে বাতাসের মান
২৪ অক্টোবর সন্তোষজনক
২৫ অক্টোবর ভাল
২৬ অক্টোবর সন্তোষজনক
২৭ অক্টোবর মাঝারি
২৮ অক্টোবর মাঝারি
২৯ অক্টোবর খারাপ
৩০ অক্টোবর খারাপ
৩১ অক্টোবর খারাপ
ঘটনাচক্রে দেখা যাচ্ছে, কলকাতার বাতাস চেন্নাই ও মুম্বইয়ের থেকেও খারাপ। কারণ, কালীপুজোর আগে ও পরে ওই দুই শহরের বাতাসের মান ‘সন্তোষজনক’ থেকে ‘মাঝারি’-র মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। তবে দূষণের নিরিখে কলকাতার থেকে এখনও পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে দিল্লি। যেখানে বাতাসের মানের হিসেব গত ১১ দিনের মধ্যে পাঁচ দিনই ‘খারাপ’, চার দিন ‘খুব খারাপ’ ও গত দু’দিন ‘মারাত্মক’।
সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের (সিএসই) এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি) অনুমিতা রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এমনিতেই কলকাতার বাতাসের মান আগের তুলনায় খারাপ হয়েছে। সমীক্ষা তেমনটাই বলছে। তার উপরে কালীপুজো, দীপাবলিতে বাজি পোড়ানোর ফলে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ অনেকটা বেড়ে যায়। ফলে দূষণও বাড়তে থাকে।’’ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, অন্যান্য দিন বেলায় তবু বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (পিএম-১০) পরিমাণ সহনশীল মাত্রার মধ্যে থাকলেও বৃহস্পতিবার দুপুরেই তা সহনশীল মাত্রা পেরিয়েছিল। এ দিন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পিএম ১০-এর পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ২১৫.৫ মাইক্রোগ্রাম। পরিবেশকর্মী অজয় মিত্তল বলছেন, ‘‘অনেকেরই এখন নাক বন্ধ হচ্ছে, মাথা ভার হয়ে যাচ্ছে। শ্বাসকষ্ট বা গলার সমস্যা তো রয়েছেই। দূষণ স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার উপরেই প্রভাব ফেলছে।’’