— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কলকাতা থেকে সুদূর অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন। আর সেই উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে শহরে একাধিক মিছিল ও শোভাযাত্রা। সব কিছুর মিলিত প্রভাব দেখা গেল বেশ কিছু স্কুলে। কিছু স্কুলে কার্যত ছুটির ঘণ্টা বাজল, কোথাও বা স্কুল খোলা থাকলেও পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য হারে কম। হাতে গোনা কিছু স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছিল মোটের উপরে স্বাভাবিক।
অভিভাবকদের একাংশের বক্তব্য, রাস্তাঘাটে গোলমাল এবং যানজটের আশঙ্কাতেই তাঁরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাননি। স্কুল থেকে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে আবার এক অভিভাবক বললেন, ‘‘এক দিকে রামভক্তদের শোভাযাত্রা ও বাইকের দাপাদাপি। অন্য দিকে, সংহতি মিছিল। দুইয়ের জাঁতাকলে পড়ে আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রয়েছি হাজরা মোড়ে!’’
বিকেলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি মিছিল ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। সেই সময়ে স্কুল থেকে ফিরছিল দশম শ্রেণির দুই পড়ুয়া। তাদের নিতে এসেছিলেন অভিভাবকেরা। সেই অভিভাবকদের এক জন বললেন, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নম্বর গেটের সামনে বিক্ষোভ হবে, সেই আশঙ্কা ছিল। সেটাই সত্যি হল। তিন নম্বর গেটের সামনে বিক্ষোভের মধ্যে পড়েছিল ওরা দু’জনে।’’ হাজরা মোড়ে অটোর লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল খালসা ইংলিশ হাইস্কুলের কয়েক জন ছাত্রী। তারা জানাল, আধ ঘণ্টা ধরে বেহালার অটোর জন্য অপেক্ষা করে আছে। কিন্তু, অটোর দেখা নেই।
মিত্র ইনস্টিটিউশন, ভবানীপুর শাখার প্রধান শিক্ষক রাজা দে বললেন, ‘‘আমাদের স্কুলে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া-সংখ্যা ৮০০-র কাছাকাছি। এ দিন পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১৭০ জন এবং নবম-দশমের মাত্র ৭৮ জন পড়ুয়া এসেছিল। মিড-ডে মিল বেশি হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় গরিব মানুষদের তা বিতরণ করে দিতে হয়েছে। শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই একটা পঠনপাঠনের দিন প্রায় নষ্টই হল বলা চলে।’’ বেলতলা গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অজন্তা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কয়েকটি ক্লাসে ছাত্রী ছিল বেশ কম। কিছু ক্লাসের একাধিক সেকশন একত্র করে ক্লাস নেওয়া হয়েছে।’’
বেসরকারি স্কুলগুলির মধ্যে সাউথ পয়েন্ট, দিল্লি পাবলিক স্কুল রুবি পার্ক-সহ কিছু স্কুল আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, এ দিন ছুটি থাকবে। ডিপিএস রুবি পার্কের এক পড়ুয়ার অভিভাবক বলেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ ছুটির কারণ হিসেবে সরাসরি রামমন্দির উদ্বোধনের কথা বলেননি ঠিকই, কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে, এ দিন কেন ছুটি ছিল। আমাদের প্রশ্ন, সরাসরি কারণ জানাতে অসুবিধা কোথায়? সব ঘটনার কোপ কি শেষ পর্যন্ত পড়বে স্কুলের পড়ুয়াদের উপরেই?’’
পার্ক সার্কাস এলাকার স্কুল ডন বস্কো, মহাদেবী বিড়লাও আগেই এ দিন ছুটি ঘোষণা করেছিল। যদিও ছুটির কারণ হিসেবে রামমন্দির উদ্বোধন কিংবা শহরের কোনও মিছিলের কথা উল্লেখ করা হয়নি। বিকেলে পার্ক সার্কাস এলাকায় জনসভা দেখে এক অভিভাবকের মন্তব্য, ‘‘বোঝাই যাচ্ছে, রামমন্দির উদ্বোধনের উৎসবে স্কুলও শামিল হয়েছে। এত গোপনীয়তার কী আছে? তবে, স্কুল খোলা থাকলেও ছেলেকে পাঠাতাম না।’’
মুষ্টিমেয় কিছু স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছিল প্রায় স্বাভাবিক। হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘শহর অন্য কাজের দিনের মতো স্বাভাবিক না থাকলেও স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতি মোটামুটি ঠিক ছিল। সাধারণত, এমন দিনে অভিভাবকেরা সন্তানদের পাঠাতে দ্বিধা বোধ করেন। কিন্তু আমরা বলেছিলাম, পুরো ক্লাস হবে। পড়ুয়ারা যে এতে আস্থা রেখেছে, তাতেই আমরা খুশি।’’