কলকাতার পথে বামেদের প্রতিবাদ মিছিল। — নিজস্ব চিত্র।
সন্দেশখালির আঁচ এসে পড়ল কলকাতাতেও। মঙ্গলবার শহরের পথে নামল বিরোধী বিজেপি, সিপিএম থেকে নাগরিক সমাজ। ধর্মতলায় নাগরিক সমাজের মিছিলে দেখা গেল কামদুনিকাণ্ডের সেই প্রতিবাদী টুম্পা কয়াল এবং মৌসুমী কয়ালদের।
মঙ্গলবার বসিরহাটে এসপির দফতর ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ছিল বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের। এসপির দফতরের সামনেই ঠায় বসে রয়েছেন তিনি। বসিরহাটে যখন এই কাণ্ড চলছে, তখন কলকাতাতেও পথে নামল বিজেপি। মঙ্গলবার গণেশ টকিজ় মোড়ে মিছিল করেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা পুলিশ বাধা দিলে রাস্তাতেই বসে পড়েন তাঁরা। পরে সেখান থেকে যান মৌলালিতে। অন্য দিকে, রাজ্য দফতর মৌলালিতে মিছিল করে বামেদের যুব শাখা ডিওয়াইএফআই। হাতে মশাল নিয়ে সন্দেশখালি নিয়ে স্লোগান দেন কর্মী-সমর্থকেরা। প্রতিরোধ গড়ে তোলার দাবি তোলেন। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির অভিযোগও উঠেছে। মিছিলের জেরে সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে যানজট তৈরি হয়।
ধর্মতলা থেকে গান্ধী মূর্তি পর্যন্ত মিছিল করে নাগরিক সমাজ। সেই মিছিলে হেঁটেছেন অভিনেতা তথা বিজেপি নেতা রুদ্রনীল ঘোষ, শিল্পী সমীর আইচ, টুম্পা, মৌসুমীরা। মৌসুমী জানান, সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপর যে ভাবে ‘অত্যাচার’ হয়েছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। শাহজাহানকে গ্রেফতারির দাবিও তুলেছেন তিনি। টুম্পাও একই দাবি করেছেন। জানিয়েছেন, আসল ‘দোষী’-রা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের গ্রেফতার করা হোক।
কলকাতার পাশাপাশি সন্দেশখালির ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার জেলায় জেলায় পথে নামে সিপিএম। এই কর্মসূচি ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতের অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন জেলায়। পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার অভিযোগ তুলেছেন প্রতিবাদীরা। পাল্টা পুলিশকে ইট ছোড়া অভিযোগ উঠেছে প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে। কোথাও কোথাও বামেদের সঙ্গে রয়েছে কংগ্রেস। মেদিনীপুরে ‘আইন অমান্য’ কর্মসূচি চলছে বামেদের। বারুইপুরে এই কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির অভিযোগ উঠেছে। বাম বিক্ষোভে উত্তাল বহরমপুরও। টেক্সটাইল মোড়ে জ্বালানো হয়েছে টায়ার। পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার অভিযোগ করেছেন প্রতিবাদীরা। আসানসোলে বাম এবং কংগ্রেস শ্রমিক সংগঠন যৌথ ভাবে পথে নেমে প্রতিবাদ করে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সিপিএম নেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। প্রতিবাদের আঁচ পড়েছে বাঁকুড়াতেও।
গত বুধবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বসিরহাট পুলিশ জেলার অন্তর্গত সন্দেশখালি। তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ, শিবু হাজরা এবং উত্তম সর্দারের গ্রেফতারের দাবিতে পথে নামেন গ্রামবাসীদের একাংশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। বন্ধ করা হয় ইন্টারনেট পরিষেবা। মঙ্গলবার ১৪৪ ধারা জারির নির্দেশ খারিজ করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। প্রশাসনের নির্দেশে সেখানে ইন্টারনেট পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে।
গত ৫ জানুয়ারি ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছিল সন্দেশখালিতে। তৃণমূল নেতা শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনার পর থেকে পলাতক শাহজাহান। সম্প্রতি আবার উত্তপ্ত হয়েছে সন্দেশখালি। অশান্তির ঘটনায় পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করে। তাঁদের এক জন তৃণমূলের উত্তম সর্দার। সন্দেশখালিকাণ্ডে নাম জড়ানোর পরেই উত্তমকে সাসপেন্ড করে শাসকদল। এর পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়াও গ্রেফতার করা হয়েছে বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহ ও সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দার। বিকাশ এবং উত্তমকে সোমবার জামিন দেওয়ার পর আবার গ্রেফতার করা হয়।