Kolkatar Karcha

satyajit ray: গুপী-বাঘার নতুন ভুবন

‘পূর্ণিমা পিকচার্স’ নিবেদিত এ ছবির মুক্তির (১৯৬৯) পঞ্চাশ বছর পেরিয়েও আজও তার গুণমুগ্ধ বাঙালি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২১ ০৯:৩৪
Share:

তাঁর বয়ঃসন্ধির শুরুতে খানিকটা অভিমান করেই সন্দীপ রায় বলেছিলেন সত্যজিতের ছবি প্রসঙ্গে, বাবা শুধু বড়দের জন্যেই বিষণ্ণ সব ছবি বানায়। ছেলের অভিমান মোছাতে ছোটদের জন্য রূপকথার ছন্দে এমন এক আশ্চর্য পৃথিবী তুলে এনেছিলেন সত্যজিৎ গুপী গাইন বাঘা বাইন ছবিতে, যেখানে গুপী-বাঘার গান-বাদ্যের তালে খেয়াল-খুশি-অসম্ভবের নেশায় মেতে উঠেছিল নিসর্গ থেকে মানুষ। শিল্প আর বিনোদনের এমন আত্মীয়তা এর আগে চ্যাপলিনের ছবি ছাড়া আর কোথাও দেখা গেছে কি?

Advertisement

‘পূর্ণিমা পিকচার্স’ নিবেদিত এ ছবির মুক্তির (১৯৬৯) পঞ্চাশ বছর পেরিয়েও আজও তার গুণমুগ্ধ বাঙালি। আর এই ছবির চমৎকারিত্ব নির্মাণের সব উপকরণ, প্রস্তুতির সরঞ্জাম সঞ্চিত সত্যজিতের খেরোর খাতায়, সন্দীপ রায়ের হেফাজতে। ‘গুগাবাবা’-র খেরোর খাতা দু’টি, একটিতে ছবির যাবতীয় খুঁটিনাটি, অন্যটিতে ভূতের নাচের অংশটুকু। সত্যজিৎ-জন্মশতবর্ষে জবর খবর, সেই সমস্ত কিছু নিয়েই প্রকাশ পাচ্ছে একটি ওয়েবসাইট— এক্সপ্লোর রে ডট ওআরজি, সঙ্গে ‘ফিল্ম বুক’ জিজিবিবি/ মাইন্ড অব আ জিনিয়াস/ রে অ্যান্ড হিজ় খেরোর খাতা। উদ্যোক্তা ‘দ্য চ্যাটার্জি গ্রুপ (টিসিজি)’, তাদের ‘সেন্টার্স ফর রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন ইন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’-র তত্ত্বাবধানে নতুন প্রকল্প ‘সেন্টার ফর নিউ মিডিয়া’-র প্রথম কাজই এটি। অয়নাংশু বন্দ্যোপাধ্যায় ও অনুব্রত চক্রবর্তী, দায়িত্বপ্রাপ্ত টেকনোলজিদুরস্ত ও সংস্কৃতিমনস্ক দুই তরুণের মধ্যে অয়নাংশু জানালেন, “সত্যজিতের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য তো বটেই, তাঁর গুগাবাবা নিয়ে এই যাত্রার ভিতর দিয়ে ডিজিটাল এন্টারটেনমেন্টের নতুন ভাষা খুঁজলাম আমরা। ‘গুগাবাবা’-র এই বিপুল সম্ভার আগে এ ভাবে কখনও প্রকাশ্যে আসেনি। সবার জন্য দরজা খুলে যাচ্ছে, প্রত্যেকে তাঁদের ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, মোবাইলে গুগাবাবা-কে নতুন করে আবিষ্কার করতে পারবেন।” অনুব্রতর মতে, “একটি উপাদান দেখতে দেখতে অনায়াসে অন্য উপাদানে যাওয়া যাবে... উপেন্দ্রকিশোরের কাহিনি থেকে সত্যজিতের চিত্রনাট্য, স্টোরি বোর্ড, মিউজ়িক নোটেশন, কস্টিউম ডিজ়াইন, চরিত্র আর সেটের স্কেচ, পোস্টার, লবি কার্ড, ফিল্ম স্টিল, বুকলেট... সব কিছুতেই।”

শিকাগো থেকে খেয়াল করিয়ে দেন এ প্রকল্পের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজ়ার, মৃণাল সেনের পুত্র কুণাল সেন— এ কিন্তু বই নয়, ওয়েবসাইট, তাই “মূল্যবান সংযোজনে ক্রমাগত ঋদ্ধ করা যেতেই পারে তাকে। প্রকল্পের অধিকর্তা, বিশিষ্ট পদার্থবিদ সব্যসাচী ভট্টাচার্যের আহ্বানে এই অভিনব ভাবনার কাঠামো তৈরির কাজে যোগ দিয়েছি, আনন্দও পেয়েছি। আরও আনন্দ সন্দীপের সঙ্গে কাজ করার, ওর সঙ্গে আগে কখনও কাজ করিনি তো, আমরা একই স্কুলে পড়েছি ছোট থেকে।” আনন্দ সন্দীপ রায়েরও, “খেরোর খাতা নিয়ে এমন কাজ আগে কেউ করেননি, বাবার শতবর্ষে তা হচ্ছে, আর সকলে তাতে যুক্ত হতে পারছেন, এ তো আনন্দের কথা।”

Advertisement

স্বমহিমায়

সলিল চৌধুরীর ‘স্যাটেলাইট’ বলা হত অনল চট্টোপাধ্যায়-প্রবীর মজুমদার-অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রয়ীকে। প্রথম দু’জন সুরলোকে, তৃতীয় জন স্বমহিমায় আজও। অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (ছবিতে) নামের সঙ্গে জড়িয়ে বহু আধুনিক বাংলা গানের সুরকাব্য; সনৎ সিংহের আবেগী রথের মেলা বসেছে, হেমন্তের ছকভাঙা এমন একটা ঝড় উঠুক বা সতীনাথের তুমি মেঘলা দিনের নীল আকাশের স্বপ্ন-কে রসঘন করেছেন তিনি, মানবেন্দ্র-কণ্ঠের ওজন বুঝে গড়েছেন যদি আমাকে দেখো তুমি উদাসী। ফিল্মের গানে আশা ভোঁসলে আর মান্না দে ছিলেন ওঁর তুরুপের তাস। আজকের শিল্পীরাও গাইছেন ওঁর গান। রবীন্দ্রনাথ তাঁর আশ্রয়, বিশ্বাস বামপন্থায়। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পরেও থামেনি সুরশিক্ষার্থীদের এগিয়ে দেওয়ার সতত প্রয়াস। আজ, ২৪ জুলাই, নব্বই পূর্ণ করলেন বর্ষীয়ান সুরকার।

সহায়

শিল্পকলা ও আইনের যোগাযোগ নিয়ে সাতটি আন্তর্জাল-আলোচনার আয়োজন করেছে কৃ ফাউন্ডেশন, শ্রুতি পারফর্মিং ট্রুপ ও আর্টস ফরওয়ার্ড। গত ৩ জুলাই ছিল শিল্প এবং ক্ষমতার অপব্যবহার, হেনস্থার প্রসঙ্গ। নৈকট্য, ভঙ্গিমার অজুহাতে নাচের মঞ্চে যৌন অপরাধ ঘটে চলে। নৃত্যশিল্পীদের অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের ছাতা থাকে না, তবু সুরক্ষার আইনি সুযোগ কম নয়, জানালেন ওয়েস্ট বেঙ্গল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস, কলকাতা-র উপাচার্য নির্মলকান্তি চক্রবর্তী। কেন ‘মি টু’ নিয়ে বলতে দ্বিধায় পড়েন নিশি-ঠেকের শিল্পী, নাচনিরাও; গুরু-শিষ্য পরম্পরায় শোষণ কেনই বা সম্পৃক্ত, প্রশ্ন উঠল। স্থানীয় কমিটি বা থানায় সহায়তার আবেদন, শাস্তি প্রসঙ্গেও জানা গেল জরুরি তথ্য।

লোক-অঙ্গনে

কোভিডকালে লোকশিল্পের সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ, উৎপাদন, বিপণন বা বাজার, নেই কোনওটাই। এই সময়ে অন্তত যেটুকু করা যায়— লোকশিল্প-সংস্কৃতির নানা আঙ্গিক, সঙ্কটের পাশে সম্ভাবনার দিকগুলি নিয়ে নিয়মিত চর্চা ও আলোচনা করে যাচ্ছে কলকাতার ‘আকাদেমি অব ফোকলোর’। তাদের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে আলোচনা সিরিজ়— ‘আবদুর রশীদ চৌধুরী স্মারক বক্তৃতামালা’— আজ সন্ধে ৭টায় স্বপন ঠাকুর বলবেন লোকায়ত আঙ্গিকে, ক্ষেত্রসমীক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দু-মুসলমান সাংস্কৃতিক সমন্বয় নিয়ে। আরও যা গুরুত্বপূর্ণ: আগামী ২৬-৩০ জুলাই প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পাঁচ দিনের আন্তর্জাল-আলোচনার আয়োজন করেছে আকাদেমি— লোকসংস্কৃতি-সাহিত্য-শিল্প, লোকধর্ম, প্রবাদ-ধাঁধা-লৌকিক ছড়া, লোকভাষা-সঙ্গীত-নৃত্যের বিচিত্র পরিসরগুলির সংলাপ।

মোবাইল ইস্কুল

দু’টি বাস। তাতেই বই, খাতা, রংপেন্সিল, গ্লোব! বাস ঘোরে কলকাতার বস্তি, খালপাড়, পথের ধারে— যেখানে শিক্ষার আলো পৌঁছয় না শিশুদের কাছে। ২০১১ সালে ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর উদ্যোগে শুরু হয়েছিল এই মোবাইল লার্নিং সেন্টার— ভ্রাম্যমাণ শিশু শিক্ষাকেন্দ্র। লক্ষ্য, পিছিয়ে পড়া শিশুদের ইস্কুলমুখো করা। প্রাথমিক ভাবে কলকাতা পুরসভা পরিচালিত স্কুলগুলির সঙ্গে কাজ শুরু করলেও, এখন সর্বশিক্ষা মিশন ও কলকাতা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ পরিচালিত অনেকগুলি স্কুলের সঙ্গে চলছে কাজ। অতিমারিকালে শিশুরা স্কুলে না যেতে পারলে স্কুলই আসুক তাদের কাছে, চলুক লেখাপড়া, সেই উদ্যোগে শামিল বহু শিক্ষক, বিশিষ্টজনও।

স্মরণ-সন্ধ্যা

অতিমারির মাঝেই গত বছর অনুষ্ঠান হয়েছিল আন্তর্জালে, এ বারেও তাই। গতকাল, ২৩ জুলাই, পেরিয়ে গেল আরও একটি ‘ভাস্কর চক্রবর্তী স্মরণ-সন্ধ্যা’— ‘প্রতিবিম্ব’, ‘ভালো বই’ ও ‘ঋক প্রকাশনী’-র একত্র আয়োজনে। ২০০৫-এ কবির চলে যাওয়ার পর থেকে সূচনা, এ বছর ছিল ষোড়শ স্মরণানুষ্ঠান— ভাস্করের কবিতা ও গদ্যপাঠে সাজানো, এখনকার কবিদের স্বরচিত কবিতাপাঠেও। প্রতি বছর এই সন্ধ্যাতেই অর্পণ করা হয় কবির নামাঙ্কিত স্মৃতি পুরস্কার, এ বারে তা পেলেন রাকা দাশগুপ্ত। আর অনুষ্ঠানের বহুপ্রতীক্ষিত অংশটি— ভাস্কর চক্রবর্তী স্মৃতি স্মারক বক্তৃতা— ধরা রইল অভীক মজুমদারের বয়ানে, ‘বাস্তবতার মায়া’ শিরোনামে। ঋক প্রকাশনীর ফেসবুক পেজে হওয়া অনুষ্ঠানটি এখনও দেখা যাবে সেখানে।

সুরের ধারা

গত দুই শতকে পাথুরিয়াঘাটার যতীন্দ্রমোহন ও শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর, খেলাতচন্দ্র ঘোষ, ছাতুবাবু-লাটুবাবুদের বাড়ি, রাজেন্দ্রনাথ মল্লিকের মার্বেল প্যালেস, ওয়াজিদ আলি শাহর সভার পৃষ্ঠপোষকতায় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের চর্চা ছড়িয়ে পড়ে কলকাতা, মহিষাদল, বিষ্ণুপুর, চুঁচুড়ায়। ১৯৩৪-এ শুরু হওয়া নিখিল বঙ্গ সঙ্গীত সম্মেলনও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতকে ব্যক্তিগত বা পরিবারের পরিসর থেকে বার করে নিয়ে আসে জনতার দরবারে। লখনউ, গয়া, বারাণসী, গ্বালিয়র, আগরা, দিল্লি-সহ সারা ভারত থেকে বাংলায় আসা দিকপাল সঙ্গীতজ্ঞদের কাছে তালিম পেয়ে যদুভট্ট, ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী, হরপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, অঘোরনাথ চক্রবর্তী, রাধিকাপ্রসাদ-জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ গোস্বামী, গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর মতো বঙ্গীয় শিল্পীরা পুষ্ট করেন রাগসঙ্গীত ধারাকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব কালচারাল টেক্সটস অ্যান্ড রেকর্ডস-এর ‘আর্কাইভ অব নর্থ ইন্ডিয়ান ক্লাসিক্যাল মিউজ়িক’-এর উদ্যোগে গত ৭-৮ জুলাই আন্তর্জাল-আলোচনায় সেই ইতিহাস শোনালেন রাজেশ্বরী গঙ্গোপাধ্যায় বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রমন্থমোহন ঠাকুর। দেখা গেল দুষ্প্রাপ্য ছবি, পত্রিকা-কর্তিকাও। নীচে ছবিতে এক অভিজাত সঙ্গীত-আসর, ১৯৩৪-এ প্রহ্লাদ কর্মকারের আঁকা, দিল্লি আর্ট গ্যালারিতে সংরক্ষিত।

মনে রেখে

২০১৯-এর ডিসেম্বরে চলে গেছেন তিনি; তারও পরে, অতিমারিকালীন গত দেড় বছরে বাংলা ভাষা, সাহিত্য, মনন-পরিসরে আলো জ্বালিয়ে রাখা আরও কত জন। তাঁদের সম্মাননায় বহু পত্রিকা, সাময়িকী, বিশেষ সংখ্যাও বেরিয়েছে, কিন্তু সুরজিৎ দাশগুপ্তকে নিয়ে লেখালিখি তেমন চোখে পড়েছে কি এ শহরে? জলপাইগুড়ি থেকে প্রকাশিত সাহিত্যপত্রিকা দ্যোতনা-র (প্রধান সম্পাদক: গৌতম গুহ রায়) সাম্প্রতিকতম সংখ্যায় সুরজিৎ দাশগুপ্তকে নিয়ে ক্রোড়পত্র সেই অভাব পূরণ করল খানিক, মহানগরের ভাবনার দীনতাও কি বুঝিয়ে দিল না? কৈশোরের জলপাইগুড়ি, তারুণ্যের কলকাতা-শান্তিনিকেতন ছেড়ে শেষের দিনগুলি বাংলার বাইরে, দূরে, একাকী থাকা মানুষটির চিন্তা-চেতনায় ছেদ পড়েনি এতটুকু, সমকালীন কু-রাজনীতি, অধর্ম নিয়েও সরব ছিল কলম। ক্রোড়পত্রটি ছাড়াও স্বমহিমায় উজ্জ্বল শঙ্খ ঘোষের প্রবন্ধ শিল্প থেকে জীবন, ফিলিপ্পে মেসনার্দের নেওয়া গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের সাক্ষাৎকার। পত্রিকার বিভাগগুলি বিন্যস্ত চিত্তপ্রসাদ, কামরুল হাসান, প্রকাশ কর্মকার, নির্মল চন্দের স্কেচে।

রসজ্ঞান

মাধ্যমিকে সবাই পাশ, হাসাহাসি। ‘কোভিড ব্যাচ’ নিয়ে রসিকতার ফুলঝুরি ছুটেছে সমাজমাধ্যমে। রসবোধ থাকা ভাল— নাগরিক চেকনাইটুকু তাতে খোলতাই হয়— তবে প্রকাশের মাত্রাজ্ঞানটুকু থাকলে তবেই। নইলে রসিকতা রূঢ় আঘাত হয়ে বাজে। বরং, ‘পাশ করা সব ছেলেমেয়ে এগারো ক্লাসে ভর্তি হতে পারবে তো?’ ‘বাজারে আনাজ নিয়ে, বা লুকিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হবে না তো?’ প্রশ্নগুলো করলে কাজ দিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement