বৈঠকে ‘মধ্যমণি’ লকেট চট্টোপাধ্য়ায়। নিজস্ব চিত্র।
গত শনিবারের চিন্তন বৈঠকে দলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। ভোটে শোচনীয় পরাজয় নিয়ে ওই বৈঠকে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘কোটা’র ভিত্তিতে প্রার্থী চয়ন করেই এই পরাজয় হয়েছে। তার দু’দিনের মধ্যেই বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতাদের সঙ্গে একই সোফায় দেখা গেল লকেটকে। যা নিয়ে রাজ্য বিজেপি-র অন্দরে নয়া অন্তর্দ্বন্দ্বের আভাস পাচ্ছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
সোমবার রাজ্য বিজেপি-র দুই সাময়িক বরখাস্ত তথা বেসুরো নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার এবং রীতেশ তিওয়ারির সঙ্গে লকেটের আলোচনার ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন এবার রাজ্য সম্পাদকের পদ থেকে অপসারিত সায়ন্তন বসু। ছিলেন রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সমীরণ পাল। অর্থাৎ, এই মুহূর্তে যে বিজেপি নেতারা ‘বেসুরো’, তাঁদের সবাইকে দেখা গিয়েছে একই ফ্রেমে।
এর আগে উত্তরাখণ্ডে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন লকেট। কয়েক দিন আগেই রাজ্যে ফিরেছেন। তার পরই রাজ্য বিজেপির চিন্তন বৈঠকে দলের আত্মসমীক্ষায় জোর দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন তিনি। এ নিয়ে টুইটও করেন। লকেটকে পাল্টা জবাব দেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আর তার পরেই বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতাদের নিয়ে লকেটের এই বৈঠক নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।
এই বৈঠক প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনকে লকেট জানান, একটি অনুষ্ঠানে সবার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। সেখানে কী রাজনীতির আলোচনা হল? তাঁর জবাব, ‘‘রাজনীতিকরা বসে তো ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করব না। রাজনীতির কথাই হল।’’ সূত্রের খবর, গত শনিবারের বৈঠকে লকেটের সরব হওয়া নিয়ে খুশি জয়প্রকাশরা। তাঁদের সবার কথা তুলে ধরার জন্য লকেটের প্রশংসা করেন এই বিক্ষুব্ধ নেতারা। এও জানা যাচ্ছে, লকেট তাঁদের জানিয়েছেন, তাঁরা দলের বাইরে থেকে লড়াই করুন। তিনি অন্দরে থেকে লড়াই জারি রাখবেন।
রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন এটা কোনও বৈঠক নয়। কলকাতায় একটি নিমন্ত্রণবাড়িতে তাঁরা অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন। সেখানে কিছুক্ষণ সবাই কথাবার্তা বলেন। আবার সায়ন্তন বসু জানান, এক পরিচিতের গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠানে তাঁরা নিউটাউনে গিয়েছিলেন। সেখানে সবার সঙ্গে দেখা হয়। আড্ডা হয় কিছুক্ষণ। কিন্তু কাকতালীয় ভাবে সমস্ত বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতারাই কেন আমন্ত্রিত সেখানে, এই প্রশ্নও উঠছে।
কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা শান্তনু ঠাকুরকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধদের একটি ‘জোট’ তৈরি হচ্ছিল। এবার লকেটকে নিয়ে কি বিদ্রোহী নেতাদের নয়া ‘জোট’ তৈরি হচ্ছে, উঠছে সেই প্রশ্ন।