জল্পনা বলছে, শেষপর্যন্ত মন্ত্রিসভায় দফতর রদবদল হলে একাধিক মন্ত্রীর দফতর বদলের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী বছরের শুরুতেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা। মন্ত্রীদের দফতর রদবদল হলে তাতে সেই ভোটের প্রস্তুতির আভাসও থাকবে বলে জানাচ্ছেন রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের শেষে কি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মন্ত্রিসভায় রদবদল করতে চলেছেন? এমনই জল্পনা ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্যের প্রশাসনিক মহলে। সূত্রের খবর, রাজ্যের বেশ কয়েকজন বর্ষীয়ান মন্ত্রীকে গুরুত্বপূর্ণ দফতর দেওয়া হতে পারে। যে মন্ত্রীদের নাম নিয়ে জল্পনা চলছে, তাঁরা ২০১১ সালের প্রথম থেকেই মমতার মন্ত্রিসভায় ছিলেন। তৃতীয়বার তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর তাঁদের অনেকে তুলনায় ‘কম গুরুত্বপূর্ণ’ দফতরের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তবে পুরো বিষয়টি এখনও জল্পনার স্তরেই রয়েছে। মন্ত্রিসভায় রদবদল হবে কি না, তা সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করছে মুখ্যমন্ত্রীর উপর। তিনি যদি তেমন মনে করেন, তা হলেই সেই সিদ্ধান্ত নেবেন। ফলে জল্পনা চললেও প্রশাসনিক কর্তারা এখনই জোর দিয়ে কিছু বলতে নারাজ। প্রসঙ্গত, সোমবার থেকেই রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে।
ওই জল্পনা শুরু হয়েছে কয়েকজন প্রবীণ এবং বর্ষীয়ান মন্ত্রীর নিজেদের দফতরে ‘অতি তৎপরতা’-র কারণে। প্রশাসনিক আধিকারিকদের বক্তব্য, দফতর বদল হতে পারে, এমন ইঙ্গিত পেয়েই ওই মন্ত্রীরা দ্রুত দফতরের কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত নভেম্বর মাসে বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন ছোট আকারে মন্ত্রীদের দফতর বদল করেছিলেন মমতা। তার আগে ৪ নভেম্বর প্রয়াত হন প্রবীণ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর হাতে থাকা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী পুলক রায়কে। শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্নাকে ওই দফতরের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল। সঙ্গে ওই দফতরের প্রতিমন্ত্রী শিউলি সাহাকেও রেখে দেওয়া হয়েছিল। আবার ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁর দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াকে। ওই দফতরের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে বন প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদাকে। মানিকতলার বিধায়ক সাধন অসুস্থ থাকায় তাঁকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর প্রয়াণে মন্ত্রিসভায় একটি দফতর ফাঁকা হয়েছে। সেই দফতরে মুখ্যমন্ত্রী নতুন কোনও মন্ত্রী নেবেন কি না বা পুরোন কোনও মন্ত্রীর দফতর বদল করবেন কি না, জল্পনা তা নিয়েই।
জল্পনা বলছে, শেষপর্যন্ত মন্ত্রিসভায় দফতর রদবদল হলে একাধিক মন্ত্রীর দফতর বদলের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী বছরের শুরুতেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা। মন্ত্রীদের দফতর রদবদল হলে তাতে সেই ভোটের প্রস্তুতির আভাসও থাকবে বলে জানাচ্ছেন রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা।
ঘটনাচক্রে, রাজ্যের বর্ষীয়ান মন্ত্রীরা বাজেট অধিবেশেন তাঁদের দফতর সংক্রান্ত যাবতীয় প্রশ্নের জবাব তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও বাজেট অধিবেশনে মন্ত্রীদের উত্তর দেওয়া নতুন কিছু নয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, দফতর সময়মতো জবাব তৈরি করতে না-পারলেও দফতরের মন্ত্রীরা সেভাবে আমলাদের জোর করেন না। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ বলছে, গত এক সপ্তাহে রাজ্যের বেশ কয়েকজন বর্ষীয়ান মন্ত্রী তাঁদের দফতরের আধিকারিকদের ‘নির্ভুল উত্তর’ তৈরি করে দিতে জরুরি নির্দেশ দিয়েছেন। প্রবীণ মন্ত্রীদের এই ‘অতি তৎপরতা’ থেকেই প্রশাসনিক মহলে তাঁদের নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশাসনের একাংশের মতে, মন্ত্রিসভায় দফতর রদবদল হলে তাঁদের হাতে থাকা দফতর প্রসঙ্গে বেঠিক বা আলগা জবাব দিয়ে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সামনে বিপাকে পড়তে চাইছেন না।