রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২০২১ সালে পথ দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে ১৬ হাজার ৩৯৭ জনেরই মৃত্যু হয়েছে সিটবেল্ট না বাঁধার কারণে। প্রতীকী ছবি।
১১৭ দিনের ব্যবধানে আবার। টাটা সন্সের প্রাক্তন কর্তা সাইরাস মিস্ত্রির পরে হাইওয়েতে বড়সড় গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় ঋষভ পন্থ। সাইরাসের মতো প্রাণঘাতী কিছু না ঘটলেও ঋষভের আঘাত যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে খবর। বর্ষশেষের এই ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিল, হাইওয়েতে এমন দুর্ঘটনা বন্ধ হবে কী ভাবে? অনেকের আবার বক্তব্য, শীতের এই সময়ে ভোরের দিকের পরিস্থিতি গাড়িচালকদের পক্ষে কতটা বিপজ্জনক, তা ফের প্রমাণ করল ঋষভের ঘটনা।
জানা গিয়েছে, ঋষভ নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। একটি ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা গিয়েছে, অত্যন্ত দ্রুত গতিতে থাকা একটি গাড়ি সজোরে ডিভাইডারে ধাক্কা মারছে। তবে ভিডিয়োয় দেখা যাওয়া গাড়িটি ঋষভেরই কি না, তা আনন্দবাজারের পক্ষে রাত পর্যন্ত যাচাই করা সম্ভব হয়নি। গাড়িটি যদি তাঁরই হয়, তা হলে সেটির গতি অত্যন্ত বেশি ছিল বলে ধরা যায়। এখানেই আতঙ্ক বাড়াচ্ছে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের সদ্য প্রকাশিত একটি রিপোর্ট। ‘ভারতে ২০২১ সালের পথ দুর্ঘটনা’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের মোট দুর্ঘটনার ৭০ শতাংশই ঘটেছে হাইওয়েতে। যার কারণ হিসাবে সামনে এসেছে মাত্রাতিরিক্ত গতি।
সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের গত পাঁচ বছরের রিপোর্ট বলছে, ভারতে মোট ৬৩.৯ লক্ষ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে জাতীয় সড়ক ১.৩৩ লক্ষ কিলোমিটার (মাত্র ২.১ শতাংশ)। কিন্তু দেশের মোট পথ দুর্ঘটনার ৩০.৩ শতাংশই ঘটে সেখানে! ২৩.৯ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে রাজ্য সড়কে (১.৮৭ লক্ষ কিলোমিটার, মোট রাস্তার প্রায় ২.৯ শতাংশ)। বাকি ৪৫.৮ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে অন্যান্য রাস্তায়। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২০২১ সালে পথ দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে ১৬ হাজার ৩৯৭ জনেরই মৃত্যু হয়েছে সিটবেল্ট না বাঁধার কারণে। এর মধ্যে ৮ হাজার ৪৩৮ জন চালকের মৃত্যু হয়েছে, বাকি ৭ হাজার ৯৫৯ জন ছিলেন যাত্রী। একই ভাবে, হেলমেট না পরার কারণে মৃতের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৫৯৩। যাঁদের মধ্যে ৩২ হাজার ৮৭৭ জন মোটরবাইক চালক এবং ১৩ হাজার ৭১৬ জন আরোহী। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে ৪ লক্ষ ১২ হাজার ৪৩২টি পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৯৭২ জনের। আহতের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪৪৮ জন।
কিন্তু এমন দুর্ঘটনার সংখ্যা কমাতে পুলিশ-প্রশাসন কী করছে? অনেকেরই দাবি, নানা সময়ে একাধিক পরিকল্পনার কথা বলা হলেও তেমন কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। বেপরোয়া গতিতে লাগাম টানা যায়নি। জরিমানার পরিমাণ বাড়ালেও পরিস্থিতি একই রয়ে গিয়েছে বলেও অনেকের অভিযোগ। বাধ্যতামূলক করা যায়নি গাড়িতে সিটবেল্ট পরাও। গাড়ির পিছনে বসা যাত্রীদের ক্ষেত্রেও নিয়মের কড়াকড়ি করা যায়নি। মুম্বই, কর্নাটকের মতো কিছু জায়গায় হলেও কলকাতায় এখনও বুঝিয়ে কার্যোদ্ধারের পথেই হাঁটা হচ্ছে।
এ বিষয়ে লালবাজারের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ঋষভের প্রসঙ্গে দুঃখপ্রকাশ করে এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘১৯৯৪ সালের মার্চ থেকে দেশে তৈরি সব গাড়িতেই সিটবেল্ট থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়। ২০০২ সাল থেকে পিছনের আসনের যাত্রীদের সিটবেল্ট পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ‘কেন্দ্রীয় মোটর ভেহিক্লস রুল’ (সিএমভিআর) -এর ১৩৮ (৩) ধারা অনুযায়ী, সামনের আসনে বসা যাত্রী এবং অনধিক আট জনকে নিয়ে চলতে পারে, এমন গাড়ির সামনের দিকে মুখ করে বসা, পিছনের আসনের যাত্রীদের সিটবেল্ট পরে থাকা বাধ্যতামূলক। অন্যথায় এক হাজার টাকা জরিমানা করা যেতে পারে। বার বার এই আইনভঙ্গ করলে জরিমানার অঙ্কও বাড়তে পারে। কলকাতাতেও এ নিয়ে কড়াকড়ি করা হচ্ছে। নতুন বছরে আরও কড়া অবস্থান নেওয়া হবে।’’ আশ্বাস পূরণ হবে তো? উত্তর মিলবে কয়েক দিনেই।