ফাইল চিত্র।
অবসরকালীন প্রাপ্য নিয়ে জট কি আদৌ খুলবে? এই প্রশ্নই এখন তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে কলকাতা পুরসভার
অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের। পুরসভার সদর দফতরে পেনশন বিভাগের সামনে প্রতিদিনই এখন ভিড় জমছে তাঁদের। সকলেরই এক প্রশ্ন, নিয়মিত ভাবে পেনশন কবে মিলবে? শুধু পেনশনই যে অনিয়মিত, তা-ই নয়, অবসরকালীন প্রাপ্য গ্র্যাচুইটি এবং কমিউটেশনের টাকাও পাননি তাঁরা। যার ফলে মাথায় হাত পড়েছে অনেকেরই।
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত পুরসভার মোট ৮৮৪ জন কর্মী অবসর নিয়েছেন। সূত্রের খবর, অবসরের সময়ে এককালীন প্রাপ্য গ্র্যাচুইটি ও কমিউটেশন ছাড়াই কেবল মাসিক পেনশনটুকু দেওয়া হচ্ছে তাঁদের। তবে সেই টাকাও নিয়মিত মিলছে না বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার পেনশন বিভাগে আসা, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অবসরপ্রাপ্ত প্রৌঢ় বললেন, ‘‘ভেবেছিলাম, অবসরের পরে গ্র্যাচুইটি ও কমিউটেশনের মোটা টাকা পেয়ে একটা ফ্ল্যাট কিনব।
আমার পুরনো বাড়ির জরাজীর্ণ অবস্থা। যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। অল্প টাকায় একটি ফ্ল্যাট বুক-ও করেছি। কিন্তু প্রোমোটারকে পুরো টাকা দিতে না-পারায় ফ্ল্যাটে ঢুকতে পারছি না।’’ গড়িয়ার বাসিন্দা আর এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর খেদ, ‘‘আমি নিজে অসুস্থ। আমার আর স্ত্রীর মাসে পাঁচ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। ওঁর একটা জরুরি অস্ত্রোপচার করাতে হবে। গ্র্যাচুইটি ও কমিউটেশনের টাকাটা এখন খুব দরকার।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, পেনশন বিভাগে এখন প্রতিদিনই সকাল থেকে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকছেন অবসরপ্রাপ্তদের অনেকে। অবস্থা এমনই যে, ওই বিভাগের সামনে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করতে হয়েছে। বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এখানে আসা বেশির ভাগ অবসরপ্রাপ্তের একটাই প্রশ্ন: গ্র্যাচুইটি ও কমিউটেশনের টাকা কবে মিলবে এবং মাসিক পেনশন নিয়মিত কবে থেকে হবে? নিরাপত্তারক্ষীরাই তাঁদের বুঝিয়ে আশ্বস্ত করছেন।’’
সমস্যা না মেটায় পুরসভার সদর দফতরে লাগাতার বিক্ষোভও দেখাচ্ছে বিভিন্ন কর্মী সংগঠন। মঙ্গলবারও বামপন্থী কর্মী ইউনিয়নের তরফে বিক্ষোভ দেখানো হয়। সংগঠনের তরফে রতন ভট্টাচার্য আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘‘অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা অবসরকালীন প্রাপ্য টাকা থেকে বঞ্চিত। কবে তাঁরা সেই টাকা পাবেন, সে বিষয়ে কোনও আশ্বাস দিতে পারছেন না পুর কর্তৃপক্ষ। এ ভাবে চলতে থাকলে পুরসভা শীঘ্রই দেউলিয়ায় পরিণত হবে।’’
পেনশন বিভাগ সূত্রের খবর, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে অবসর নেওয়া পুরকর্মীরা এখনও পর্যন্ত ফেব্রুয়ারি ও মার্চের পেনশনের টাকা হাতে পাননি। এক আধিকারিক জানান, ওই টাকা সামনের মাসে দেওয়া হবে। অর্থাৎ, অবসরকালীন থোক টাকা হাতে তো আসেইনি, পেনশনও আসছে অনিয়মিত ভাবে। পুরসভা সূত্রের খবর, গত সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত অবসর নিয়েছেন যথাক্রমে ৭৮, ৭১, ৯৪, ১৯১, ২০০, ১২৫ এবং ১২৫ জন। চলতি এপ্রিল মাসেই আরও ৭৫ জন অবসর নেবেন।
পেনশন-জটে পুরসভার কর্মীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তিন মাস পরে অবসর নেবেন পুর শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক। তাঁর কথায়, ‘‘কর্মজীবনের শেষেই মোটা টাকা পেয়ে থাকেন সরকারি কর্মীরা। কিন্তু পুরসভার বর্তমান আর্থিক অবস্থায় আতঙ্কিত হচ্ছি এই ভেবে যে, আদৌ পেনশন চালু থাকবে তো?’’
যদিও পুরসভার অর্থ দফতরের এক শীর্ষ আধিকারিকের আশ্বাস, ‘‘করোনাকাল কাটিয়ে পুরসভা আর্থিক ভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। গত আর্থিক বছরে সম্পত্তিকর বাবদ আদায় ভাল হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি, পুরসভা আর্থিক ভাবে আর একটু সমৃদ্ধ হলেই সমস্ত অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা যাবতীয় বকেয়া টাকা পেয়ে যাবেন।’’