প্রতীকী চিত্র।
লকডাউনে ঘরবন্দি থাকাই নিয়ম। রাস্তায় নেমে শাসন করে কিংবা বুঝিয়ে সেই বার্তা দিচ্ছে পুলিশ। অথচ কড়েয়ার পুলিশ আবাসনের ছবিটা একেবারে উল্টো।
সেখানে পুলিশকর্মী কিংবা তাঁদের পরিজনেরা পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হচ্ছেন লকডাউন বিধি ভাঙতে। তিন দিন ধরে তীব্র জলসঙ্কট আবাসনে। ঘরে হাত ধোয়ার সামান্য জলটুকুও নেই। এই অবস্থায় বাসিন্দাদের সম্বল বলতে আবাসন চত্বরে আসা পুরসভার জলের গাড়ি। লকডাউন বিধি ভঙ্গ হলেও জল নিতে আবাসন চত্বরে রাখা জলাধারের সামনে তাই প্রায় গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে লাইন দিতে বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা।
লকডাউনের এমন পরিস্থিতিতে প্রবল জলকষ্টের মুখোমুখি বারোতলার দু’টি ব্লকের ওই আবাসনের ৮০টি পরিবার। বাসিন্দারা জানান, সেখানে মাটির নীচে জলস্তর এতটাই নেমে গিয়েছে যে পাম্প চালিয়েও কাজ হচ্ছে না। তার উপরে লকডাউনের সময়ে জলের লাইন ঠিক করার মিস্ত্রিও পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা পড়ার মতো পরিস্থিতি সেখানে।
কড়েয়া থানা লাগোয়া ওই পুলিশ আবাসনে প্রায় পাঁচশো বাসিন্দার বসবাস। কড়েয়া থানার পুলিশকর্মীরা ছাড়াও থাকেন শহরের বিভিন্ন থানা, ট্র্যাফিক গার্ডের কর্মী ও তাঁদের পরিজনেরা। অভিযোগ, গত মঙ্গলবার থেকেই আবাসনে জল নেই।
কলকাতা পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, পুরনো আবাসন দু’টিতে জলের পাম্প বসানো হয়েছে। কিন্তু জলস্তর অনেক নীচে নেমে যাওয়ায় জল উঠছেই না। জলসঙ্কট মেটাতে পুলিশের তরফে আবাসনের নীচে এক হাজার লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি বড় ট্যাঙ্ক বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুরসভার জলের গাড়ি রোজ সকাল, বিকেল ওই ট্যাঙ্ক ভর্তি করে দিচ্ছে। জল নিতে ওই দু`টি ট্যাঙ্কের সামনেই জড়ো হচ্ছেন পুলিশ আবাসনের বাসিন্দারা।
আবাসনের বাসিন্দা এক পুলিশকর্মীর অভিযোগ, ‘‘তিন দিন ধরে নীচে থেকে বহুতলের উপরে জল তুলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি অফিসে বেরিয়ে যাই। স্ত্রী অসুস্থ। জল তোলার কেউ নেই।’’ আর এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘বুধবার সারাদিন ডিউটি করে রাতে বাড়ি ফিরে স্নানের জন্য নীচে নেমে দু’বালতি জল নিয়ে উপরে উঠেছি।’’ অন্য এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘বাড়তি জল রাখার বড় পাত্র ঘরে নেই। ফলে বারবার জলের জন্য ওঠা-নামা করতে ভীষণ সমস্যা হচ্ছে। করোনার সংক্রমণের ভয়ে অনেকে লিফট ব্যবহারও করছেন না।’’
আবাসনের কেয়ারটেকার অভিজ্ঞান মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা কলকাতা পুরসভা ও পূর্ত দফতরকে সমস্যার কথা বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছি। আশা করছি, আবাসনে শীঘ্রই জল সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।’’