শুক্রবার সিজিও কমপ্লেক্সে যাবেন আরজি করের আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরজি কর হাসপাতালের আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধিরা শুক্রবার সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরে যাবেন। তদন্তের অগ্রগতি সম্বন্ধে খোঁজ নেবেন তাঁরা। তার পরেই কর্মবিরতি নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আদালতের নির্দেশে আরজি করের ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় গত ১০ অগস্ট এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। পরে তাঁকে তুলে দেওয়া হয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। এখনও পর্যন্ত আরজি কর-কাণ্ডে ধৃত ওই এক জনই। তাঁর পলিগ্রাফ পরীক্ষার আবেদনও করেছে সিবিআই। এই পরিস্থিতিতে তদন্ত কত দূর এগোল, জানতে চান আন্দোলনকারীরা। ঘটনার পর থেকেই আরজি করের জুনিয়র চিকিৎসক এবং চিকিৎসক পড়ুয়ারা কর্মবিরতি পালন করছেন। তাঁদের প্রতিবাদের ঢেউ রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতাল ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। দিল্লি, মুম্বই থেকে শুরু করে বহু হাসপাতালে চিকিৎসকদের সংগঠন কর্মবিরতি পালন করেছিলেন উপযুক্ত নিরাপত্তার দাবিতে। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার তদন্তের অগ্রগতি জানতে সিবিআই দফতরে যাবেন আরজি করের আন্দোলনকারীরা। তা জানার পর নিজেদের মধ্যে আরও এক দফা বৈঠক করবেন তাঁরা। সেখানেই কর্মবিরতি প্রসঙ্গে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরজি করের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করেছে। বৃহস্পতিবার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেছে। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আরজি করের ঘটনার সুবিচারের আশ্বাসও দিয়েছে আদালত। শীর্ষ আদালতের এই আশ্বাসের পর বৃহস্পতিবারই কর্মবিরতি তুলে নিয়েছে দিল্লি এমসের চিকিৎসক সংগঠন। মুম্বই-সহ আরও কয়েকটি জায়গায় কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে আরজি করের আন্দোলনকারীরা বৈঠক করে জানান, তাঁরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন। কারণ, তাঁদের মূল দাবি ঘটনার সুবিচার এবং দোষীদের শাস্তি। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সকলে গ্রেফতার না হলে সুবিচার হবে না। তাই তদন্তের খোঁজ নিতে সিবিআই দফতরে যাবেন আরজি করের প্রতিনিধিরা। শুক্রবার সে কথা জানিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ইমেলও করা হয়েছে।
আরজি কর-সহ বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতির ফলে পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসার আশায় আসা অনেক রোগীকে ফিরে যেতে হয়েছে গত ১৩ দিনে। যদিও জরুরি পরিষেবা সব হাসপাতালে চালু রাখা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের প্রধান দাবি ছিল, ঘটনার সুবিচার, দোষীদের শাস্তি এবং আরজি করের শীর্ষ আধিকারিকদের পদত্যাগ বা অপসারণ। তাঁদের দাবি মেনে সম্প্রতি অধ্যক্ষ, সুপার, সহকারী সুপার এবং পালমোনারি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল মেডিক্যালের অধ্যক্ষের পদ থেকেও সরানো হয়েছে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে। তার পরেও কর্মবিরতি তোলা হয়নি।
রাজ্য সরকারের তরফে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের কাছে বার বার কাজে ফেরার অনুরোধ করা হয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টও ওই অনুরোধ করেছে তাঁদের। এর পর বৃহস্পতিবার একই কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। এর পরেই সিবিআই দফতরে গিয়ে তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে খোঁজ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রতিবাদী চিকিৎসকেরা।